'এই সরকারের আমলে সঙ্ঘ-এর এগারো গুণ বৃদ্ধি হয়েছে', 'টপ ভয়েস'- মুখোমুখি সূর্যকান্ত
সিটুর রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষ্যে যাদবপুরের সুলেখা মোড়ে একটি সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এই সভা থেকেই ২৮ ও ২৯ তারিখ কলকাতায় মহামিছিলের রূপরেখার কথাও জানান তিনি।
সিটুর রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষ্যে যাদবপুরের সুলেখা মোড়ে একটি সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এই সভা থেকেই ২৮ ও ২৯ তারিখ কলকাতায় মহামিছিলের রূপরেখার কথাও জানান তিনি। সভায় বক্তব্যের শেষেই ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বললেন সূর্যকান্ত-
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- বিজেপি-র রথযাত্রা প্রতিরোধে কী ভাবে তৈরি হচ্ছে রাজ্য সিপিএম?
সূর্যকান্ত মিশ্র- আমরা বারবার বলছি রাস্তায় আছি, রাস্তায় থাকব।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- এই যে থাকার কথাটা বলছেন তা কীভাবে? মানে কী কী কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সিপিএম?
সূর্যকান্ত মিশ্র- সিঙ্গুর থেকে কলকাতায় যে পদযাত্রার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তাতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো ছাড়়া দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাই অংশ নিচ্ছে। এরা কলকাতায় আসার আগে এলাকায় এলাকায় ঘুরে ঘুরে মিছিল করছে। ২৮ ও ২৯ নভেম্বর কলকাতায় কৃষক ও খেতমজুরদের সুবিশাল পদযাত্রায় এসে মিশবে এই মিছিল। এই কর্মসূচি হচ্ছে বিজেপি-র রথযাত্রার আগেই। কৃষকের সমস্যা, শ্রমিকের সমস্যা, বেকারের সমস্যা, আদিবাসী-সংখ্যালঘু -তপশীলি, অন্য়ান্য সামাজিকভাবে যারা পশ্চাদপদ, মহিলা-শিশুদের উপরে যে আক্রমণ হচ্ছে - এই সব বিষয়গুলোতে নানা দাবি নিয়ে লড়াই হচ্ছে। এলাকা-এলাকায় এক্কেবারে নিচুতলা থেকে এই আন্দোলন হচ্ছে। এই যে লড়াই এগুলোই দু'দিন ধরে কলকাতার বুকে এক মহামিছিলের রূপ নেবে।
আজ শিলিগুড়িতে বস্তিবাসীদের মহামিছিল ও কলকাতায় শিক্ষকদের মহামিছিল।
— Surjya Kanta Mishra (@mishra_surjya) November 23, 2018
মিছিল সবদিনই।
২৮-২৯ সিঙ্গুর থেকে কলকাতা কৃষক ও খেতমজুরদের সুবিশাল পদযাত্রা।
২৯-৩০ কিষান মুক্তি মার্চের দিল্লি চলো অভিযান।
সবই 'লেনিন মাসে নভেম্বরে'
...'আমরা নই একা... আমরা করব জয় নিশ্চয়ই।' pic.twitter.com/8i8m2YceDa
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- 'রথযাত্রা'-র সঙ্গে আদৌ সাধারণ মানুষের কোনও সংযোগ আছে না এটা কে একটা রাজনৈতিক 'গিমিক' হিসাবেই দেখছে সিপিএম?
সূর্যকান্ত মিশ্র- রথ-ফত কোনও ব্যাপার নয়। আমি আবারও বলছি এটা হল ভোটযাত্রা। ভোটের আগে ওরা এমন একটা যাত্রা করে।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- 'রথযাত্রা' নিয়ে শাসকদলের ভূমিকা-কে কীভাবে দেখছেন?
