কলকাতার হোটেলে ভাগাড়ের মরা পশুর মাংস! বামাল ধরা পড়ল মাংস পাচারকারির দল
সপ্তাহ কয়েক আগেই মরা মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে হয়েছিল তুমুল হইচই। এর জন্য পুলিশি অভিযানও হয়। মরা মুরগির মাংস বিক্রির দায়ে এখন হাজতে রয়েছে অন্তত ৩ জন।
সপ্তাহ কয়েক আগেই মরা মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে হয়েছিল তুমুল হইচই। এর জন্য পুলিশি অভিযানও হয়। মরা মুরগির মাংস বিক্রির দায়ে এখন হাজতে রয়েছে অন্তত ৩ জন। এই পরস্থিতিতে এবার সামনে এলে ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মরা পশুর মাংস বিক্রির ছবি। জানা গিয়েছে, ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মরা পশুর মাংস সরবরাহ করা হত কলকাতার একাধিক হোটেলে।
বৃহস্পতিবার সকালে বজবজ থেকে ২ যুবককে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, এই ২ যুবক ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মরা পশুর মাংস পাচার করে দিত কলকাতার হোটেলে। বজবজের ময়লা ডিপো এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশকিছুদিন ধরেই এই ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল কয়েক জন। এদের কাজই ছিল ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মৃত পশুর মাংস কেটে ট্যাক্সি করে নিয়ে গিয়ে কলকাতার হোটেলে সাপ্লাই করা। বেশকিছুদিন ধরে এলাকা থেকে বেশকিছু পশুও নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল দেখে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল স্থানীয়দের মনে। এরা সকলেই তক্কে তক্কে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার, ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া একটি মৃত গরুকে কেটে মাংস বের করে নেয় সানি, নিমাই, রাজু মণ্ডল এবং মিলসেল শ্যামলাল। এরপর গরুর মাংস ও চামড়া তারা বস্তার মধ্যে ভরেও ফেলে। কিন্তু, ট্যাক্সির ডিকিতে মাংস ভর্তি বস্তা তোলার সময় স্থানীয়দের চোখে তা পড়ে যায়। নিমাই, সানিদের জেরা করতেই তারা অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে। এমন সময়ই সানি ও নিমাই পালিয়ে যায়। কিন্তু, ধরা পড়ে যায় রাজু মণ্ডল ও মিলসেল শ্যামলাল।
ধৃত দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয়রা জানতে পারে ভাগাড়ে পড়ে থাকা মৃত পশুর দেহ থেকে মাংস কেটে নিয়ে তা কলকাতার বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করে দেওয়া হত। মরা পশুর এই মাংস পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা সানি ও নিমাই। ধৃত রাজু মণ্ডল বজবজ পুরসভার কর্মী বলে জানা গিয়েছে। মিলসেল শ্যামলালের কাজ ছিল মরা পশুর মাংস কলকাতার হোটেলে পৌঁছে দেওয়া। এই কাজের জন্য সানি ও নিমাইরা মিলসেল শ্য়ামলের ট্যাক্সিটা ভাড়া করত।
মিলসেল শ্য়ামল জানায়, সানি ও নিমাই তাকে ফোন করে দিত। সেই মোতাবেক সে ট্য়াক্সিতে মাংস তুলে নিয়ে কলকাতায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিত। ভাগাড়ে কখন কোন মৃত পশুর দেহ ফেলা হল তা ফোনে নিমাই ও সানিকে দেওয়াটা ছিল রাজুর কাজ। মাঝেমধ্যে মাংস কাটা এবং গাড়িতে তা তুলে দেওয়ারও কাজ করতে হত রাজুকে।
উত্তেজিত জনতা বজবজ পুরসভার কর্মী রাজুকে মারধরও করে। মাংস নিয়ে যাওয়ার ট্য়াক্সিতেও ভাঙচুর চালানো হয়। পরে বজবজ থানার হাতে ধৃতদের তুলে দেওয়া হয়। সানি ও নিমাই-এর খোঁজ করছে পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে যোগ আছে । মরা পশুর মাংস খাওয়া ইসলামে নিষেধ। সুতরাং, এমন ঘটনার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষজন। বজবজ পুলিশ অবশ্য এই নিয়ে কোনও মুখ খুলতে চায়নি। কলকাতার কোন কোন হোটেলে এই মাংস সরবরাহ করা হত এবং কোনও বড় হোটেলেও এই মাংস যেত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, ধৃত ট্যাক্সি চালক শ্যামলাল জানিয়েছে যে মাংস সংগ্রহ করে সে ট্যাক্সি নিয়ে কবরডাঙায় একটি হোটেলে যেত। টালিগঞ্জ এলাকায় একদিন সানির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল শ্যামলালের। সেই সময়ই মরা পশুর মাংস ট্যাক্সিতে কলকাতায় সরবরাহ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন শ্যামলাল।