লালবাজার অভিযানের দিনই মোদী-মমতা বৈঠক, তাল কেটে গেল বিজেপি-র!
রাজ্যে যখনই তৃণমূল বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপি, তখনই মমতা দিল্লিতে গিয়ে ‘সখ্যতা’ করে এসেছেন। আর সব বিরোধিতায় জল ঢেলে দিয়েছেন। এবারও তার অন্যথা হল না।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে যেদিন বিজেপি লালবাজার অভিযান করছে, সেদিনই দিল্লিতে মোদী-মমতা বৈঠক। আর তা ঘিরেই রাজনৈতির আলোচনা তুঙ্গে। এই বৈঠকের ফলে রাজ্যে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মনোবল একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগেও রাজ্যে যখনই তৃণমূল বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপি, তখনই মমতা দিল্লিতে গিয়ে 'সখ্যতা' স্থাপন করে এসেছেন। আর সব বিরোধিতায় জল ঢেলে দিয়েছেন। এবারও তার অন্যথা হল না।
তাই দুই ফুলের 'আঁতাত' নিয়ে বিজেপিকে যে নিশানা এতদিন করে এসেছে বিরোধীরা, এবার সেই আশঙ্কাই ফুটে উঠেছে খোদ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মনে। বিজেপি-র একটা অংশ তো এই আশঙ্কাকেই সত্যি বলে মান্যতা দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। যতই রাজ্য সভাপতি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চান না কেন, বারবার ঝুলি থেকে তা বেরিয়ে পড়েছে, আজও বেরিয়ে পড়ছে। ক্রমেই গোপন আঁতাতের তকমাটা সাঁটিয়ে বসছে পদ্ম শিবিরেও।
সম্প্রতি রাজ্যের উপনির্বাচন ও পুরসভায় সাফল্যের পর বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছিল। সেই লড়াইয়ের সুর সপ্তমে চড়িয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতী সভাপতি অমিত শাহ। তারপর আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছিল বিজেপি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোরদার লড়াইয়ের ডাক সেই প্রস্তুতিরই অঙ্গ ছিল।
বৃহস্পতিবারের লালবাজার অভিযানে তৃণমূলকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি চেয়েছিল সিপিএমকেও মোক্ষম জবাব দিতে। শক্তি প্রদর্শন করে দেখানো যে আমরাই রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি। কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটে গেল। মমতার একটা চালেই কিস্তিমাত। বিজেপি লালবাজার অভিযান করে কর্মী সমর্থকদের মনে অক্সিজেন দেওয়ার দিনই মোদীর সাক্ষাৎপ্রার্থী হচ্ছেন মমতা। কলকাতায় যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাক্যবাণ চালাবে বিজেপি নেতৃত্ব, সেদিনই দিল্লিতে মমতা-মোদী বৈঠক হবে। এই বৈঠক নিয়ে রাজ্য বিজেপি যে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছে, তা আর লুকনো যাচ্ছে না কিছুতেই।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা এই অস্বস্তি রুখতেই বিজেপির সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে বলানো হয়েছে, কলকাতায় তাঁদের মিছিল প্রতিরোধ করলে দিল্লিতে অবরোধ করা হবে। তাঁর কারণ যে মুখ্যমন্ত্রী এখন দিল্লিতে তা বুঝতে বাকি নেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তাই দিলীপ ঘোষও আগ বাড়িয়ে বলেছেন, আমরা চাইলে তৃণমূলের সব সাংসদকে দিল্লিতে ঘেরাও করে রাখতে পারি।
তবে ভাঙলেও মচকাতে চাইছেন না বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন মোদী-মমতা বৈঠক প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ওটা কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক। ওই বৈঠকের সঙ্গে বিজেপি-র কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, আমরা তো চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি মাস দিল্লি যান, রাজ্যে উন্নয়নের জন্য কথা বলুন। সেটাই হচ্ছে। তাই দিল্লিতে বৈঠকের সঙ্গে রাজ্যের তৃণমূল বিরোধিতায় কর্মসূচির কোনও যোগসাজোশ থাকতে পারে না।