সূর্যকান্ত মিশ্র- সঙ্ঘ পরিবারের হিসাব বলছে বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে ৪ বছরে তাদের সংগঠনের এগারো গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। এমনকী, এরসঙ্গে সঙ্ঘের বিভিন্ন অনুসারি শাখা সংগঠনও রয়েছে। এরা সকলেই পল্লবিত হয়েছে এই সরকারের আমলেই। এমনটা বাংলায় কখনও হয়নি। যেখানে আমরা সহজে একটা অনুমতি পাই না মিটিং মিছিলে-র। অনুমতি দেওয়া না একটা কনফারেন্স-এর। আরএসএস সেখানে শিবির করতে পারছে। সেখানে অস্ত্র শিক্ষা থেকে আরও অনেক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। এই বেলায় সরকারের কোনও পারমিশন লাগে না। কিছু লাগে না। অথচ আমাদের একটা কিছু করতে গেলে পারমিশন পাওয়াই যায় না। মিটিং করা তো দূরের কথা।
ছাত্র যুব,সামাজিক ন্যায়মঞ্চ,আদিবাসী অধিকার মঞ্চ,লোকশিল্পী ইত্যাদি সংগঠনের সংগ্রামের তরঙ্গশীর্ষে কৃষক ও খেতমজুরদের সিঙ্গুর থেকে কলকাতা যাত্রা।সামনে আরো ব্যাপক বৃহত্তর সংগ্রাম ৬ই ডিসেম্বর ,৮-৯ই জানুয়ারি।সঙ্গে সলিল চৌধুরীর গান ও শ্লোগান।সবারে করি আহ্বান। pic.twitter.com/asfjcLs8lz
— Surjya Kanta Mishra (@mishra_surjya) November 22, 2018
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- কিন্তু, শাসক দলের উপরেই শুধু কি দায় চাপিয়ে দলে হবে? বিরোধী দলগুলির কি কোনও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নেই?
সূর্যকান্ত মিশ্র- যদি কেউ আছে তাহলে বামপন্থীরা-ই আছে। সিপিএম আছে, বামপন্থীরা আছে, বামসহযোগী সংগঠনগুলো রয়েছে। যদি কেউ লড়াইতে আছে, তাহলে আমরাই আছি। আর কোনও শক্তি নেই এখানে।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- গত কয়েক বছরে বামেদের তেমন তো কোনও 'মুভমেন্ট'-ই নেই! তাহলে আপনি একথা কী করে বলছেন?
সূর্যকান্ত মিশ্র- বামপন্থীদের কাছ থেকে কিছু দেখা যায়নি না দেখানো হয়নি। এই যে অগাস্ট মাসে যে আইন অমান্য আন্দোলন হল তখন তো সব জেলাতেই তা হয়েছে। ওটা কী বলবেন? এটা কী দেখানো হয়েছিল? আপনাদের কী মনে হয় অন্য কোনও বিরোধী দল এভাবে আন্দোলন করেছে?
আগামী ২৮-২৯শে নভেম্বর AIKS-AIAWU -র উদ্যোগে সিঙ্গুর থেকে রাজভবন অভিযান সংগঠিত হবে। ২৮ তারিখ সিঙ্গুর থেকে পদযাত্রার সূচনা করবেন সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক কমরেড হান্নান মোল্লা। ২৯ তারিখ কলকাতা রাণী রাসমণি রোডে অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় সমাবেশ।
— Surjya Kanta Mishra (@mishra_surjya) November 15, 2018
*#SingurKisanMarch* pic.twitter.com/EMmJquJD7U
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- আন্দোলনের মধ্যে ধারাবাহিকতা না থাকলে সেটা কী মজবুত হবে?
সূর্যকান্ত মিশ্র- অবশ্যই এতে ধারাবাহিকতা আছে। রিপিটেডলি এগুলো করা হচ্ছে। সমানে চলছে। আপনি খেয়াল করে দেখুন এর আগে পরে বেশকিছু পদযাত্রা হয়েছে। আর এগুলি সবই হয়েছে রাজ্যজুড়ে। যাকে বলে রাজ্যজুড়ে অধিকার যাত্রা। আর কেউ এভাবে পথে নেমেছে? আপনি বলুন- যে আর কোনও শক্তি এভাবে সরব হয়েছে কি? বুথস্তর থেকে সমানে একের পর এক আন্দোলনকে সংঘঠিত করা হচ্ছে। কোথায় কোচবিহার? কোথায় পুরুলিয়া? সবখানেই নানা ইস্যু ধরে পদযাত্রা চলছে। রায়নাতেও শুক্রবার একটা মিছিল হয়েছে। ১১ কিলোমিটার পদযাত্রা হয়েছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ এতে হেঁটেছেন। এটাই বড় গ্যারান্টি। মানুষের দৈন্যন্দিন জীবন-জীবিকার উপরে যে আক্রমণ হচ্ছে তা মোকাবিলার জন্য জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে সকলকে লড়াই-এর ময়দানে ঐক্যবদ্ধ করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের যে চেষ্টা চলছে তার বিরুদ্ধে লড়াই-এও এটা বড়় হাতিয়ার। এই লড়াইটা আমরাই একমাত্র লড়ছি। আর কেউ এতে নেই। ভারতে যদি কেউ আছে তাহলে বামপন্থীরা আছে, বাম সহযোগীরা আছে এবং আমরা বাকি সমস্ত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলো-কে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।
Postering for Singur to Rajbhaban Avijan on 28-29 November and walling for 48hrs General Strike and Hartal on 8-9 January occupies the walls of Bengal simultaneously. Occupy as many walls as possible in all the districts and ensure that these aren't removed. pic.twitter.com/U4sE3TQNh5
— Surjya Kanta Mishra (@mishra_surjya) November 10, 2018
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- তৃণমূল-এর 'অতিবামপন্থা' নীতিতে কী বাম-রা গলার কাঁটা? আর সেই কারণে কৌশলে বিজেপি-কে মাইলেজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে?
