উনিশের রোডম্যাপ তৈরি করে ফেললেন মমতা, লোকসভার লক্ষ্যপূরণে ১২ দাওয়াই
উনিশের রোডম্যাপ তৈরি করতে দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে ২০১৯-এর লক্ষ্যপূরণে কোন পথে চলবে তৃণমূল
উনিশের রোডম্যাপ তৈরি করতে দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে ২০১৯-এর লক্ষ্যপূরণে কোন পথে চলবে তৃণমূল, তা স্থির করে দিলেন নেত্রী স্বয়ং। তিনি দলের নেতৃত্বকে জেগে ওঠার নির্দেশ দিলেন। সেইসঙ্গে বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বললেন, বিজেপি মাওবাদী তৈরি করছে।
দূরে নয়, কাছে ডাকুন
যাঁরা দূরে সরে আছেন, তাঁদের ডেকে আনুন। ঘরটাকে আরও বড় করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতেই কড়া বার্তা দিলেন দলের নেতা-নেত্রীদের। তিনি যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মানবেন না, তা স্পষ্ট করে দিলেন। তিনি বলেন, আপনারা না ডাকলে আমি তাঁদের ফিরিয়ে আনব।
সময় এসেছে দেওয়ার
এদিন কোর কমিটির বৈঠকে মমতার স্পষ্ট বার্তা, সরকারের কাটমানি নিয়ে আমি দল চালাই না। দল চালাই নিজের পয়সায়। উপার্জনের পয়সায়। তিনি এ বিষয়ে এবার দলের নেতাদের বার্তা দেন, আর অনেক কিছু আপনারা পেয়েছেন, এবার আপনাদের দেওয়ার সময়। চাওয়া বন্ধ করুন, দেওয়া শুরু করুন।
এবার অলসতা ছাড়ুন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন নিয়মিত বিধানসভা ও সংসদে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিলেন বিধায়ক-সাংসদজের। তিনি বলেন, কিছু মন্ত্রী খাটেন, কেউ কেউ কোনও কাজই করেন না। শুধু অপেক্ষা করে তাকেন, দিদি সব কাজ করে দেবে। আপনাদের এলাকা আপনাদেরকেই সামলাতে হবে।
ইভিএম-বার্তা মমতার
মমতা নির্দেশ দেন ইভিএম খতিয়ে দেখার। ইভিএম মেশিনে কারচুপি করে বিজেপি জেতার চেষ্টা চালাবে। তা রুখতে হবে। একবার নয় তিনবার দেখতে হবে। কারণ বিজেপি সাংঘাতিক দল। ওরা অন্তত ৪০ শতাংশ মেশিন খারাপ করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে। সেই ষড়যন্ত্র বন্ধ করে দিতে হবে।
ভোটার তালিকায় জোর
দলনেত্রী এদিন নতুন ভোটারদের তালিকা তৈরিতে জোর দেন। দলের নেতানেত্রীদের ধমকের সুরে বলেন, আপনারা কি ভুলে গিয়েছেন ভোটার তালিকা করতে। এইসব কাজ মন দিয়ে করতে হবে। আপনারা এসব আর গুরুত্ব দিয়ে করছেন না। এবার থেকে ফের শুরু করুন কাজ। ঘরে বসে থাকবেন না।
দেওয়াল লিখনের বার্তা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেওয়ার লিখন শুরু করুন। তবে নোংরা করবেন না, বিকল্প উপায়েও দেওয়াল লেখা যায়। জাগো বাংলার উদাহারণ দিয়ে তিনি দেওয়া লিখতে নির্দেশ দেন। প্রতি বুথে অন্তত ৩০টি করে দেওয়াল লিখতে হবে প্রত্যেককে। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ব্লক প্রেসিডেন্টদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। ১৯ জানুয়ারি থেকে বুথে বুথে বৈঠক শুরু করুন।
দল আগে, ব্যক্তিস্বার্থ নয়
মমতা বলেন, মনে রাখবেন দল না থাকলে কেউ থাকবে না। ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দলের স্বার্থে কাজ করুন। কেউ দুর্নীতি করলে আমাকে চিঠি দিন, আমি দেখে নেব। কিন্তু সবাই বসে থাকবে, আমি গিয়ে সব করে দেব, এ মানসিকতা ছাড়ুন।
নজর ভিনরাজ্যেও
ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও অসমে প্রার্থী দেবে তৃণমূল। ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস ও শুভেন্দু অধিকারী। ওড়িশার দায়িত্বে শুভেন্দু অধিকারী। মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম দেখবেন ডেরেক। মহারাষ্ট্র দেখবেন দীনেশ ত্রিবেদী। দলকে ভালো করে সাজানোর নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, দল নিয়ে ভাবুন।
অসমে বাঙালি-বার্তা
অসমে বাঙালি খেদাও চলছে। অসমের পরিস্থিতি খুব খারাপ। অসমের মানুষ পথে নামুন। আমরা আন্দোলনকারীদের পাশে আছি। সমাজের সকলকে নিয়ে চলতে হবে। আমরা সকলকে নিয়ে চলতে জানি। সেই আঙ্গিকেই আমরা অসমের বাঙালির পাশে দাঁড়াব।
রথযাত্রার পাল্টা পবিত্র যাত্রা
বিজেপির রথযাত্রার পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পবিত্র যাত্রা, শান্তি যাত্রা করুন। ওঁদের রাবণ যাত্রা নিয়ে চিন্তা করবেন না। রাবণরা কখনও শুভ শক্তি হয়ে কাজ করতে পারে না। ওরা শুধু ভাগাভাগি বিভেদের রাজনীতি করতে জানে।
নাম বদলে তোপ
বিজেপি তথা মোদী সরকার ইতিহাস ভুলিয়ে দিতেই নাম বদলের রাজনীতি শুরু করেছে। অন্য কাজে ব্যর্থ হয়েছে বলেই নাম বদল করে বিভাজনের জিগিড় তুলতে চাইছে। ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে ওরা ধর্মীয় তাস খেলছে। ওদের বিশ্বাস করবেন না। রাজ্য রাজ্যে নাম পরিবর্তনের হিড়িকের কঠোর সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
১৯-এর লক্ষ্যে কমিটি গঠন
২০১৯-এর ভোটে লড়তে এখন থেকেই তৈরি করে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মাথায় রেছে প্রচার কমিটি চূড়ান্ত হয়ে গেল। সেই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অভিষেক থেকে শুরু করে ডেরেক, সুব্রত, শোভনদেব, সৌগত চট্টোপাধ্যায়দের। থাকছেন কাকলি, মমতাবালা, অপরূপারাও।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের ‘গদ্দার'-রাই মাওবাদী তৈরি করছে! শুভেন্দুর নামে পোস্টারে তোপ মমতার]