রাস্তা বন্ধ করে কেন উড়ালপুল তৈরির কাজ করল না প্রশাসন, প্রশ্ন স্থানীয়দের
কলকাতা, ১ এপ্রিল : বিবেকানন্দ উড়ালপুল বিপর্যয়ের পর প্রায় গোটা একটা দিন কেটে গিয়েছে। নিত্যদিনের কাজের তাগিদে রাস্তায় বেরনো আমজনতা বেঘোরে প্রাণ দিয়েছেন কোনও বিপদের আঁচ না পেয়ে। কেউ যাচ্ছিলেন বাসে, কেউ ট্যাক্সিতে, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ আবার হাঁটা পথে পার হচ্ছিলেন বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নিচ দিয়ে।
ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ সেতুর ভয়াবহ দৃশ্য একনজরে
আর তখনই ঘটে গিয়েছে চূড়ান্ত বিপর্যয়। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে উড়ালপুলের ১০০ মিটার অংশ। নির্মাণে গলদ, নাকি অন্য কোনও সমস্যা, তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হতে পারে। তবে পোস্তা এলাকার সাধারণ মানুষ সেসবে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাদের চোখের সামনে যে অসহায়ভাবে নিরীহ কতজন মানুষ প্রাণ হাকালেন, সেই শোকে মুহ্যমান এলাকাবাসী।
জানা গিয়েছে, এই সেতু নির্মাণের বরাত পাওয়া হায়দ্রাবাদের নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়াররা রাজ্যের পুর দফতরের তদারকিতে কাজ করছিলেন। প্রথম থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উড়ালপুলের তদারকি তাঁরাই করছিলেন।
ঠিক যে যে কারণে ভেঙে পড়ল বিবেকানন্দ উড়ালপুল!
আর এই শোকের আবহেই তাই এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসা রাজ্য সরকারের প্রতি। হতে পারে কারও গাফিলতি ছাড়াই কোনও কারিগরিগত কারণে ঘটেছে দুর্ঘটনা। কিন্তু সেই দুর্ঘটনা কি আটকাতে পারতো না রাজ্য সরকার? আরও স্পষ্ট করে বললে, কেন রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে বলি হতে হল এতগুলি নিরীহ প্রাণকে? প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।
যে এলাকায় উড়ালপুলটি তৈরি হচ্ছে, তা জনবহুল বললেও কম বলা হয়। এমন একটি রাস্তার উপরে যখন উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে, তখন কেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল না? দুর্ঘটনার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত এই সেতুর নিচ দিয়ে অনবরত চলাচল করেছে ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের গাড়ি। পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়েছেন পথচারীরাও।
কিন্তু এমনটা কি নিয়ম? প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। সাধারণত জনবহুল এলাকায় কোন নির্মাণের কাজ হলে সেই জায়গা পুরোপুরি ঘিরে রেখে কাজ করা হয়। আমজনতার সেই জায়গার কাছ দিয়ে বা নিচ দিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ থাকে। নিরাপত্তার খাতিরেই এই নিয়ম পালন করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, এই নিয়ম একেবারেই পালিত হয়নি বিবেকানন্দ উড়ালপুল তৈরির সময়ে। বুধবার রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নাগাড়ে কাজ চলেছে। এরপর সেই কাঁচা পাটাতনের নিচ দিয়ে গাড়িগুলিকে চলাচলের জন্য রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একবারের জন্যও ভাবা হয়নি দুর্ঘটনা ঘটলে কি হতে পারে।
শুধু বুধবারই নয়, এর আগেও দিনেরপর দিন ধরে এভাবেই সকলের মাথার উপরে নিশ্চিন্তে কাজ চলেছে। আর নিচ দিয়ে চলে গিয়েছেন পথচারী থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন।
স্থানীয় প্রশাসন থেকে পুর দফতরের দাবি সবদিক মেনেই কাজ হচ্ছিল। ঘেরা ছিল নিচের কয়েক মিটার এলাকাও। আর এখানেই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, উড়ালপুল যে একশো মিটার ভেঙে পড়ে ২৫ জনের প্রাণ নিল। তার দায় কে নেবে?