নির্বাচনের আগেই ছন্নছাড়া মোদী বিরোধী জোট! এবার মমতার 'না'-তে অ্যাডভান্টেজে বিজেপি
উৎসবের মরসুম শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের মরসুম। কালীপুজোর পিঠোপীঠি ছত্তিশগড়ের ভোটগ্রহণ দিয়ে যা শুরু হচ্ছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন দিয়ে যার সমাপ্তি ঘটবে।
উৎসবের মরসুম শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের মরসুম। কালীপুজোর পিঠোপীঠি ছত্তিশগড়ের ভোটগ্রহণ দিয়ে যা শুরু হচ্ছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন দিয়ে যার সমাপ্তি ঘটবে। নির্বাচনের এই মরসুমেই স্থীর হয়ে যাবে কেন্দ্রের শাসনভার পরের পাঁচ বছরের জন্য কার হাতে যাবে। যার ফলে নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলা পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন-কে পাখির চোখে করেছে বিজেপি এবং বিজেপি বিরোধীরা। ফলে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা জোরদার রাজনৈতিক কর্মসূচি নিচ্ছেন, ঠিক সেভাবে একই পথ অবলম্বন করেছে মোদী বিরোধীরাও।
(আরও পড়ুন- খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ে মোদী সরকার আদৌ কি স্বস্তিতে ! কোন পথে এগোচ্ছে বিজেপি সরকার)
এমন এক পরিস্থিতিতে মোদী বিরোধীরা এখন সিবিআই-এর অন্দরে গৃহযুদ্ধ নিয়ে বিজেপি-র উপরে আরও চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার জন্য ২৯ ও ৩০ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে 'সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের পতন' শীর্ষক এক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন দিল্লির আপ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দেশের অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই তালিকাতে নাম রয়েছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়েরও। দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিশোদিয়া এই আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু, যা খবর তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় এই সম্মেলনে য়োগ দিচ্ছেন না। বিশেষ সূত্রে খবর, মমতা নাকি জানিয়ে দিয়েছেন ২৯ অক্টোবর তাঁর উত্তরবঙ্গ সফর শুরু হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজ্যে এখন উৎসবের মরসুম। এই সম্মেলন নিয়ে আগে থেকে তাঁর কাছে কোনও খবর ছিল না। তাই এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বাইরে পা-রাখতে চাইছেন না।
(আরও পড়ুন- ছত্তিশগড়ে একটানা চতুর্থবার বিজয় কেতন উড়বে বিজেপির, বলছে সমীক্ষা)
মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের এই সাফ 'না' জবাবে কার্যত হতাশ মোদী বিরোধী জোটের একাংশ। কারণ, গত কয়েক বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই মোদী বিরোধী জোট তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এসেছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে 'ফেডারেল ফ্রন্ট' গঠনের পক্ষেও সওয়াল করে যাচ্ছেন তণমূলনেত্রী। কিন্তু, সম্প্রতি বিরোধীদের মধ্যে বেশকিছু বিষয়ে যেমন মতানৈক্য তৈরি হয়েছে, ঠিক তেমনি মায়াবতীরে আলাদা করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত, লোকসভা ভোটে মোদী বিরোধী জোট থেকে আপ-এর সরে আসা মোদী বিরোধী জোটের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
(আরও পড়ুন- রাত ২টোয় কেন অপসারিত সিবিআই ডিরেক্টর, মোদীকে তোপ রাহুলের)
সিবিআই-এর ডিরেক্টর অলোক বর্মা বনাম সেকেন্ড-ইন কমান্ড রাকেশ আস্থানা-র দ্বৈরথ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে খোদ নরেন্দ্র মোদী-কে তাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সিবিআই-এর এই গৃহযুদ্ধ নিয়ে রাহুল গান্ধী ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে চলেছে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ এনে সওয়াল করা মোদী বিরোধীদের কাছে সিবিআই একটা মোক্ষম ইস্যু। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যু বিজেপি-কে অনেকটা বিপাকে ফেলবে বলে দাবি। তাই সিবিআই-কে আক্রমণ করার নামে আপ-এর আন্দোলন আসলে বিজেপি-কেই নিশানা করেছে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীর ২৯ ও ৩০ অক্টোবর দিল্লিতে থাকাটা জরুরি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যেখানে দেশজুড়ে নির্বাচনের ডঙ্কা বেজে গিয়েছে সেখানে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় উৎসবে কথা বলে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা জমায়েত থেকে সরে যাচ্ছেন তাতে বিষ্মিত রাজনৈতিক মহল।
বিশেষ সূত্রে খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন-তেন প্রকারে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে। ২৯ তারিখ অন্তত যাতে তিনি দিল্লি-র এই সমাবেশে থাকেন তার জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল ফোনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও খবর। কিন্তু, ২৯ অক্টোবর আদৌ কি তিনি উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে দিল্লির পথে পা বাড়াবেন? এমন সম্ভাবনা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।
জানা গিয়েছে সিবিআই নিয়ে বিজেপি বিরোধী এই রাজনৈতিক সম্মেলনটির মূল উদ্যোক্তা তেলেগু দেশমের চন্দ্রবাবু নাইডু। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে কোণঠাসা করতে কংগ্রেসের সঙ্গে তেলেগু দেশম হাত মিলিয়েছে। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সামনে রেখে পুরো জমায়েতটাকে সাজাচ্ছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরল, পঞ্জাব, পুদুচেরি-র মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।