মেরুকরণের রাজনীতিতে বামেদের ভবিষ্যৎ কী?
প্রথম পথটি বিশেষ গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না এই মুহুর্তে। কারণ, এই মুহুর্তে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস-এর বেশ কোনঠাসা অবস্থা। 'সাম্প্রদায়িক' বিজেপিকে ঠেকানোর যে তত্ত্ব বামপন্থী প্রায়শই আওড়ান, তার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যায় যখন বিজেপি বিরোধী আসনে থাকে কারণ নিজে বিরোধী হয়ে আরেক বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযান বিশেষ সফল হওয়ার নয় যখন খোদ সরকারই নানা সমস্যায় জেরবার। বর্তমান বাম নেতৃত্ব ঠিক এ করতে পারছে না যে কংগ্রেস তাঁদের বন্ধু না শত্রু। কারণটা সহজ।
বামেরা একক শক্তি হিসেবে এতটাই দুর্বল যে তাঁদের কোনও না কোনও দলের সমর্থন প্রয়োজন। আবার মতাদর্শগত বাধ্যবাধকতার জন্যে তাঁরা কংগ্রেস কিংবা বিজেপি কারো সঙ্গেই মিশ খেতে পারে না। কংগ্রেস-এর উদারবাদী অর্থনীতি এবং বিজেপির দক্ষিনপন্থী রাজনীতির সঙ্গে বামেরা সঙ্গতিস্থাপনে ব্যর্থ। কংগ্রেসকে 'কম খারাপ' হিসেবে জোটসঙ্গী করার একটি বাসনা বামেদের থাকে, কিন্তু সেই বাসনা সবসময় যে কার্যকর হয় তা নয়। ২০০৮ সালের 'ঐতিহাসিক ভুল' বামেরা সহজে ভুলবে বলে মনে হয় না।
অতএব, হাতে রইলো পেন্সিল-এর মতই থাকল তৃতীয় ফ্রন্ট। কিন্তু বর্তমানে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি যেভাবে কংগ্রেস-বিরোধী পরিসরটিকে কব্জা করছেন, তাতে তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি ইতিমধ্যেই মোদির দিকে ঝুঁকেছে এবং ওয়াই এস আর কংগ্রেস সুপ্রিমো জগন মোহন রেড্ডিকেও সম্প্রতি মোদির তারিফ করতে শোনা গিয়েছে। বিহারে নীতীশকুমার বিজেপিকে ত্যাগ করার পর খুব সম্ভবত কংগ্রেস-এর দিকেই ঝুঁকতে চলেছেন। সেই রাজ্যের আরকেটি বড় শক্তি রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) তাদের নেতা লালুপ্রসাদের জেল হওয়ার পর খুব শিগগিরই লড়াইতে ফিরতে পারবে বলে মনে হয় না।
উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস চাইছে মায়াবতীকে পাশে পেতে। মুলায়ম সিংহ যাদবকেও রেহাই দেওয়া হয়েছে মামলা থেকে। দক্ষিণে জয়াললিতার সঙ্গে মোদির সখ্য সুবিদিত। তৃনমূল কংগ্রেস-এর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামেদের সঙ্গে তৃতীয় ফ্রন্টে যোগ দেবেন নে, তা বলাই বাহুল্য। অতএব, এক ওড়িশার বিজু জনতা দল ছাড়া আর কোনো বড় দলকেই তৃতীয় ফ্রন্ট-এর দাবিদার হিসেবে দেখা যাচ্ছে না। মুলায়ম তৃতীয় ফ্রন্টকে আপাতত ভোট-পরবর্তী সমীকরণ হিসেবেই রেখেছেন এবং তাতে বোঝা যায় যে ধুরন্ধর সমাজবাদী পার্টি নেতাটি সুযোগের অপেক্ষায়ে রয়েছেন। তাহলে এই ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী?
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক এবং নির্বাচনিক নিরিখে এদেশের বামপন্থীদের এখন প্রবল অস্তিত্বের সংকট।