ভবিষ্যৎ গড়তে আরব মুলুকে পাড়ি দিয়ে মিলেছে দাসত্ব , কলকাতার যুবককে ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী বিদেশমন্ত্রক
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আরব দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতার এক ইঞ্জিনিয়ার যুবক। ভিনদেশে গিয়ে তিনিই বনে গেলেন দাস! ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ‘চাকরি' নিলেন আরব শেখের উটের ফার্মে।
কলকাতা, ১০ নভেম্বর : উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আরব দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতার এক ইঞ্জিনিয়ার যুবক। ভিনদেশে গিয়ে তিনিই বনে গেলেন দাস! ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে 'চাকরি' নিলেন আরব শেখের উটের ফার্মে। ভাগ্যের এমনই পরিহাস পালিয়েও রেহাই মিলল না। স্থান হল শ্রীঘরে। বহু চেষ্টায় কারান্তরাল থেকে বেরিয়ে বাড়িতে ফোন করার পর শুরু হল তাঁকে ঘরে ফেরানোর তোড়জোড়। উদ্যোগী হল বিদেশমন্ত্রক।
কলকাতার অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত বিশ্বাস। সৌদি আরবে গিয়ে মধ্যযুগীয় 'অভিজ্ঞতা'র স্বাদ পেয়েছেন ইতিমধ্যেই। তাঁর সাত মাসের আরব-সফর স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতোই। এই ইঞ্জিনিয়ার বিদেশে কাজের খোঁজে বছরের শুরুতে যোগাযোগ করেছিলেন দিল্লি ও মুম্বইয়ের দালালদের সঙ্গে। একলাখ টাকা চাকরি জুটিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদি আরবের রাজধানি রিয়াধে। অটোমোবাইল শিল্পে লোভনীয় চাকরির অফার। তারপর রিয়াধগামী বিমানে সটান আরবের পাড়ে। ১৫ মে রিয়াধে নামলেন, শুরু হল দুঃস্বপ্নের কাহিনির।
চাকরি একটা পেয়েছিলেন জয়ন্ত। তার আগে জয়ন্তকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল আরব শেখের কাছে। ওই আরব শেখই উটের ফার্মে কাজ দিলেন জয়ন্তকে। শুরু হল দাসত্বের জীবন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম। দিনে একবার খাবার জুটত দু'মুঠো। পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বহুবার। কিন্তু বিনিময়ে ধরা পড়ে জোটে নির্মম মার।
শেষপর্যন্ত অবশ্য জয়ন্ত সফল হন পালিয়ে যেতে। যোগাযোগ করেন রিয়াধের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে। তাঁকে পাঠানো হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়। এরই মধ্যে ক্ষিপ্ত ফার্ম-মালিক অভিযোগ করে পুলিশে। অভিযোগ, জয়ন্ত ১০ হাজার রিয়াল চুরি করে পালিয়েছেন। এরপর তাঁর স্থান হয় শ্রীঘরে।
সেখান থেকে কলকাতায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন জয়ন্ত। যে দালালরা তাঁকে রিয়াধ পাঠিয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাড়ির লোকেরা। জয়ন্তর মুক্তিপণ ধার্য হয় ৩৫ হাজার টাকা। সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর ২৭ অক্টোবর জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।
কিন্তু তারপর এক পক্ষকাল কেটে গেলেও তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি ওই দালাল চক্র। বাধ্য হয়েই জয়ন্তর বাবা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করে চিঠি লেখেন বিদেশমন্ত্রকে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এরপর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাঁকে ফেরাতে।