কালো টাকায় মোদির ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, মিশ্র প্রতিক্রিয়া জনতার
কালো টাকায় মোদির ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে'র গুঁতোয় নাজেহাল দেশবাসী। অন্তত সাময়িক সঙ্কট তৈরি হয়েছে দেশজ অর্থনীতিতে। থমকে গিয়েছে বহু ক্ষেত্রের পরিষেবা।
কলকাতা, ৯ নভেম্বর : কালো টাকায় মোদির 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে'র গুঁতোয় নাজেহাল দেশবাসী। অন্তত সাময়িক সঙ্কট তৈরি হয়েছে দেশজ অর্থনীতিতে। থমকে গিয়েছে বহু ক্ষেত্রের পরিষেবা। বিরোধীরা মোদির এই ঘোষণাকে তুঘলকি সিদ্ধান্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সাধারণ মানুষও বিব্রত। কেউ সাময়িক এই অসুবিধা স্বীকার করে নিয়েছেন, কেউ সঙ্কটে পড়ে দুষেছেন মোদির হঠকারিতাকে। মিশ্র প্রতিক্রিয়াই উঠে এসেছে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। [একনজরে : ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল নিয়ে কে কী বলছেন]
সনাতন রুইদাস, ব্যবসায়ী : সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে সবারই। বাজারও মন্দা চলছে। কয়েকটা দিন অসুবিধা হবে, কিন্তু ভালোই হয়েছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বপন ভুঁইয়া, খুচরো ব্যবসায়ী : হঠকারি সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। দেশের পক্ষে ভালো হলে, তা নেওয়া জরুরি ঠিকই, কিন্তু তা বলে আগাম কোনও নোটিশ না দিয়ে রাতারাতি পরিবর্তনের কোনও মানে হয় না। এটা হঠকারি সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত হবে। [(ছবি) ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল প্রসঙ্গে কি বলছেন বলিউড সেলেবরা]
বাপ্পাদিত্য সরকার, চিকিৎসক : সাধারণ ক্রেতারা সবথেকে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন এই কঠোর সিদ্ধান্তে। এই দিকটাও বিশেষভাবে চিন্তা করার দরকার ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু এ ব্যাপারে দূরদৃষ্টতা দেখাতে পারেননি তিনি। বাজারে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সমস্ত শ্রেণির ক্রেতাই। অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। [৫০০ ও ১ হাজারের নোট বাতিল! এই সংক্রান্ত আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পান এই প্রতিবেদনে]
পারভেজ আলম, রোগীর আত্মীয় : চিকিৎসা করাতে এসে বিপাকে পড়তে হয়েছে। কোথাও ৫০০ টাকা, হাজার টাকার চেঞ্জ হচ্ছে না। ফে.আর প্রাইস শপ হোক বা সাধারণ ওষুধ দোকান কোথাও ৫০০ টাকা নিয়ে ওষুধ দিচ্ছে না। মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানি। একেবারেই ঠিক করেননি মোদি। আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল। [৫০০ ও ১ হাজারের মোট ২৩০০ কোটি নোট বদলাতে ব্যাঙ্কগুলি আদৌও সক্ষম তো?]
শ্যামল হালদার, শিক্ষক : কেন এত তাড়াহুড়ো। দেশের স্বার্থে এই সংস্কার জরুরি ঠিকই। কিন্তু সাধারণের কথাও চিন্তা করার দরকার ছিল। কালো টাকা, জাল নোট রুখতে এই পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখতেই পারে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মানুষকে যে ভাবে বিপাকে ফেললেন, তাতে মোদির এই সংস্কারমূলক কাজ ধাক্কা খাবে।
সমর ভট্টাচার্য, প্রাক্তন ফুটবলার : খামখেয়ালিপনাই বেশি প্রকট হয়েছে এই সিদ্ধান্তে। আরও ধৈর্যশীল সময়সাপেক্ষ ঘোষণা আশা করেছিলাম ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। এতদিন তো গেল। আর ক'টা দিন সময় নিলে কী এসে যেত, বুঝি না। তাহলে মানুষকে এত হয়রানি হতে হত না।
সুফল মান্ডি, কৃষক : কাঁচামাল বাজারে বিক্রি করতে এসে চরম সঙ্কটে পড়েছি। পাইকারি খদ্দেররা মাল কিনে ৫০০ টাকা, হাজার টাকা ধরাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে ফসল। এই টাকা নিয়ে গিয়েই তো আমাদের দিনগুজরান হয়। ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে কেউ খুচরো দেবে না। খাবো কী? আমাদের কথা ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী।
তুফান মিত্র, ছাত্র : পেট্রল পাম্পে তেল কিনতে গিয়েই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে অনেকের। ৫০০ টাকার নোট নিয়ে পেট্রল পাম্পে গিয়ে ২০০ টাকার তেল চেয়েছিলাম। খুরো না পেয়ে ৫০০ টাকারই তেল নিতে হল। মোদির এই সিদ্ধান্ত জরুরি ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বলতেই হবে। কিন্তু একটু সময় দিলে মানুষকে সঙ্কটে পড়তে হত না।
পারমিতা সেন, ছাত্রী : কেন রাতারাতি সংস্কারের সিদ্ধান্ত বোধগম্য হল না। ক্ষমতায় আছেন বলে হঠাকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষকে বিপাকে ফেলার কোনও মানে হয় না। হ্যাঁ, জালনোট, কালো টাকা ভারতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই সংস্কার নিয়ে মোদিজি মানুষের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো লাগত।
শোভনা তরফদার, রেলযাত্রী : ট্রেন থেকে নেমেই শুনি এই ফতোয়ার কথা। হ্যাঁ, একে ফতোয়াই বলছি। ৫০০-হাজার টাকার নোট রাতারাতি বাতিল। কী এমন হল? একদিনেই কি জালনোটে ছেয়ে গিয়েছে দেশ? কেন এত তাড়াহুড়ো? একটু সময় নিয়ে কি টাকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যেত না? দক্ষিণ ভারত থেকে ফিরছি। কাছে খুচরো টাকা নেই প্রায়। বাড়ি ফিরব কী করে। কী খাবো? এমন তো অনেকেই সমস্যায় পড়বেন। কী হবে তাঁদের? ভেবেছেন মোদি?
প্রশান্ত আগরওয়াল, মেট্রোযাত্রী : সঠিক সিদ্ধান্ত। সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। দু'দিন পরেই মিটে যাবে। এই সংস্কারের আশু প্রয়োজন ছিল। ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিটের জন্য লাইন পড়েছে, একটু দেরি হচ্ছে। কিন্তু ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা তো নেওয়া হচ্ছে কাউন্টারে। অধিকতর ভালোর জন্য একটু কষ্ট ভোগ করি না!