ইংরাজি নববর্ষের সূচনাতেই শুভ ঘোষণা, জানুয়ারিতেই ডিএ! কতটা পরিমাণ মিলবে, জানুন
অবশেষে কিছুটা হলেও স্বস্তি। রাজ্য সরকারী কর্মীরা পেতে চলেছেন বকেয়া ডিএ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একথা ঘোষণা করেছেন।
অবশেষে কিছুটা হলেও স্বস্তি। রাজ্য সরকারী কর্মীরা পেতে চলেছেন বকেয়া ডিএ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একথা ঘোষণা করেছেন। ইলামবাজারের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে বলেন, 'টাকা নেই তবু রাজ্য সরকার ঠিক করেছে বকেয়া ডিএ মেটানোর। জানুয়ারিতেই এই সমস্ত ডিএ মিটিয়ে দেওয়া হবে।'
কতটা পরিমাণ ডিএ মিলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, ২০১৮ সালের জুন মাসেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে বর্ধিত হারে ডিএ দেওয়া হবে। বর্ধিত হারে ডিএ-এর ঘোষণার আগে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে ডিএ-র অন্তর ছিল প্রায় ৪৮ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে বর্ধিত হারে ডিএ যদি পাওয়া যায় তাহলেও এই অন্তর পুরো মিটবে না বলেই বিভিন্ন রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের দাবি। বর্ধিত হারে ডিএ পাওয়া গেলেও ২৩ শতাংশ অন্তর থেকে যাবে বলেই দাবি করা হচ্ছে। যদিও, এই তণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দাবি, পুরো বকেয়াই মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ পান। সেখানে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ১০০ শতাংশ করে ডিএ দেওয়া হয়। ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে এই হার বাড়ার কথা। রাজ্য সরকারি কর্মীরা ডিএ-এর সঙ্গে সঙ্গে ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা বা আরআর পেয়ে আসছেন। পে-কমিশনের দেওয়া নয়া সুপারিশ কার্যকর না করা পর্যন্ত এটা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। অভিযোগ, রাজ্য় সরকার এই ১০ শতাংশ আরআর-কে ৭ শতাংশ ডিএ হিসাবে দেখাচ্ছে এবং ১৮ শতাংশ যে ডিএ বাড়ানো হচ্ছে তার সঙ্গে এটা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, ডিএ-এর বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫ শতাংশ দেখানো হয়েছে রাজ্য়ের পক্ষ থেকে। আরআর-কে ডিএ-এর অঙ্কে বদলাতে গিয়ে টাকার অঙ্কও কমেছে। এই নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়, ডিএ প্রদানের কথা ঘোষণা করায় তাই সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি। সিপিএম-এর সংগঠন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, 'এটা একটা প্রতারণামূলক ঘোষণা, ছয় থেকে সাত মাস আগে যে ঘোষণা হয়েছে, সেটাই আবার নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন।' সেইসঙ্গে বিজয়শঙ্করের হুঁশিয়ারি, '৮-৯ জানুয়ারি সারা ভারতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ধর্মঘটে যাচ্ছেন। রাজ্যের প্রশাসনকে কর্মীরা কীভাবে স্তব্ধ করে দেন সেটা মুখ্যমন্ত্রী দেখতে পাবেন।'
কংগ্রেস সংগঠন কনফেডারেশনের নেতা সুবীর সাহাও প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে বিঁধেছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'পে কমিশনের সুপারিশ জমা পড়বে, সেই অনুযায়ী নতুন বেতনক্রম কার্যকর হবে, তার পরে আইআর বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পে কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই আরআর বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার।' বিজেপি-র সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশিস শীল কটাক্ষ করেই জানিয়েছেন, 'ছ'মাস আগে কার্ড দিয়ে বিয়েবাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ করা হল। বিয়ের দিনেই আবার নতুন করে সেই কার্ডটাই দেওয়া হচ্ছে।' তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী সেভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও তিনি জানিয়েছেন, 'রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ-র বিষয়ে স্থায়ী নির্দেশনামা প্রকাশ করুক। সেক্ষেত্রে বছর বছর ডিএ নিয়ে টানাপোড়েন সহ্য করতে হবে না।'
২৯ নভেম্বর ডিএ নিয়ে নবান্নে বিক্ষোভ দেখান কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যরা। এতে বেশকিছু সরকারি কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি এই ইস্যুকে নিয়ে ৮ ও ৯ জানুয়ারি দেশব্যাপি ট্রেড ইউনিয়নের ধর্মঘটেও সামিল হতে চাইছিল। সামনে লোকসভা ভোট আছে। বিজেপি-ও এই ইস্যুকে হাতিয়ার করতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই বিপদের আঁচ করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বকেয়া ডিএ মেটাতে উদ্য়োগী হয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।