বন্দুক ছেড়ে কলম ধরেছেন মাওবাদী অর্ণব, তবু ‘আলো’ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা রাজ্যের
জেলের অন্ধকারে আলো জ্বালানোর ব্রত নিয়েছিলেন মাওবাদী অর্ণব দাম। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে একের পর এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এহেন অর্ণবের সংগ্রামে ফের নেমে এল বাধা।
জেলের অন্ধকারে আলো জ্বালানোর ব্রত নিয়েছিলেন মাওবাদী অর্ণব দাম। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে একের পর এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এহেন অর্ণবের সংগ্রামে ফের নেমে এল বাধা। অভিযোগ, রাজ্য সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্ণবের কলম হাতে লড়াইে বাধা তৈরি করল। ডিসেম্বরের প্রথমে 'সেট'-এ বসলেও, তাঁকে বসতে দেওয়া হল না নেট-এ।
অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে রাজনৈতিক বন্দি অর্নব দামকে 'নেট' পরীক্ষা দিতে দিল না রাজ্য সরকার। এপিডিআর অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে সরব হল রাজ্যের বিরুদ্ধে। এপিডিআর-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূরের দাবি, লেখাপড়ায় ধারাবাহিক সাফল্যের খবরে অর্ণবের মুক্তির জন্য জনমত তৈরি হচ্ছিল। সাধারণ মানুষ ওঁর মুক্তি চাইছিল। নেট পাশ করে গেলে সে দাবি আরো তীব্র হবে বলেই তাঁকে আটকানো হল অন্য উপায়ে।
লিখিত ভাবে অনেক আগেই আবেদন করেছিলেন অর্ণব। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্বেও, অর্ণবকে পরীক্ষা হলে নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করেনি জেল কর্তৃপক্ষ। পরে অর্নবের চাপাচাপিতে নিয়ে গেলেও যথেষ্ট দেরিতে পৌঁছানোর জন্য পরীক্ষা হলে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি অর্ণবকে। জেলের অন্ধকারে বসে হাজারো প্রতিকূলতাকে জয় করে এতটা এগিয়েও পরীক্ষা দিতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অর্ণব।
রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এর বিহিত চেয়ে রাজনৈতিক বন্দি মাওবাদী অর্ণব দাম আমরণ অনশন শুরু করেছেন জেলের ভিতরে। তাঁর দাবি, কারা মন্ত্রী ও ডিজি (কারা)-কে লিখিত দিতে হবে যে, ভবিষ্যতে তাকে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে। লেখাপড়া করতে দেওয়া হবে। এবং তারা এর দায়িত্ব নেবেন। এই দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন।
রঞ্জিতবাবু বলেন, সরকার ও কারা বিভাগের এই আচরণকে এপিডিআরের তরফে তীব্র নিন্দা করছি। অবিলম্বে আলোচনায় বসে অর্নব দামের দাবিদাওয়ার সুমিমাংসা করার দাবি জানাচ্ছি। দীপক কুমার নামের আরেকজন রাজনৈতিক বন্দিকেও এ বছর নেটের ফর্ম পূরণ করতে না দিয়ে বঞ্চিত করেছে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। আমরা তারও বিচার চাইছি।
উল্লখ্য, বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি অর্ণব। সেই ২০১২ সাল থেকে তাঁর বন্দিদশায় নিজেকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলার প্রয়াস চলছে। একে একে বিএ, এমএ পাস করার পর, এবার 'সেট'-এ বসেছেন রাজনীতির আঙিনায় বিক্রম বলে পরিচিত এই মাওবাদী। বসার কথা ছিল নেট-এও। শুধু নিজের পড়াশোনাই নয়, জেলের অন্ধকারে তিনি শিক্ষার আলো জ্বালাতে অন্য বন্দিদের লেখাপড়ায় ব্রতী করেছেন। অর্ণব এখন অন্য বন্দিদের মাস্টারমশাই। তিনি হয়ে উঠেছেন মাস্টারদা। এখন তাঁর একটাই লক্ষ্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। সেই কাজটাই করে চলেছেন অর্ণব।