মাওবাদী অর্ণবের ইতিহাস! 'বন্দি' শিক্ষাব্রতীর বন্দুক ছেড়ে হাতে কলম তুলে নেওয়ার কাহিনি
আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে কলম ধরেছেন। শিক্ষাকে করেছেন মূল মন্ত্র। তাই জেলের অন্ধকারেও তিনি অবলীলায় শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন।
আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে কলম ধরেছেন। শিক্ষাকে করেছেন মূল মন্ত্র। তাই জেলের অন্ধকারেও তিনি অবলীলায় শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে রবিবার তিনি 'স্টেট এলিজিবিলিট টেস্ট' অর্থাৎ 'সেট'-এবসতে চলেছেন। কলকাতার এক কলেজে কলম হাতে মাওবাদী অর্ণব দাম নামছেন নতুন লড়াইয়ে।
বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি অর্ণব। সেই ২০১২ সাল থেকে তাঁর বন্দিদশায় নিজেকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলার প্রয়াস শুরু করেছিলেন। একে একে বিএ, এমএ পাস করার পর, এবার 'সেট'-এ বসতে চলেছেন রাজনীতির আঙিনায় বিক্রম বলে পরিচিত এই মাওবাদী।
শুধু নিজের পড়াশোনাই নয়, জেলের অন্ধকারে তিনি শিক্ষার আলো জ্বালাতে অন্য বন্দিদের লেখাপড়ায় ব্রতী করেছেন। অর্ণব এখন অন্য বন্দিদের মাস্টারমশাই। তিনি হয়ে উঠেছেন বন্দিদের মাস্টারদা। এখন তাঁর একটাই লক্ষ্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। মুক্তির পরও তিনি এই কাজটাই করতে চান। তার অপেক্ষাতেই এখন দিন গুনছেন।
এপিডিআর-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূর বলেন, বছরের পর বছর বন্দিবস্থাতেও শিক্ষার প্রতি অনুরাগ দেখিয়ে চলেছেন অর্ণব। শুধু নিজে শিক্ষত হওয়াই নয়, অপর বন্দিদের শিক্ষিত করার কাজ করে চলেছেন তিনি। অথচ বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্সি অন্ধকারে দিন কাটছে তাঁর। আমরা চাই, তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। যে শিক্ষা তিনি অর্জন করেছেন, তা তিনি মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিন। সেই সুযোগ তাঁকে করে দিক সরকার।
ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকস্তরে ৬৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন অর্ণব। তারপর ৬৬.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। এবার তিনি সেট-এ বসতে চলেছেন। পরবর্তী লক্ষ লেকচারার হওয়া, কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হওয়া। ৪০ ছুঁই ছুঁই অর্ণব প্রথম বন্দি হিসেবে সেট পরীক্ষায় বসতে চলেছেন। ভবিষ্যতে পিএইচডিও করতে চান তিনি। প্রস্তুতি শুরু করেছেন নেট-এরও। ১৮ ডিসেম্বর তাঁর নেট-এ বসার কথা।
২০১২ সালের জুলাই মাসে পুরুলিয়ার বিরামডি রেল স্টেশনের কাছ থেকে গ্রেফতার হন সুভাষগ্রামের অর্ণব। খড়গপুরের আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অর্ণব তখনই বাম রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরই পড়াশোনা অসমাপ্ত রয়ে যায়। সেই অসমাপ্ত কাজ তিনি সারলেন জেলে বসে। সমাজকে দিলেন চেতনা।
মোট ৩১টি মামলায় অভিযুক্ত অর্ণব। তার মধ্যে ৩০টি মামলায় তিনি ইতিমধ্যেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। শুধুমাত্র শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় এখনও তিনি জামিন পাননি। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা রুজু হয়েছিল। এই মামলাটি ফের মেদিনীপুর কোর্টে উঠবে ১৫ ডিসেম্বর। ওইদিনই তাঁর জামিন আবেদনের শুনানি হবে।