ডিইএলইডি নিয়ে কেন্দ্রের উপরে ক্ষুব্ধ রাজ্য, নতুন করে মামলা, ৩ তারিখের পরীক্ষায় প্রশ্ন
ডিইএলইডি পরীক্ষা নিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং-এর আচরণে ক্ষুব্ধ রাজ্য শিক্ষা দফতর। যেভাবে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর ৫০৬ ও ৫৯৭ নম্বরের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে তা ভালোভাবে গ্রহণ করছে না রাজ্য সরকার। এমনকী, ৩ ফেব্রুয়ারি এই দুই বাতিল পরীক্ষা একই দিনে নেওয়ার কথা জানিয়ে অ্যাডমিট কার্ডও বিলি করে দিয়েছে এনআইওএস। কিন্তু শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ প্রথম থেকেই এই পরীক্ষার বিরোধিতা করে আসছিল। এই কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়। কিন্তু, বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় ২৫ জানুয়ারি এই মামলায় ৩ তারিখে পরীক্ষা না করার দাবি খারিজ করে দেন। ১৫ মার্চ ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

ইতিমধ্যেই ডিইএলইডি পরীক্ষার আতঙ্কে দুই শিক্ষকের মৃত্যু হয়। ভাঙড় ও কোচবিহারের এই দুই শিক্ষকের মৃত্যতে নড়ে চড়ে বসে রাজ্য শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই এনআইওএস-কে এই নিয়ে চিঠি-ও দিয়েছে রাজ্য সরকার। এদিকে, শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ফের কলকাতা হাইকোর্টে ডিইএলইডি পরীক্ষা নিয়ে মামলার উল্লেখ করা হয়। বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্য়ায় সেই মামলা গ্রহণও করেছেন। শুক্রবার তার শুনানি। এখানে মূলত ৩ তারিখে টানা সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে প্রবীণ শিক্ষকরা পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে শুনানি হবে। মনে করা হচ্ছে এই নতুন মামলার জেরে ৩ ফেব্রুয়ারি ডিইএলইডি পরীক্ষার ভাগ্য অনেকটাই ঝুলে গেল।
জানা গিয়েছে দুই শিক্ষকের মৃত্যুর খবর রাজ্য সরকারের কানে পৌঁছনোর পর রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর থেকে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বৃহস্পতিবার শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিকাশ ভবনে উচ্চ-শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে ডিইএলইডি-কে ঘিরে এনআইওএস-এর স্বেচ্ছেচারিতা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। অতিরিক্ত শিক্ষা সচিবের সঙ্গেও বৈঠক করে প্রতিনিধি দলটি। এরপর বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পর কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলার উল্লেখ করে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।
ডিইএলইডি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ করে আসছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। কারণ এনসিটিই-র নির্দেশিকায় ৩১ মার্চের মধ্যে রাজ্যের একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষককে শিক্ষণ প্রশিক্ষণের শংসাপত্র জমা করতে হবে। না করতে পারলে চাকরি চলে যাবে বলে নির্দেশ দিয়ে রেখেছে এনসিটিই। যার জন্য ১ লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক অনলাইনে ডিইএলইডি কোর্সের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অনলাইনের এই কোর্স নিয়ে শিক্ষকদের রোজ নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্টাডি সেন্টার থেকে শুরু করে অনলাইনে কোর্সের প্রশিক্ষণের ভাষা নিয়েও শিক্ষকদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষকরা। কারণ প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকদের অধিকাংশেরই বয়স পঞ্চান্ন-র উপরে। বাতিল পরীক্ষা ৩ তারিখে টানা সাড়ে ছঘণ্টা ধরে দিতে হবে বলে জানিয়েছে এনআইওএস। এমনকী, এই পরীক্ষা ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলে নেওয়া হবে। এতে আরও চিন্তায় পড়েছেন ইংরাজি কায়দায় সরগড় না থাকা শিক্ষকরা। ১৫ মার্চের পরীক্ষারও কয়েকবার তারিখ বদল হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ৩১ মার্চের মধ্যে এনআইওএস-এর শিক্ষক প্রশিক্ষণের শংসাপত্র আদৌ দিতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজ্যের উচ্চ-শিক্ষা সচিব এই নিয়ে ২১ জানুয়ারি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং-এর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠিও করেন। তাতে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান ৩ ফেব্রুয়ারি যদি একই সঙ্গে দুটি বাতিল পেপারের পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলেএটা 'পানিশমেন্ট' বলেই বিবেচিত হবে। এক দিনে দুটো পেপারের পরীক্ষার কথা জানার পর থেকে শিক্ষকরা যে খেপে আছেন তাও এনআইওএস-এর চেয়ারম্যানকে জানান উচ্চ শিক্ষা-সচিব। ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের ৫০৬ ও ৫০৭ নম্বর পেপারের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তার আগে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া উচিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। এমনকী পরীক্ষার আগে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেন পরীক্ষা বাতিল করা হল তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন উচ্চ-শিক্ষা সচিব। প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে সমস্ত রাজ্যেই ৫০৬ ও ৫০৭ নম্বর পেপারের পরীক্ষা বাতিল হওয়া উচিত বলে এনআইওএস-কে তিনি জানিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৩ অগাস্ট মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দেওয়া নির্দেশিকাও স্মরণ করিয়েছেন এই চিঠিতে। উচ্চ-শিক্ষা সচিব জানিয়েছেন, ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী ৩১ মার্চ, ২০১৮-র মধ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের শংসাপত্র জমা করতে হবে। সুতরাং যাঁরা ডিইএলইডি-র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা যাতে ৩১ মার্চের মধ্যে শংসাপত্র জমা করতে পারেন তা নিশ্চিত করার অনুরোধও রেখেছেন উচ্চ-শিক্ষা সচিব। প্রয়োজনে যে কোনও সাহায্য করতে রাজ্য সরকার প্রস্তুত বলেও জানানো হয়েছে এই চিঠিতে।