শিয়রে বিজেপি ভূত, এখন বাম-কংগ্রেসের ‘নীতিহীন’ জোটের শরণ নিচ্ছে তৃণমূল
এক বছর আগেই বাম-কংগ্রেসের জোটকে ‘নীতিহীন’ আখ্যা দিয়েছিল তৃণমূল। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, সেই জোটকেই এখন আঁকড়ে ধরতে হচ্ছে।
কলকাতা, ২০ এপ্রিল : এক বছর আগেই বাম-কংগ্রেসের জোটকে 'নীতিহীন' আখ্যা দিয়েছিল তৃণমূল। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, সেই জোটকেই এখন আঁকড়ে ধরতে হচ্ছে। বিজেপি-কে আটকাতে তৃণমূলের কাছে দ্বিতীয় কোনও 'অপশন' নেই। তাই তৃণমূল একান্তকরণে চাইছে বাম-কংগ্রেস জোটবদ্ধ হোক এবং টিকে থাক। অন্তত আসন্ন পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে এই নীতিরই শরণ নিচ্ছেন তাবড় তৃণমূল নেতারা।
২০১৬-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোট। ভোটের রেজাল্টে অন্যরকম ফল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তৃণমূলের জয়ের পথ মসৃণ মনে হয়েছিল না ভোট-যুদ্ধের আগে। বরং বেশ কিছু আসনে বিজেপি-কে সহায় করেই বৈতরণী পেরিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। এবার পাশা উল্টে গিয়েছে। এবার বিজেপি-কে আটকাতে তৃণমূলের ভরসা সেই নীতিহীন জোট।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে রাজ্যে বিজেপির ভোট বৃদ্ধির গ্রাফ দেখে শঙ্কিত তৃণমূল। এটা ঠিকই যে এখনই তৃণমূলের ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। কেননা বিজেপি ভোট বাড়ালেও, ভোট কমেনি তৃণমূলের। বরং অপেক্ষাকৃত বেড়েছে। সেই নিরিখে বলা যেতেই পারে বিজেপি বামেদের ভোটেই ভোট-বাক্স পূরণ করেছে। তৃণমূলের ভয়, বিজেপি যদি আরও ভোট ভাঙাতে পারে, তাহলে ওরা লড়াইয়ে চলে আসবে। সেটা রাজ্যের পক্ষে সুখকর হবে না।
তৃণমূল চাইছে বাম-কংগ্রেস জোটকে টিকিয়ে রেখে বিজেপির সঙ্গে দ্বিমুখী লড়াই এড়াতে। কোচবিহার ও কাঁথির উপনির্বাচনের ফলাফল ভবিষ্যতে এ রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির দ্বিমুখী লড়াইয়ের সংকেত বার্তা এনেছে। সেই বার্তাতেই তৃণমূলের অন্দরে বাম-কংগ্রেসের জোটের পক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছেন নেতারা।
তৃণমূল মনে করছে, সিপিএম-কংগ্রেসের জোট থাকলে তৃণমূল-বিরোধী ভোটারদের সামনে আরও একটা চয়েস থাকবে। বিরোধী ভোটাররা সামান্য হলেও বিভ্রান্ত হবে। তারা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মেলাবে নাকি বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসে থাকবে। সম্প্রতি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'মানুষকে বোঝাতে হবে তাঁরা যেন বিজেপিকে ভোট না দেন। মানসবাবুও সিপিএমের কাছে যেতে বলেছেন দলীয় কর্মীদের। বিজেপির দ্রুত উত্থান নিয়ে শাসকদলের অন্দরে যে উদ্বেগ জাঁকিয়ে বসেছে, তা প্রমাণিত।
গত বছর নভেম্বরে কোচবিহার-তমলুক-মন্তেশ্বরের উপনির্বাচনে সমঝোতা এককভাবে লড়াই করেছিল বাম-কংগ্রেস। তখন তাদের যুক্তি ছিল, শুধু ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবেই সমঝোতা করেছিল তারা। কাঁথির উপনির্বাচনেও তারা আলাদা লড়েছে। যথারীতি জোর ধাক্কায় আবার বাম ও কংগ্রেস কাছাকাছি। আসন্ন পুরভোটে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই পরস্পরের হাত ধরেছে ফের। তৃণমূলও আশ্বস্ত হচ্ছে।