মুকুল নেই তো কী! ‘সপ্তরথী’র টিম মমতার, একনজরে ২০১৯-এর দায়িত্বে যারা
এগিয়ে আসছে ভোট, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিজেপি। এবার আর সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, তৃণমূলের মূল লড়াই রাজ্যে উদীয়মান শক্তি বিজেপির বিরুদ্ধে।
এগিয়ে আসছে ভোট, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিজেপি। এবার আর সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, তৃণমূলের মূল লড়াই রাজ্যে উদীয়মান শক্তি বিজেপির বিরুদ্ধে। তার উপর নেই মুকুল রায়ের মতো দক্ষ ভোট ম্যানেজার। তৃণমূল ছেড়ে তিনি শত্রু-শিবিরে যোগ দিয়েছেন। মুকুল রায়কে ছাড়া আসন্ন লোকসভাই হতে চলেছে তৃণমূলের বড় নির্বাচন।
এই অবস্থায় মুকুল রায় বিহনে সপ্তরথীর উপর লোকসভা নির্বাচনে দায়িত্ব দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারা তারা, দেখে নিন একনজরে।
অরূপ বিশ্বাস
বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়পাত্র তিনি। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপর অগাধ আস্থা। তাঁকেই পাহাড়ে পাঠিয়েছেন পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে। এবার পাহাড় থেকেই বিরাট সাফল্য আনা তৃণমূলের লক্ষ্য। তাই তিনি অরূপ বিশ্বাসকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। পাহাড়-সহ বিভিন্ন জেলাতেও তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেইমতো তিনি পাহাড়ে নানা কর্মসূচি নিচ্ছেন। মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকছেন পাহাড়ে। আসন্ন লোকসভায় বড় দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাস তুলে নিয়েছেন নিজ কাঁধে।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের মধ্যে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপর অনেকাংশে নির্ভর করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুদক্ষ এই রাজনীতিবিদ মমতার দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। মমতাও ভরসা করেন তাঁর সুব্রত-দাকে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে সুব্রত-দার পরামর্শকে তিনি বেদবাক্য মনে করতেন। রাজনৈতিক মহলে মমতার রাজনৈতিক গুরু হিসেবেও আখ্যায়িত হন তিনি। এখনও প্রশাসনিক প্রয়োজন হলে তাঁর স্মরণ নেন মমতা। সেই হিসেবে লোকসভার যুদ্ধে পোড় খাওয়া এই রাজনীতিবিদের উপর নিয়োজিত গুরু দায়িত্ব।
অনুব্রত মণ্ডল
বীরভূম এবার লোকসভায় বিজেপির প্রধান টার্গেট। পঞ্চায়েত থেকেই মুকুল রায়রা অনুব্রত মণ্ডলের জেলাকে টার্গেট করে এগোচ্ছে। তাই বীরভূমের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। আর এই জেলায় বিজেপিকে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান ভরসা অনুব্রত মণ্ডল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাও রয়েছে ভাই ‘কেষ্ট'-র উপর। মাঝমধ্যে তাঁকে সোজা রাখতে ধমক-টমক দেন, কিন্তু আস্থাও রাখেন। তিনি মনে করেন কেষ্ট একাই সামলে নেবে বীরভূমে।
ফিরহাদ হাকিম
অরূপের পাশাপাশি ফিরহাদ হাকিমের উপরও আস্থা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই কারণে বেশ কয়েকটি জেলার দায়িত্ব নেত্রী অর্পণ করেছেন ফিরহাদের উপর। জঙ্গলমহল থেকে শুরু করে নদিয়া, যেখানেই সমস্যার জটাজাল, ফিরহাদকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফিরহাদ তা সামলে নিয়েছেন। এখন থেকেই দলের সংগঠনের দেখভাল করছেন অন্যদের সঙ্গে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দলের মহাসচিব। মুকুল রায়ের মতো দক্ষ সংগঠক নন ঠিকই, কিন্তু একা কাঁধে অনেকটা দায়িত্ব নিয়ে পারেন। দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন থেকে শিক্ষা দফতর ও পরিষদীয় মন্ত্রীর দায়িত্বও তিনি সফলভাবে সামলাচ্ছেন। সেইসঙ্গে তিনি নদিয়ার মতো জেলার দায়িত্বে। এই জেলায় এবার বিজেপি ফের শক্তি বাড়িয়েছে। তাই ফিরহাদদের মতো অনেককে নিয়ে তিনি এখানে বিজেপিকে রোখার দায়িত্বে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
মুকুল রায়ের দলত্যাগের আগেই তিনি অলিখিত দু-নম্বর হয়ে উঠেছেন তৃণমূলে। যদিও তিনি নিজেকে দু-নম্বর বলে মনে করেন না। মুখে বলেন, আমরা সবাই সৈনিক। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই আমরা এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাব। বাংলাকে সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার প্রয়াসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থা রয়েছে অভিষেকের উপর। অভিযেক এখন যুব তৃণমূলের দায়িত্বে। তিনি জেলাতে গিয়েও মূল সংগঠনকে বাড়ানোর গুরু দায়িত্ব নিচ্ছেন।
শুভেন্দু অধিকারী
প্রাক্তন যুব সভাপতি, এখন দলের সম্পাদক। আবার মন্ত্রীও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যের চাবিকাঠি এবার অনেকটাই নির্ভর করে আছে শুভেন্দুর সাফল্যের উপর। শুভেন্দু অধিকারীর দক্ষতাকে কাজে লাগাতে তিনি বছর দুই ধরেই বেশ কয়েকটি কঠিন জেলার দায়িত্ব তাঁর উপর দিয়ে রেখেছেন নেত্রী। তাঁর নিজের জেলা তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলের দায়িত্বও তাঁর কাঁধে রয়েছে আংশিকভাবে। আর পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে তিনি কাজ করছেন অধীর-গড় মুর্শিদাবাদ, গণি-গড় মালদহ এবং প্রিয়-গড় উত্তর দিনাজপুরে। তিন জেলাতেই তিনি ঘাসফুল ফুটিয়েছেন। এবার প্রভূত সাফল্য আনার জন্য মমতার বড় ভরসা তিনি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেপথ্য নায়ককেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিয়েছেন বড় দায়িত্ব অর্পণের জন্য।
একা মুকুল বিহনে ‘সপ্তরথী’
তৃণমূলে থাকাকালীন একা হাতে তিনি সামলাতেন সংগঠন। এখন তিনি নেই। তবে তাঁর বিকল্প লোকেরও অভাব নেই তৃণমূলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলার দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের মধ্যে। দলগত শক্তিতেই এবার বাজিমাত করতে চাইচেন তিনি। ঘুঁটি সাজাচ্ছেন ৪২-এ ৪২ প্রাপ্তির বড় জয়লাভের।