অর্ধনগ্ন হয়ে নারীসঙ্গে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি নিয়ে হইচই
নয়া বিতর্কে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক যুবতী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঋতব্রতর অর্ধনগ্ন ছবিও প্রকাশ করে দিয়েছেন অভিযোগকারিনী।
এ যেন দশচক্রে ভগবান ভুত! ছিল রুমাল হয়ে গেল বিড়াল গোছরের অবস্থা। একটা সময় সিপিএম-এর নবীন তাত্ত্বিক নেতা হিসাবে নাম কুড়িয়েছিলেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, ঋতব্রত-র ঘটনা ফের একবার বোঝাল 'প্রেমে তে মজিলে মন কি বা হাড়ি কি বা ডোম' হতেই পারে। না হলে এক তাত্ত্বিক নেতা যিনি নিজেকে মার্কসবাদীদের কঠোর অনুশাসনের অনুগামী বলেই ইমেজ খাড়া করতে চাইতেন, তাঁর যৌনজীবনের এমন কেচ্ছা প্রকাশ্যে চলে আসে!
কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং একটি নাম অজানা মেয়ের ছবি ভাইরাল হয়। ছবি-তে ক্য়াপশনও দেওয়া হয়েছিল যে নেদারল্যান্ডসে স্ত্রী-র সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছেন ঋতব্রত। কিন্তু, বাহাত্তর ঘণ্টা আগে সামনে এসেছে আসল তথ্য। কারণ, নেদারল্যান্ডসে ঋতব্রত-র পাশে থাকা যে মহিলা নিজেকে বহিস্কৃত সিপিএম সাংসদের স্ত্রী বলে দাবি করছিলেন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেআব্রু করে দিয়েছেন ঋতব্রত-র যৌন কেচ্ছার কথা।
নম্রতা দত্ত নামে এই যুবতীর দাবি, দিল্লির ফ্ল্যাটে ঋতব্রত তাঁর সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মোট উনিশবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এটা নাকি ছিল তাঁদের প্রথম যৌন সম্পর্ক স্থাপনের দিনের এক টুকরো ছবি। টুইটারে ফলাও করে সে কথাও লিখেছেন নম্রতা। তবে, নিছক যৌনতার কথা তুলতেই নম্রতা এই ধরনের পোস্টিং-এ ব্রত হননি বলেই দাবি করা হচ্ছে। কারণ, ঋতব্রতর সঙ্গে নম্রতা সম্পর্ক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে ঋতব্রত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ এনেছেন নম্রতা। কেন এটাকে 'ধর্ষণ' বলা হবে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অথচ, ঋতব্রত তাঁর সঙ্গে এখন কোনও যোগাযোগই রাখছেন না বলে অভিযোগ নম্রতার। সমস্ত যোগাযাগের মাধ্যমে ঋতব্রত তাঁকে ব্লক করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঋতব্রতর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কতটা ঘণিষ্ট তা বোঝাতে টুইটার এবং ফেসবুকে বেশকিছু ছবিও পোস্ট করেছেন নম্রতা। এর মধ্যে একটি ছবিতে অর্ধনগ্ন শরীরে ঋতব্রত জড়িয়ে ধরে আছেন নম্রতাকে।
এমনকী, বেশকিছু ছবিতে দু'জনকে ঘণিষ্টভাবে একে অপরের আলিঙ্গনাবদ্ধ হতেও দেখা যাচ্ছে।
টুইটারের একটি পোস্টে নম্রতা লিখেছেন, তাঁকে দুই বাচ্চার মা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঋতব্রত। ২০১৭-র ১৫ অক্টোবর নাকি ঋতব্রত তাঁকে বিয়ে করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। টুইটে তেমনই দাবি করেছেন নম্রতা।
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌন কেচ্ছা ফাঁস করতে গিয়ে আরও দুই নারীর কথা উল্লেখ করেছেন নম্রতা। এঁদের এক জনের নামে উরবা চৌধুরী এবং অন্যজন দুর্বা সেন। উরবা চৌধুরীকে ঋতব্রত-র প্রাক্তন স্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করেছেন নম্রতা। কিন্তু, দুর্বার জন্য টেনে এনেছেন 'প্রস্টিটিউট' জাতীয় শব্দ। নম্রতার দাবি, খোদ ঋতব্রতও নাকি দুর্বাকে 'প্রস্টিটিউট' বলতেন। ঋতব্রতর সঙ্গে উরবা এবং দুর্বার ভালোমতোই যোগাযোগ ছিল বলেও দাবি করেছেন নম্রতা। তাঁর আরও দাবি, এই দু'জনকে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু করতে পারবেন না বলেও নাকি ঋতব্রত জানিয়েছিলেন। টুইটারে তাঁর একের পর এক পোস্টে এমনই সব দাবি করে গিয়েছেন নম্রতা।
