‘একুশে জুলাই’-এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র! শহিদ দিবসের আগে মণীশ-বাণে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি
সেদিন ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলে দায়ভার এড়াতে পারেন না মণীশ গুপ্ত নিজেও। এতদিন পর তাঁর এ ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যে বিরোধীরা দাবি তুলেছেন, কী সেই ষড়যন্ত্র অবিলম্বে স্পষ্ট করুন।
'১৯৯৩-এর ২১ জুলাই ষড়যন্ত্র করেই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।' - ঘটনার ২৪ বছর পর বোমা ফাটিয়েছেন মণীশ গুপ্ত। একুশে জুলাইয়ের ঘটনায় ভোলবদলে কাঠগড়ায় তুলেছেন তৎকালীন প্রশাসনকেই। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেই আসন্ন একুশে জুলাই শহিদ দিবসের আগে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। প্রশ্ন উঠে গেল, সত্যিই যদি সেদিন ষড়যন্ত্র করে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানে গুলি চালানো হয়, সেই কথা কমিশনে বললেন না কেন মণীশ গুপ্ত? কেনই বা তিনি এত বছর নীরব ছিলেন?
মণীশ গুপ্ত তৎকালীন রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন। সেদিন ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলে সেই দায়ভার এড়াতে পারেন না তিনি নিজেও। এতদিন পর তাঁর এ ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যে বিরোধীরা দাবি তুলেছেন, কী সেই ষড়যন্ত্র এখনই স্পষ্ট করুন মণীশবাবু। পাশাপাশি এ প্রশ্নও উঠে পড়ছে- তাঁর এই মন্তব্যের পিছনে একুশে জুলাইয়ের আগে বাজার গরম করাই উদ্দেশ্য নয় তো!
মণীশবাবুর যে উদ্দেশ্য নিয়েই এই মন্তব্য করুন না কেন, কংগ্রেসের তরফে কড়া বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, মণীশবাবু যখন যেমন, তখন তেমন মন্তব্য করছেন। ঘটনার সময় তিনি বামফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব ছিলেন। তিনি তখন সরকারের মুখ চেয়ে রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন। সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন হাইকোর্টে। আর আজ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তিনি। এখন তৃণমূলের মতো করে বিবৃতি দিচ্ছেন। কংগ্রেস চায়, অবিলম্বে একুশে জুলাইয়ের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে বিভ্রান্তি দূর করা হোক।
এদিকে মণীশবাবু বোমা ফাটানোর পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস মুখে কুলুপ এঁটেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কোনও তৃণমূল নেতাই একুশে জুলাই নিয়ে কিছু বলছেন না। এমনকী মণীশ গুপ্ত স্বয়ং সুচতুরভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রসঙ্গটি। অস্বস্তি এড়াতেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে মুখ বন্ধ রাখার এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কংগ্রেস ও বামেদের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের ২ আগস্ট হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছিলেন, একুশে জুলাইয়ের মহাকরণ অভিযানের নামে সমাবেশে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়েছিল। তারা সবাই নেশাগ্রস্ত ছিল। তারপর ২০১১ সালে গঠিত একুশে জুলাই কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মণীশবাবু জানিয়েছিলেন, ঘটনার কথা তাঁর বিস্তারিত মনে নেই। এখন আবার বলছেন ষড়যন্ত্রের কথা। এখানেই প্রশ্ন, ভুল এযাওয়ার পাঁচ বছর পর কী করে মণীশবাবুর সব কথা মনে পড়ে গেল? আসলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন মণীশবাবু, অভিযোগ বাম ও কংগ্রেসের।
এদিকে রাজ্যের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠন করেছিলেন একুশে জুলাই তদন্ত কমিশন। অবসরপাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল ১৯৯৩-এর ২১ জুলাইয়ের ঘটনার। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিশনের সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেখানে কোনও ষড়য়ন্ত্রের কথা বলা হয়নি। অথচ মণীশবাবু এতদিন পর ষড়যন্ত্রের কথা তুললেন। একুশে জুলাই কমিশনে সাক্ষ্য দেওয়া প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'উনি যখন বলছেন ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তখন তা অনুসন্ধান করা হোক। সেইসঙ্গে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক।'