জঙ্গলমহলে ভরাডুবিতে চেতনা ফিরল মমতার! নিয়েই নিলেন ‘চরম’ সেই সিদ্ধান্তটাই
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে জঙ্গলমহলে। ক্ষমতায় এসে যে জঙ্গলমহলকে হাসাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই জঙ্গলমহলই কাঁদিয়ে ছেড়েছে শাসক শিবিরকে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে জঙ্গলমহলে। ক্ষমতায় এসে যে জঙ্গলমহলকে হাসাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই জঙ্গলমহলই কাঁদিয়ে ছেড়েছে শাসক শিবিরকে। তৃণমূলকে টেক্কা দিয়ে জঙ্গলমহলের অধিকাংশ পঞ্চায়েত ও সমিতি দখল করে নিয়েছে বিজেপি। আর এই ফলাফলের প্রভাব গিয়ে পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায়।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সেই কারণেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই তড়িঘড়ি মন্ত্রিসভায় রদবদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তিনজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জঙ্গলমহলের একজনও। আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোকে সরে যেতে হল তাঁর পদ থেকে। তাঁর জায়গায় এই মন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব নিজের হাতেই রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব নিজের কাছে রেখে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, এবার জঙ্গলমহলের রাশ মুখ্যমন্ত্রী হাতছাড়া করতে চান না। জঙ্গলমহলকে ফের তৃণমূলমুখী করতে আসরে নামতে চলেছেন তিনি নিজেই। আসলে তৃণমূলে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো তিনিই। পঞ্চায়েতের দায়িত্ব তিনি অর্পণ করেছিলেন যাঁদের হাতে, তাঁরা শোচনীয় ব্যর্থ। নিজেই সেই দায়িত্ব নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
তাই ফের জঙ্গলমহলকে হাতে আনতে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের ভার অন্য কাউকে দিলেন না। পঞ্চায়েতের পরই মন্ত্রিসভায় রদবদল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ভুল নেতৃত্বের উপর ভরসা রেখেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমরা পঞ্চায়েত ভোটটা কর, লোকসভার দায়িত্ব আমার। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা দলকে সাফল্য এনে দিয়ে পারেনি। উল্টে বিজেপির কাছে জবরদস্ত ধাক্কা খেতে হয়েছে।
জঙ্গলমহলের খারাপ ফলের প্রভাব তার মন্ত্রিসভা রদবদলের ধরন দেখেই স্পষ্ট। মন্ত্রিসভায় জঙ্গলমহলের একমাত্র মুখ চূড়ামণি মাহাতোকে তিনি বাদ দিয়েছেন। ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকেই তিনি সেই বার্তা দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ধমক দিয়েছিলেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যকে। সাবধান করেও লাভ কিছু হয়নি দেখে, তিনি এবার সরিয়ে দিলেন আদিবাসী কল্যাণ দফতরের মন্ত্রীকে।
উল্লেখ্য পঞ্চায়েত ভোটে মন্ত্রীর নিজের কেন্দ্র গড়শালবনীতে বিজেপি জয়লভা করেছে। পর্যুদস্ত হয়েছে তৃণমূল। এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীবাজি যে প্রবল আকার ধারণা করেছিল, তার জন্যই এই হার, তা একপ্রকার বুঝিয়েই দিয়েছেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে তিনি ভরসা করেননি চূড়ামণি মাহাতোর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী সুকুমার হাঁসদাকেও। কর্তৃত্ব এবার নিজের কাঁধেই তুলে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ এবার বড় লড়াই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে।