নতুন ‘দল’ গড়ছেন মমতা! পঞ্চায়েতের লক্ষ্যপূরণে তৃণমূল ও প্রশাসনে তাঁর ঘোর ‘অনাস্থা’
মমতার অভিযোগ, জনসংযোগ থেকে পিছপা হচ্ছে তাঁর দল। তাই দল বা প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে এবার বিশেষ দল গঠনের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তিনি। আবার তিনি তৃণমূল কংগ্রসের সুপ্রিমোও। তাঁর দলই রাজ্যে মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠাতা। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন চিন্তিত, সাধারণের কাছে সমস্ত সরকারি পরিষেবা পৌঁছনো নিয়ে। তাঁর অভিযোগ, জনসংযোগ থেকে পিছপা হচ্ছে তাঁর দল। তাই দল বা প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে এবার বিশেষ দল গঠনের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে এ ব্যাপারে ইঙ্গিতপূর্ণ সাড়া মিলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে।
প্রশাসনিক বৈঠকে নিজের দলের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিকদের নাম ধরে ধরে ধমক দেন তিনি। অভিযোগ করেন, মানুষের কাছে সমস্ত পরিষেবা পৌঁছচ্ছে কি না, সে খবর নিয়মিত কেউ রাখছেন না। তাঁর কথায়, 'আমার কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের দেখা পাওয়া যায় না। বারবার ছুটেও ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসতে হয়।'
তিনি নির্দিষ্ট বার্তা দেন, 'মানুষ আমাদের অহংকার, মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে আমাদের। জনপ্রতিনিধিরা কেন এলাকা দেখছেন না, সকলকে নিয়মিত এলাকায় যেতে হবে, মানুষের পাশে থাকতে হবে।' তারপরই তিনি বলেন, 'বোধহয় কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে। সেই সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।' এ প্রসঙ্গেই তিনি ইঙ্গিত দেন, সাধারণের কাছে ঠিকমতো সরকারি পরিষেবা পৌঁছচ্ছে কি না, তা জানতে বিশেষ দল গঠন করবেন তিনি।
এই দলের কাজ হবে, সঠিক মানুষ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন কি না তা জানা। দলে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর মনোনীত একান্ত অনুগত কয়েকজন। এঁরা শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ইঙ্গিতপূর্ণণ কথায় দলকে বার্তা দিতে চাইলেন। বার্তা দিলেন প্রশাসনকেও। যাঁরা দলে বা সরকারে থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল পথে চালানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যেই এই বার্তা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন কড়া ভাষায় নিজের দলের জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করে বলেন, 'জনপ্রতিনিধিদের প্রধান কাজই হল জনসংযোগ। সেই কাজেই ঢিলেমি দিয়েছেন তাঁর দলের অনেকে। এই প্রবণতা তিনি ভালোভাবে নেবেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসছে, সবাই হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া চালাচ্ছেন।' এসব বরদাস্ত করা হবে না বলে পরিষ্কার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানান, 'দলটা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নয়। মানুষের সেবা করাই তাঁর দল ও সরকারের ব্রত, এই কথা যেন সবাই মনে রাখে।'