রাজ্যসভায় কংগ্রেসকেই সমর্থন, ২০১৯-র লক্ষ্যেই কি বোঝাপড়া বাড়াচ্ছেন মমতা
ইয়েচুরির নাম খারিজ হয়ে যেতেই বিকল্প হিসেবে প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাম উঠে আসাই স্বাভাবিক ছিল। কংগ্রেস হাইকমান্ডের তালিকায় দ্বিতীয় নাম ছিল প্রদীপবাবুরই। তাঁকে সমর্থন জানালেন মমতাও।
রাজ্যসভার নির্বাচনে চূড়ান্ত হল কংগ্রেস-তৃণমূল বোঝাপড়া। কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যকে সমর্থন করবে তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন সে কথা। কংগ্রেসের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি দাবি করেন, 'রাজ্যসভার ছ'টি আসনেই জিতব আমরা।'
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার ছ'টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল, একটিতে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলের তরফে। রাজ্যসভায় কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে ২০১৯-এ বিজেপি বিরোধী জোটের ইঙ্গিত দিয়েই রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যসভায় সাংসদ পদপ্রার্থী নিয়ে কংগ্রেসে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। রাহুল গান্ধী চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের টিকিটে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতরাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী করতে। সীতারাম ইয়েচুরির বাগ্মীতার জন্যই রাহুল চেয়েছিলেন বিরোধী বেঞ্চে তাঁর মতে একজন সাংসদকে। সেই কারণেই তাঁকে টিকিট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
কংগ্রেসের টিকিটে সিপিএম প্রার্থীর এই মনোনয়নের ইচ্ছাপ্রকাশ অনেকেই মানতে পারেননি। শুরু হয়েছিল বিতর্ক। সীতারাম ইয়েচুরির প্রথম বাধা ছিল দলের 'এক পদ এক ব্যক্তি নীতি'। সেই বাধা অতিক্রম করলেও কংগ্রেসের সমর্থনে প্রার্থী না হওয়ার দাবিতেই সিলমোহর পড়ে। ইয়েচুরিকে পিছন থেকে কারটা শিবির ছুরি মারেন বলে রাজনৈতিক মহেলর ব্যাখ্যা ছিল।
শেষপর্যন্ত ইয়েচুরির রাজ্যসভায় যাওয়া খারিজ হয়ে যেতেই বিকল্প হিসেবে প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাম উঠে আসাই স্বাভাবিক ছিল। কেননা কংগ্রেস হাইকমান্ডের প্রার্থী তালিকায় দ্বিতীয় নাম ছিল প্রদীপবাবুরই। কিন্তু মাঝখান থেকে ভেসে ওঠে মীরা কুমারের নাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দেন কংগ্রেস থেকে মীরা কুমারকে প্রার্থী করা হলে সমর্থন করবে তৃণমূল।
ঠিক এই সময়ই প্রদীপ ভট্টাচার্য আসরে নামেন। তিনি বিধানসভায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। এরপরই পাশা ঘুরে যায়। মান্নান সাহেব জানিয়ে দেন, হাইকমান্ড চাইলে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। হাইকমান্ডেরও অনুমোদন পেয়ে যান প্রদীপবাবু। সঙ্গে সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে তাঁর সমর্থনও আদায় করে নেন তিনি। সেইমতে মনোনয়ন পেশ করেন প্রদীপবাবু।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় এসে প্রদীপবাবুকে সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট করে দেন। জানিয়ে দেন, ছ'টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে তাঁদের দলের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। বাকি আসনে কংগ্রেসকে সমর্থন করা হবে। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ছ'টি আসনে তাঁরাই জিতবেন।
এই প্রসঙ্গে সিপিএমকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তিনি। মমতা বলেন, সিপিএমের উচিত ছিল কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করা। কারণ কংগ্রেস এই পদে তাঁদেরই দলের দিল্লির এক নেতাকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তা না করে সিপিএম অসৌজন্যের রাজনীতি করল।