প্রযুক্তির মায়াজাল থেকে মুক্তির আহ্বান! হাতিবাগান সর্বজনীনের এবারের আকর্ষণ
প্রযুক্তির সর্বনাশা বন্ধন থেকে মুক্তির আহ্বান জানানোই এবারের হাতিবাগান সর্বজনীনের থিম। বর্তমানে মনের বন্ধন থেকে ছিন্ন হয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির বন্ধনে বেশিই আবদ্ধ হচ্ছে। আর এই বন্ধন এর থেকে মুক্তির আহ্বান জানিয়ে চলতি বছরের উৎসবের মন্ডপ সেজে উঠেছে হাতিবাগানে সার্বজনীন।

ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোয়। কিন্তু এটাই নাকি সর্বনাশা ! সেই সর্বনাশা বন্ধন থেকে মুক্তির আহ্বান জানানোই হাতি বাগান সর্বজনীনের এবারের থিম।
বাবা মায়ের অভিযোগ তাদের সন্তানেরা নাকি কথা শোনে না? কিন্তু মুঠোফোনের দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকা কিশোর কিশোরীরা এই প্রযুক্তির জালে দিনের পর দিন বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। যে মুঠোফোনের থেকে আসা নির্দেশ মানতে বলি দিচ্ছে নিজের প্রাণের মায়াও তুচ্ছ। সাম্প্রতিক ব্লু হোয়েল, বা মোমো গেমই তার চূড়ান্ত উদাহরণ। তাই এই প্রযুক্তির জাল থেকে বেরিয়ে এসে সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতির পথে এগিয়ে যাওয়াই বার্তা হাতিবাগান সর্বজনীনের।
এই ক্লাবের এক সদস্যের কথায়, 'মানুষ প্রতিনিয়তই বন্ধনে জড়ায়। একটার পর একটা বন্ধন আবদ্ধ করে ফেলছে মানুষকে। এক বন্ধন যুক্ত হচ্ছে তো অন্য বন্ধন আলগা হতে থাকে। সে মনের বন্ধনী হোক বা প্রযুক্তির বন্ধন। বন্ধন পিছু ছাড়ে না। কিন্তু বর্তমানে মনের বন্ধন থেকে ছিন্ন হয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির বন্ধনে বেশিই আবদ্ধ হচ্ছে। আর এই বন্ধন এর থেকে মুক্তির আহ্বান জানিয়ে চলতি বছরের উৎসবের মন্ডপ সেজে উঠেছে হাতিবাগানে সর্বজনীন।
পুজোর এক কর্তা জানালেন, মানুষের মনে থাকে যুক্তি, প্রতি যুক্তির জাল। সন্দেহ, বিশ্বাস অবিশ্বাসের জালে বারবার আটকা পড়ে মানুষের মন। এই মানসিক জাল থেকে মুক্তির কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে আমরা নির্ভরশীল হয়ে উঠছি প্রযুক্তির ওপর। সেটাই সর্বনাশা। কেড়ে নেয় সাবলীল ব্যবহার, সহানুভূতি, সম্পর্ক, আত্মিক বন্ধনকে। এই প্রযুক্তির বন্ধন ধ্বংস করে দিচ্ছে শৈশবকে। নতুন প্রজন্ম মাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরা চিনছে না আকাশের ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনের হাওয়া রঙের খেলা। শুনছে না অচিন দেশে উড়ে যাওয়া পাখির ভাষা। একারণেই কৈশোর কালের প্রকৃতির রূপ থেকে বঞ্চিত যুবক আজ জড়িয়ে পড়ছে বাইরের প্রযুক্তি জালে । এই জাল আজগরের মতো পাকে পাকে জড়িয়ে ধরছে যুব সমাজকে।
মণ্ডপ শিল্পী জানালেন, 'লোহার ওপর একটা তার জাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মণ্ডপ। যেখানে তৈরি হচ্ছে এক জালে জড়িয়ে পড়া জীবনের প্রতিচ্ছবি। এর মাঝে শূন্য থেকে ঝুলানো থাকবে মানুষের মস্তিষ্কের রেপ্লিকা। যা মানুষের মস্তিষ্ক মানসিক জালের মধ্যে জড়িয়ে পড়া অসহায় পরিস্থিতিকে তুলে ধরবে। সবশেষে সমস্ত জাল ছিন্ন করে এক রাশ আলোর মাঝখানে অবস্থান করবে দেবী দুর্গার চিন্ময়ী রূপ। যিনি শুধু বাইরের নয়, মনের কোনে জমে থাকা দুঃখ কষ্টের কারাগার ভেঙে ফেলে বাইরে বেরিয়ে আসবে।
পুজো উদ্যোক্তাদের বার্তা, সমস্ত বন্ধনের ওপরে রয়েছে পরমা প্রকৃতি দেবী। যার কাছে কোনও বন্ধন, কোনও মায়া কাজ করে না।