সরকারিকর্মীদের ডিএ ও পে কমিশন নিয়ে তীব্র ধন্দ বাজেটে, ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা
রাজীব কুমার অধ্যায় আপাতত ইতি। এরই মধ্যে রাজ্য বাজেটও সেরে ফেলেছে সরকার। কিন্তু সেই রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের ডিএ ও বেতন কমিশন নিয়ে নেই স্পষ্ট নির্দেশনা।
রাজীব কুমার অধ্যায় আপাতত ইতি। এরই মধ্যে রাজ্য বাজেটও সেরে ফেলেছে সরকার। কিন্তু সেই রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের ডিএ ও বেতন কমিশন নিয়ে নেই স্পষ্ট নির্দেশনা। সেটাই এখন বিরোধীদের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসকদলকে চাপে ফেলতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা। ঝড় তুলতে চাইছে প্রচারে।
প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের বেতন কমিশন ও ডিএ নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। বেতন-পেনশন খাতে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতেও নতুন হারে বেতন দেওয়া অসম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছেন উপযুক্ত সময় হলেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
তিনি এমনও জানান রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই দিয়েছে। তাহলে কেন এত চিন্তা। রাজ্য সরকার কাউকে নিরাশ করবে না। বেতন কমিশনের তরফে নবান্নে দুটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বারে বেতন বাড়ালে অতির্কিত ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর বাড়ি ভাড়া বাদ দেওয়া হলে, তা সাত হাজার কোটি টাকায় হয়ে যাবে।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানার পর রাজ্য যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং ধরনায় সামিল হয়েঠিলেন। তিনদিনের ধরনা শেষ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নৈতিক জয় বলে ব্যাখ্যা করে। এই যুদ্ধ শেষে আর কিছু না হোক পুলিশ-মহলের মন জয় করে নিতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু পুলিশ ছাড়াও আরও অনেক দফতর, অনেক সরকারি কর্মী রয়েছেন, তাঁদের মন জয় করবেন কী করে। ব্ংলার সাধারণ মানুষের মতো সরকারি কর্মীরাও এবার রাজ্য বাজেটের দিকে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাজেটে নেই বেতন কমিশন ও ডিএ নিয়ে স্পষ্ট দিশা। এই ফাঁক ধরে বিরোধীরা আন্দোলনে নামতে চলেছে। বিরোধী এই ঝড় সমালানোই এখন মমতা-সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশন রাজ্যে আসার পর কর্মচারীদের মনে আশার আলো দেখা দিয়েছিল, তাতে ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে বাড়তি বেতনের কথা জানিয়েছিল অর্থ দফতর। বেতন কমিশন জানিয়েছিল এ ব্যাপারে প্রতি সপ্তাহে একটি করে দফতরের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সমস্ত সরকারি কর্মীদের মতামত শুনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে নবান্ন।
বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সারাক্ষণ ওয়েলে নেমে স্লোগান দিয়ে গিয়েছে বিরোধী বাম-কংগ্রেসের বিধায়করা। কাগজ হাতে নিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, অসিত মিত্ররা প্রতিবাদ শুরু করেন। সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বাম বিধায়করাও সামিল হন সেই বিক্ষোভে। সুজন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, রাজ্যের বাজেটকে গুরুত্বহীন করে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে ফিক্সড-ম্যাচ চালানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন:সাইকেলে বা হেঁটেও প্রচার চালাতে পিছপা নন মমতা! কপ্টার বিতর্কে ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন দিদি ]
মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র একটি দায়সারা বাজেট পাঠ করেছেন বিধানসভায়। এই বাজেটের কোনও গুরুত্ব নেই। যে রাজ্যের মন্ত্রিসভা বৈঠক ফুটপাতে হয়, সেই রাজ্যের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, বাজেটে বেতন কমিশন নিয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। ডিএ নিয়েও স্পষ্ট করেনি সরকার। কর্মচারীদের যথাযথ মর্যাদা ও ভাতা পরিশোধের কোনও পরিকল্পনার কথা জানানো হয়নি।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমরা জানতে চাই, পুলিশ কমিশনারের বাড়ির ভিতরে কোন ধন-সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না, যার ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিচ্ছেন, যা অন্য পথেও হতে পারত। রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংকটে রেখে তিনি পুলিশকে সুরক্ষা দিতে দৌড়াচ্ছেন এটা ভালো দৃষ্টান্ত নয়।