পুজোতে কতদিন ছুটি পাবেন ভোটের কাজে নিযুক্ত শিক্ষকরা, জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট
বিপুল বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হল ডিও মামলার। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে মামলাটি ওঠে।
বিপুল বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হল ডিও, বিএলও এবং সুপারভাইসার মামলার। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে মামলাটি ওঠে। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে শুনানি চলে। ভোটার তালিক সংশোধনের জন্য ডিও, বিএলও এবং সুপারভাইসার নিয়োগ নিয়ে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সুতন্ত্র হালদার মামলাটি করেছিলেন। মামলকারীদের পক্ষের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বিস্তারিতভাবে ভোটের কাজের জন্য নিয়োগ নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আদালতের সামনে তুলে ধরেন। এতে শিক্ষার অধিকার আইনের ৩৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি আরও বিচারপতিকে জানিয়ে বলেন, এবার ভোটের জন্য নিয়োগে শিক্ষকদের সামনে একটা ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
১ সেপ্টম্বর থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুল ও হাইস্কুল থেকে অসংখ্য শিক্ষককে ডিও, বিএলও এবং সুপারভাইসার হিসাবে নিয়োগ ধরিয়েছে স্থানীয় নির্বাচনী দফতর। কিন্তু একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষকদের অভিযোগ একতরফাভাবে হাতে এই নিয়োগ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংবিধান প্রদত্ত নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা ক্ষমতাকে যথেচ্ছভাবে এর জন্য প্রয়োগ করা হচ্ছে। কোনও ধরনের সুবিধা-অসুবিধাও যাচাই করে দেখছে না ডিও-র নিয়োগ দেওয়া স্থানীয় বিডিও বা এসডিও-র অফিস।
এমন কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ডিও, সুপারভাইসার-এর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যে তাঁরা ঠিক করে হাঁটা চলাও করতে পারেন না। নানা অসুখে আক্রান্ত। চাকরি জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে চলে এসেছেন। এমনকী সিঙ্গল শিক্ষককে দিয়ে চলা স্কুল থেকেও শিক্ষাকর্মীকে ডিও-র কাজে তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের নিয়ম মেনে সিঙ্গিল টিচারে যে সব স্কুল চলছে তা কখনই বন্ধ রাখা যাবে না। অভিযোগ, স্থানীয় নির্বাচনী দফতর প্রাথমিক শিক্ষকদের সুবিধা-অসুবিধা মানতেই রাজি নয়। কেউ কিছু প্রতিবাদ করলেই শোকজ নোটিস ধরানো হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে বিডিও, এসডিও-দের চোখ রাঙানি, চাকরি খেয়ে নেওয়ার হুমকি থেকে শুরু করে মারধর দেওয়ার মতো হুমকির সামনেও পড়তে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের। ২৮ অগাস্ট নাকাশিপাড়া বিডিও অফিসে বেথুয়াডহরির প্রাথমিক শিক্ষক শাশ্বত ঘোষকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করার হুমকি দেন বিডিও। শাশ্বত জানিয়েছিলেন ডিও নিয়োগের সমস্ত কিছু বিস্তারিত না জানালে তাঁর পক্ষে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর যুক্তি ছিল সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বলা হচ্ছে টানা কাজ হবে বলা হয়েছে। তাহলে মাঝে পুজোর ছুটি-তে কেমন করে কাজ হবে, ছুটির দিনে কাজ করলে কত অর্থ মিলবে এবং বাকি দিনেও কী ভিত্তিতে অর্থ মিলবে- তার কোনও কিছুই ডিও নিয়োগপত্রে দেওয়া নেই। ডিও- র নিয়োগ নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন বর্ধমানের প্রাথমিক শিক্ষক অভিষেক মণ্ডলও। সিঙ্গল