সূর্যকান্ত মিশ্র- পরস্পর পরস্পর-কে মাইলেজ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এঁদের টিঁকি এক জায়গায় বাঁধা। আমি বললাম হেড অর টেল। টস যাই করুন এই দু'জনের বাইরে আর কিছু তো পড়বে না। কারণ হেড আর টেল-তো এই দুই দলেরই নাম লেখা রয়েছে। তবে এটা অচল পয়সা। এই দিয়ে বেশিদিন কাজ হবে না।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- সামনে লোকসভা নির্বাচন, ইতিমধ্যে দেশজুড়ে ভোটের আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছে, আর কীধরনের কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে?
সূর্যকান্ত মিশ্র- আমরা রাজনীতিটা শুধু নির্বাচনের জন্য করি না। সাধারণ একটা ধর্মঘট আছে। নির্দিষ্ট ১২ দফা দাবি-তে আছে। রাজ্যে দু'দফার দাবিতে আছে। আরও স্থানীয়ভাবে আরও কিছু আছে। বিভিন্ন গণ সংগঠন যারা এতে সমর্থন দিচ্ছে তাদের নিজস্ব দাবি আছে। যে যার লড়াইতে রয়েছে। ছাত্ররা আছে, যুবরা আছে, মহিলারা আছে। শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়নগুলো আছে, কৃষকরা আছে, ক্ষেত মজুররা আছে। এরা সকলেই বাইরে থেকে সাধারণ ধর্মঘটকে সমর্থন দিচ্ছে। তাছাড়়া আমরা তো ১৭টি দলের মধ্যে থেকে সমর্থন দিয়েছি।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- লোকসভা নির্বাচনে কি ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেবেন আপনারা?
সূর্যকান্ত মিশ্র- সেটা যখন হবে তখন দেখা যাবে। এই মুহূর্তে ৪২টি আসন-ফাসন-এ মাথা ঘামাই না। আমরা ওইরকম পার্টি নই। আমরা এখন লড়াই-তে আছি। এগুলো যখন হবে তখন দেখা যাবে।
কেন্দ্র ও রাজ্যে সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
— CPI(M) WEST BENGAL (@CPIM_WESTBENGAL) November 23, 2018
সিঙ্গুর থেকে রাজভবন অভিযান
২৮-২৯শে নভেম্বর। #SingurKisanMarch#KisanMuktiMarch #DilliChalo #SaveOurFarmers pic.twitter.com/T6rZd2nWw1
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে কি কাঁধে কাঁধ মেলাবে সিপিএম?
সূর্যকান্ত মিশ্র- কংগ্রেস বা বিজেপি-র সঙ্গে সমদূরত্বের লাইন আমাদের লাইন না। আমাদের যে পার্টি লাইন তাতে পরিস্কার করে বলা আছে বিজেপি যে দল তার সঙ্গে অন্য কোনও বুর্জোয়া পার্টিকে এক করে দেখতে নেই। কংগ্রেস হল দেশের প্রধান বিরোধী দল। তারা বিজেপি-র বিরোধিতা করতে বাধ্য। তাদের সঙ্গে আমরা বিজেপি-কে এক করে দেখছি না।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি- রাজ্যে তাহলে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার অঙ্কটা ঠিক কী হবে? কারণ কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের একটা চাপ আছে প্রদেশ কংগ্রেসের উপরে যে তণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার।
সূর্যকান্ত মিশ্র- অঙ্কটা কী হবে তা এখুনি বলা যাবে না। অঙ্ক যখন কষা হবে তখন বলা যাবে। সে সময় আপনারা দেখতে পারবেন। আমরা পরিস্কার করে বলে দিয়েছি বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোটকে আমরা এক জায়গায় করার চেষ্টা করছি। ইংরাজিতে বললে 'ম্যাক্সিমাইজ দ্য পোলিং অফ অ্যান্টি টিএমসি, অ্যান্টি বিজেপি ভোট ইন বেঙ্গল'। আর সারা দেশে হচ্ছে যে 'ম্যাক্সিমাইজ দ্য পোলিং অফ অ্যান্টি বিজেপি ভোট'।