গড়িয়াহাটে কর্পোরেট কর্তা খুনের কিনারা ৭২ ঘন্টায়! স্বামীর দেওয়া তথ্যে গ্রেফতার স্ত্রী, ছেলের খোঁজে তল্লাশি
গড়িয়াহাট (Gariahat) থানার অধীন কাঁকুলিয়ায় কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি (Subir Chaki) এবং তাঁর গাড়ির চালক খুনের ঘটনায় ৭২ ঘন্টায় সাফল্য পেল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। এদিন গ্রেফতার করা হয়েছে ডায়মন্ডহারবারের মহিলা মিঠ
গড়িয়াহাট (Gariahat) থানার অধীন কাঁকুলিয়ায় কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি (Subir Chaki) এবং তাঁর গাড়ির চালক খুনের ঘটনায় ৭২ ঘন্টায় সাফল্য পেল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। এদিন গ্রেফতার করা হয়েছে ডায়মন্ডহারবারের মহিলা মিঠু হালদারকে। পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে খুঁজছে এই মহিলার ছেলে ভিকি হালদারকে। এব্যাপারে পুলিশের কাজে লেগেছে উল্টোদিকের বাড়িতে থাকা সিসিটিভি।
প্রায় ১০ মাস আগে বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ৯-১০ মাস আগে কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি অনলাইনে কাঁকুলিয়ার বাড়ি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তা চোখে পড়ে ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা মিঠু হালদারের বড় ছেলে ভিকি হালদারের। সেই সময় ওই যুবক এসে একবার বাড়ি দেখেও যায়। কিন্তু বাড়ির দাম দেড় কোটি শুনে আপাতত রণে ভঙ্গ দেয়।
জেল ফেরত মা-ছেলে
এরই মধ্যে জেলেও যায় মা মিঠু হালদার এবং দুই ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে সম্পত্তির লোভে বাবাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিল তারা। এর জন্য সবাইকে জেলে যেতে হয়। তবে জেল থেকে ছাড়াও পায় কয়েকমাস আগে। তবে মিঠু হালদারের বড় ছেলে ভিকির দলবলও ছিল বেশ ভালই। কমবেশি সবারই পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে। পরে অবশ্য মিঠু হালদারের স্বামী ডায়মন্ডহারবার ছেড়ে গড়িয়াহাট এলাকায় থাকতে শুরু করে।
কলকাতায় এসে লুটের পরিকল্পনা
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কাজের সূত্রে কলকাতায় আসে ভিকি হালদার। সেই সময় সে গড়িয়াহাটে সুবীর চাকির বাড়িতেও যায়। জানতে পারে সেই বাড়ি এখনও বিক্রি হয়নি। সেই সময়ই ঠিক করে ফেলে বন্ধুদের নিয়ে সুবীর হালদারের থেকে টাকা আদায় করবে। সেই মতো রবিবার বিকেলে সুবীর চাকিকে ডেকে পাঠায়। দোতলার ঘরে কথা চলার সময়ই সুবীর চাকিকে ভয় দেখায় ভিকি হালদার এবং তার দলবল। সেই সময় সুবীর চাকি ভিকি হালদারকে চিনে ফেলেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বলে, সেই তো কয়েক মাস আগে বাড়ি দেখতে এসেছিল। সেই সময় ভিকি দেখে সেই পরিস্থিতিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাবে। ওই পরিস্থিতি ঘাবড়ে গিয়ে যে ছুরি এনেছিল ভয় দেখাতে, তা দিয়েই সুবীর চাকিকে খুন করে। পরে গাড়ির চালকেও খুন করে ভিকি ও তার দলবল। পরে গাড়িতে করে বাড়িও চলে যায় ভিকি। মাকে সব ঘটনা খুলে বলে বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে যায়।
যে পথে তদন্তে সাফল্য
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর রবিবার সুবীর চাকির বাড়ির লোকেদের ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ দুটি দেহ উদ্ধার করে। ওই রবিবারেই আশপাশের বাড়িগুলির সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে আততায়ীর খোঁজ করতে থাকে। সেই ফুটেজ থেকেই ভিকির খোঁজ পেয়ে যায়। নাম না জানলেও পুরো ছবিটাই পুলিশের হাতে উঠে আসে। এরপর পুলিশ সেই ছবি নিয়েই খোঁজ চালাতে থাকে। অন্যদিকে গড়িয়াহাট এলাকাতেই খোঁজ পাওয়ার পরে ভিকির বাবা ছেলেকে সনাক্ত করেন। এরপরেই মঙ্গলবার পুলিশ হানা দেয় ডায়মন্ডহারবারে। মিঠু হালদার এবং তাঁর বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিঠু হালদারের ছোট ছেলে এবং ভাইকেও। মিঠু হালদার ডায়মন্ডহারবারে এক শিক্ষকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। বাড়ি মালিক জানান তিনি মিঠু হালদারকে ১৮ অক্টোবর সোমবার রক্তমাখা জামা ধুতে দেখেছেন। সেখানেই পুলিশ কিছুটা নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর মিঠু হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। ছেলেকে আড়ার করার চেষ্টা পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁকে পুলিশ এদিন তুলে নিয়ে আসে লালবাজারে। সেখানে তাঁকে ১৭ অক্টোবরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখায়। সেই সময় মিঠু হালদার জেরার ভেঙে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি খুনে ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুরাও জড়িত বলে জানায় মিঠু হালদার। এই খুনের মামলায় ছেলেকে সাহায্যের অভিযোগে মিঠু হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে ভিকি হালদারকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কলকাতা পুলিশের দল। এই মামলায় মূল অভিযুক্ত এই মুহূর্তে ভিকি হালদার। তবে তার সঙ্গে বন্ধুরাও ছিল। ভিকি হালদারকে ধরার পরেই বন্ধুদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে পুলিশ। এই খুনের ঘটনায় যে একাধিক ব্যক্তি জড়িত, তা পুলিশের কাছে এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
কেরলের বর্ষণে এখনও পর্যন্ত মৃত ৪২, ক্ষতি ২০০ কোটির বেশি! এখনও তিন জেলার জন্য জারি কমলা সতর্কতা