টিচারে চলে তাঁর স্কুল। একজন প্যারা টিচার থাকলেও তাঁর উপরে নিয়ম মতো স্কুলের দায়ভার ছাড়তে পারবেন না। এত সমস্যা সত্ত্বেও ডিও-র কাজ শুরু করেছিলেন অভিষেক। তবুও তাঁকে শোকজ করা হয় এবং বর্ধমানের এসডিও নর্থের দেওয়া বয়ান হুবহু লিখেই তাঁকে শোকজের জবাব তৈরি করতে বলা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে এসডিও নর্থের কাছে গিয়ে প্রায় গলাধাক্কা খান অভিষেক। অভিযোগ, এসডিও নর্থ ডিও-র কাজ নিয়ে অভিষেকের মুখ থাবড়ে ভেঙে দেওয়ারও হুমকি দিয়ে বসেন।
[আরও পড়ুন: মাঝেরহাট ব্রিজ বিপর্যয়ে গাফিলতি পূর্ত দফতরের, তবে মমতার ক্লিনচিট পেলেন মন্ত্রী]
ভোটের ডিউটি-র নামে ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে কয়েক শ'শিক্ষককে শোকজ নোটিস ধরানো হয়েছে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সামনে পুরো পরিস্থিতিটাই তুলে ধরেন মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। বিচারপতি রাজ্য নির্বাচন দফতরের আইনজীবীর কাছে জানতে চান ডিও-র কাজে নিযুক্তদের কত দিন ছুটি আর কতদিন কাজ? এই নিয়ে রাজ্য নির্বাচন দফতরের আইনজীবী কোনও সঠিক তথ্য পেশ করতে পারেননি। বিচারপতি আরও জানতে চান যে ছুটির দিনে কাজ করলে কতটা পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে? এখন পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে কতজন প্রাথমিক শিক্ষককে ডিও-র কাজে নিয়োগ করা হয়েছে তাও জানতে চান তিনি। কিন্তু কোনও তথ্যই সঠিকভাবে দিতে পারেননি রাজ্য নির্বাচন দফতরের আইনজীবী। এই তথ্যগুলি জমা করার নির্দেশ বিচারপতি।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি একবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর কাছেও জানতে চান যে, তাঁরা একলেন্স চাইছেন না ইলেকশন করাতে চাইছেন? কারণ এই মন্তব্যের আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী আবেদন করেছিলেন যাতে এই মামলায় কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ না দেওয়া হয়। তাঁর যুক্তি ছিল ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ইতিমধ্যে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শেষ করতে হবে। তাই রাজ্য জুড়েই বহু সরকারি কর্মীকে এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এমন যুক্তিতে তখন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এক্সেলেন্স না ইলেকশন মন্তব্যটি করেন। ১৯ মে ফের শুনানি। ওই দিনইএই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
[আরও পড়ুুন:৯ রাজ্যে নতুন এআইসিসি সচিব নিয়োগ কংগ্রেসের, বিজেপির বিরুদ্ধে কোমর বাঁধলেন রাহুল]
নির্বাচনী কাজে যাতে শিক্ষকদের সেভাবে নিয়োগ না করা হয় তার জন্য বহু বছর আগেই কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। এমনকী, ভোটকর্মী হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় রয়েছে। যেখানে নির্বাচনী কাজে প্রথমেই প্রাথমিক শিক্ষকদের যুক্ত না করারই বিধান দেওয়া হয়েছে। বিচারপতির সামনে সব তথ্যই শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। রায় তাঁদের পক্ষেই যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের মুখ মইদুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য জুড়ে কত শিক্ষককে ভোটের কাজে নিয়ে নেওয়া হয়েছে তার একটা তালিকা তাঁরা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। ১৯ তারিখে তাদের তরফে একটি তালিকা বিচারপতির হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।
[আরও পড়ুন: ভেঙে ফেলা হবে মাঝেরহাট ব্রিজ, নতুন ব্রিজের রূপরেখা দিয়ে দায়ও মানলেন মমতা]