২০১৬ সালে শিলিগুড়িতে আইলিগের ডার্বি ম্যাচ থেকে শুরু হয়েছিল ঋতব্রত বিতর্ক। যার জেরে সিপিএম-এর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি একটি তদন্ত কমিটিও তৈরি করে। তদন্তকারী সেই কমিটির রিপোর্ট ঋতব্রত-র বিরুদ্ধেই গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। এরমধ্যে দলবিরোধী কাজ করায় ঋতব্রতকে বহিস্কারও করে সিপিএম। কিন্তু, সূত্রের যা খবর তাতে ঋতব্রত যে শুধু যে শো-অফ জীবন যাপনের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তা নয়, তাঁর বিরুদ্ধে আরও সব গুরুতর অভিযোগ ছিল এবং সেগুলি-র বহু তথ্য-প্রমাণও তদন্ত কমিটি পেয়েছে। যদিও, সিপিএম সেই সব তথ্য কিছুই এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনেনি। কিন্তু, নম্রতার খুল্লাম-খুল্লা অভিযোগে ঋতব্রত-র কেচ্ছা যে প্রকাশ্যে চলে এসেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মমতার পরিবর্তনের ডাকে ক্ষমতাচূত্য সিপিএম যে তরুণ তুর্কি নেতাকে 'মুখ' বানাতে চেয়েছিল, সেই নেতা যে তলে তলে কতবড় স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন তার প্রমাণ এখন আস্তে আস্তে সামনে আসছে।
ক্ষমতার অপব্যাবহারে একের পর এক নারীকে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিলেন ঋতব্রত। এমনটাই অভিযোগ নম্রতা দত্তর। তাঁদের সঙ্গে শুধু যোগাযোগ রাখা নয় তাঁদেরকে বিশেষ সম্পর্কও রাখতেন ঋতব্রত। টুইটার পোস্টে নম্রতার একের পর এক এমন অভিযোগ ঝড়ে পড়েছে।
নম্রতার টুইটার অ্যাকাউন্টে সামনে এসেছে 'দুষ্টু-মিষ্টি @ লাভ ঋতব্রত' নামে একটি অ্যাকাউন্ট। এই টুইটার অ্যাকাউন্টের মালিকের দাবি তিনি ঋতব্রত-র আইনী স্ত্রী। দেখা যাচ্ছে স্পেন নাম উল্লেখ থাকা এই অ্যাকাউন্টটি ২০১৭ সালের অক্টোবরেই খোলা হয়েছে।
যদিও, নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে সমস্ত অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ঋতব্রত। এমনকী, নম্রতার বিরুদ্ধে তিনি এফআইআর দায়ের করেছেন বলেও টুইটে উল্লেখ করেছেন। গরফা থানায় এই অভিযোগ দায়ের করেছেন ঋতব্রত এবং এফআইআর-এ তিনি দাবি করেছেন নম্রতা তাঁর কাছে লোনের সুপারিশ-এর জন্য এসেছিলেন। বালুরঘাটের এসবিআই শাখা থেকে সেই লোনের ব্যবস্থা নাকি তিনি করে দিয়েছিলেন।
Hard Facts. "Manufactured Lies" will be combatted. Will not succumb to "politically aided" threats. pic.twitter.com/yGRqzPbne5
— Ritabrata Banerjee (@RitabrataBanerj) October 9, 2017
এ দেশের রাজনীতিকদের জীবনে যৌনকেচ্ছার ঘটনা নতুন কিছু নয়। নেহরু জামানা থেকে এখনও পর্যন্ত একের পর এক তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যৌন কেচ্ছার কাহিনি জড়িয়েছে। ঋতব্রত-র ঘটনা এতে নয়াতম সংযোজন। তবে, সন্দেহ নেই রাজনীতিক হিসাবে দেশহৈতিষী সাজার আড়ালে যে চরম সত্য লুকিয়ে থাকে তা অত্যন্ত নির্মম। ঋতব্রত এই ঘটনা ফের একবার উস্কে দিচ্ছে মণীষা মুখোপাধ্যায় অন্তর্ধান রহস্যকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপিকা ১৯৯৭ সালে নিখোঁজ হন। আজও তাঁর খোঁজ মেলেনি। মণীষার অন্তর্ধানের সঙ্গে সিপিএম-এর তাবড় তাবড় রাজ্য নেতাদের নাম জড়িয়েছিল।