'প্রভাবশালী নই, আমি অভাবশালী', মন্দিরে পুজো দিয়ে বললেন মদন
কলকাতা, ১৩ সেপ্টেম্বর : একদিকে সিবিআই যখন তাঁর জামিন খারিজের আর্জি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ, তখনই হনুমানজির মন্দিরে পুজো দিতে এই প্রথম হোটেলের বাইরে বের হলেন মদন মিত্র। মন্দিরে দাঁড়িয়েই তাঁর জবাব, 'আমি প্রভাবশালী নই, আমি এখন অভাবশালী। একজন সাধারণ মানুষ। আসল প্রভাবশালী তো হনুমানজি।'পুজোর আগে সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত মদন মিত্র জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
জেল থেকে বেরিয়ে বাড়ি যেতে না পারলেও রয়েছেন বাড়ির কাছাকাছি এক হোটেলে। কিন্তু তাঁর রক্তচাপ বাড়িয়ে সিবিআই পিছনে লেগেই রয়েছে, কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তাঁর। লড়াই সেই প্রভাবশালী তত্ত্ব নিয়ে। আসলে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। মদন মিত্রও সেই ভয় করছেন। আগের বার ১৮ দিনের মাথায় জেলে যেতে হয়েছিল মদন মিত্রকে। এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সাবধানী প্রাক্তন এই মন্ত্রী।
এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে, মনের শক্তি সঞ্চয় করতেই তিনি গেলেন হনুমানজির মন্দিরে। আইনের গেরোয় জেল থেকে বেরিয়েও বাড়ি ফেরা হয়নি। আছেন এলগিন রোডের হোটেলে। রাস্তার উল্টোদিকেই হনুমান মন্দির। গোলমন্দির নামে এলাকায় পরিচিত। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মন্দিরে গিয়ে ভক্তিভরে পুজো দিলেন মদন মিত্র। কোনও কুণ্ঠা না করে সাধারণের লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিলেন। প্রায় ২০ মিনিট ছিলেন মন্দিরে। সঙ্গে হাতে গোনা ছ-সাত জন অনুগামী। প্রভাবশালীর তকমা ঝেড়ে ফেলতেই এই ভাবে হোটেলের বাইরে বের হলেন তিনি। পুজো দিয়ে বেরিয়েই রক্তবসন মদনবাবু খোলসা করে দিলেন, কেন তাঁর মন্দিরে আসা।
মন্দির থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, 'ঈশ্বরই আমার শক্তি। প্রকৃত প্রভাবশালী তো হনুমানজি। আমার বিরুদ্ধে একটা কথা উঠছে যে আমি প্রভাবশালী। কিন্তু আমি প্রভাবশালী নই, আমি অভাবশালী। অভাবশালী হয়ে এসেছি প্রকৃত প্রভাবশালীর কাছে প্রার্থনা জানাতে। প্রকৃত প্রভাবশালী হলেন হনুমানজি, রাধাকৃষ্ণ, মা কালী। আমি বলেছি, হে ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা কর। আমি দীন থেকে দীনতর, তৃণ থেকে তৃণতর, সাধারণ থেকে সাধরণতর।' এরপর তিনি আরও বলেন, সিবিআই বিশ্বর অন্যতম সেরা এজেন্সি। কোর্ট আর সিবিআই-এর কথা মেনে চলব।
এদিকে মদন মিত্র যখন মন্দিরে হনুমানজির কাছে প্রার্থনায় মগ্ন, তখন আদালতে গেল সিবিআই। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে গিয়ে মদন মিত্রর জামিনের নির্দেশের কপি-সহ অন্যান্য নথি নেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রেজিস্ট্রারের হস্তক্ষেপে নথি হাতে পেয়েই তাঁরা ছোটেন হাইকোর্টে। মঙ্গলবার দুপুরে মদন মিত্রর জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সিবিআই। বিচারপতি অসীম রায়ের এজলাসে এই মামলা যাওয়ার কথা।
বুধবার হাইকোর্টে মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন জানাবে সিবিআই। শুনানির দিন ঠিক হলে মদন মিত্রর জামিন খারিজের জন্য সওয়াল করতে আসবেন সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারুলু। সন্ধ্যাতে আদালতে পিটিশনের কপি নিয়ে ভবানীপুরের হোটেলে যান সিবিআই-এর আইনজীবীরা। সেখানে মদন অনুগামীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। সিবিআই প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনওমতেই কোর্ট নির্দেশ না দিলে ওই কপি গ্রহণ করা হবে না। তাই কপি না দিয়েই ফিরতে হয় তাঁদের। মদনবাবু ইন্টারকমে কথা বলেন সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে।