'ভিড়ের চাপে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম, শরীরের উপর দিয়ে হেঁটে গেল অসংখ্য মানুষ', বিভীষিকায় ভরা স্মৃতি
আতঙ্ক চোখে-মুখে। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিনি সামান্য একটু অসুস্থতা ছাড়া দিব্যি দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
আতঙ্ক চোখে-মুখে। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিনি সামান্য একটু অসুস্থতা ছাড়া দিব্যি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অথচ যখন তাঁর শরীরের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ভিড়ের স্রোত তখনও ভাবতে পারেননি যে তিনি বেঁচে ফিরতে পারবেন। তিনি মানে উলুবেড়িয়ার বাজার পাড়ার বাসিন্দা শেখ আক্রামূল হক।
কোনা এক্সপ্রেসওয়ে-এর কানেক্টরে বাস থেকে নেমেছিলেন আক্রামূল। সাঁতরাগাছি স্টেশনে সন্ধ্যেবেলায় ঢুকেছিলেন ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরবেন বলে। আর ঠিক সে সময়ই স্টেশনে ঢোকে একসঙ্গে চারটি ট্রেন- ৫৮০১৫ হাওড়া-আদ্রা প্যাসেঞ্জার, ২২৮৫৩ শালিমার-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস, ২২৮০৭ শালিমার-চেন্নাই এসি এক্সপ্রেস এবং ৩৮৯১৭ হাওড়া-আমতা লোকাল ট্রেন। এই চারটি ট্রেনের ঠিক কয়েক মিনিট আগে সাঁতরাগাছি স্টেশনের প্ল্য়াটফর্ম ছেড়ে গিয়েছিল ১২৬৫৯ নাগেরকোয়েল-শালিমার গুরুদেব এক্সপ্রেস, ৬৮০০৭ হাওড়া-বেলদা জলেশ্বর এমইএমইউ, ১৮০০৭ শালিমার-ভানজপুর সিমলিপাল এক্সপ্রেস, ৩৮৮২৩ হাওড়া-মেদিনীপুর ইএমইউ লেকাল। সবমিলিয়ে মিনিট কুড়ির মধ্যে সাঁতরাগাছি-তে ৮টি ট্রেন ঢোকে এবং বেরিয়ে যায়। এর ফলে আচমকাই একটা জনজোয়ারের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
(আরও পড়ুন-ছেলের জন্য টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা হল না! মুর্শিদাবাদের পথে মৃত্যু প্রৌঢ়ের)
শেখ আক্রামূল হক এক জনজোয়ারের মধ্যে পড়ে যান। প্রথমে তিনি ঠাহর করতে পারেনি মাত্র ১৫ ফুট চওড়া ফুটব্রিজে হাজার-হাজার যাত্রী উঠে পড়েছেন। শেখ আক্রামূল-এর কথায়, ভিড়ের মধ্যে ঢুকে যেতেই পিছিয়ে যাওয়ার আর কোনও উপায় ছিল না। পিছনে থাকা যাত্রীরা সমানে শরীরের উপর চাপ দিচ্ছিল এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আবার উল্টোদিক থেকেও একটা জন-প্লাবন চলে আসে। এই ভিড়েতে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ভিড়়ের চাপ সামলাতে না পারায় শেখ আক্রামূলে-র সামনের কয়েকজন মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। শেখ আক্রামূলও এই ভিড়ের চাপে সামনে পড়ে থাকাদের শরীরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।
শেখ আক্রামূল জানিয়েছেন, ফুটব্রিজের উপরে যে মানুষ পড়ে গিয়েছে তাতে অন্যদের কোনও হুঁশ নেই। একদল যাত্রী এই ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করছিল ট্রেন ধরার জন্য। আবার একদল যাত্রী স্টেশন থেকে রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। শেখ আক্রামূল আতঙ্ক ভরা চোখ-মুখ নিয়ে জানিয়েছেন, তিনি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অবস্থাতেই দেখতে পান তাঁদের শরীর মাড়িয়েই বহু যাত্রী চলে যাচ্ছেন। সামনে যে একদল মানুষ পড়ে গিয়েছে তাতে কারোর যেন হুঁশ নেই। বেঁচে থাকবেন তা একটা সময় ভাবতেই পারছিলেন শেখ আক্রামূল। পদপিষ্ট হতে হতেই শ্বাস-বন্ধ হয়ে আসছিল। দম নিতে পারছিলেন না। শেষমেশ একটা সময় তাঁকে কয়েক জন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পদপিষ্ট হয়ে গলা-র স্বরও আটকে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য। আপাতত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছেন শেখ আক্রামূল। কিন্তু, সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন এক ভয়াবহ মত্যু আতঙ্ক যা হয়তো তিনি ইচ্ছে করলেও ভুলতে পারবেন না।
(আরও পড়ুন- সাঁতরাগাছি স্টেশনে পদপিষ্ট রেলের গাফিলতিতেই! পরক্ষণেই 'ইউ-টার্ন' নিয়ে পাশে মমতা)