'স্কুলে না পাঠিয়ে সন্তান নিয়ে কি এবার ঘরে বসে থাকব!' কারমেলকাণ্ডে ভেসে উঠল প্রশ্ন
জিডি বিড়লার পর এবার কারমেল। স্বাভাবিকভাবেই স্কুল চত্বরে সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকরা। বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলে যে ভাবে যৌন নির্যাতনরে অভিযোগ সামনে আসছে তাতে অভিভাবকদের মনে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। অভিভাবকদের একটাই প্রশ্ন প্রচুর পরিমানে অর্থ নিয়ে সন্তানদের তাঁরা স্কুলগুলিতে ভর্তি করছেন। কিন্তু, স্কুল চত্বরে তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

[আরও পড়ুন:কারমেলকাণ্ডে পকসো আইনে গ্রেফতার শিক্ষক, থানায় অভিযোগ দায়ের বাবা-মা-র ]
মাস খানেক আগেই কলকাতা তোলপাড় হয়েছিল জি ডি বিড়লাকাণ্ডে। স্কুলের কেজি বিভাগের এক ছাত্রী উপরে বাথরুমের মধ্যে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ সামনে আসে। এতে অভিযোগের আঙুল ওঠে স্কুলের দুই গেমস শিক্ষকের দিকে। জিডি বিড়লায় কয়েক বছটর আগেই ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছিল স্কুল বাসের কন্ডাক্টর। প্রতিক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে এই সব বিকৃত যৌন অত্যাচারের নিশানা হচ্ছে একদম নিচু ক্লাসের মেয়েরা। যাদের বয়স ৪ থেকে ৯-এর মধ্যে।।
কারমেল দ্বিতীয় শ্রেণির যে ছাত্রীটি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ, তারও বয়স আটের নিচে। অভিভাবকদের অভিযোগ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সামনে এসেছে স্কুলের নিরাপত্তার ফাঁকের বিষয়টি। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবে তাহলে তো অভিভাবকদের চিন্তা করে করেই মাথা খারাপ করে ফেলা ছাড়া কোনও গতি নেই।
কারমেলকাণ্ডে এক অভিভাবক শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেই ফেলেন, 'জিডি বিড়লা হল এবার কারমেল। নামী স্কুলে ভর্তি করিয়েও যদি সন্তানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত না হয় তাহলে কী করব। স্কুলগুলি বলে দিক এসব চলবে। তাহলে এবার থেকে ছেলে-মেয়ে-কে নিয়ে ঘরেই বসে থাকবো!'
সন্দেহ নেই শহরের নামী স্কুলগুলিতে পিঠোপিঠী যৌন নির্যাতনের ঘটনা অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার বেশকিছু অভিভাবক অভিযোগ করেন যে, যৌন নির্যাতনের এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দেওয়ায় তাঁদেরকে কর্তৃপক্ষ হুমকিও দেয় এবং ওই সব পোস্ট ডিলিট করারও নির্দেশ দেয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষে উদাসীনতার ফিরিস্তি দিলে তা শেষ হওয়ার নয়। নতুন সেশন শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ ছাত্রীরই কোনও আইডেন্টিটি কার্ড নেই। এমনকী, স্কুলের অন্দরমহলে সিসিটিভি বসানো নেই। শুধুমাত্র স্কুলের বাইরে সিসিটিভি আছে। এই নিয়ে কারমেলের প্রাইমারি সেকশন-এ বহু দরবার করা হয়েছে। এতে কিছু লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ অভিভাবকদের।
আর একদল অভিভাবকের অভিযোগ, পড়ুয়াদের বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব-সময় আয়া থাকে না। ছোটদেরই নিজে নিজে সিড়ি ভেঙে বাথরুমে যেতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। কয়েক মাস আগে বাথরুমে গিয়ে আটকা পড়ে গিয়েছিল এক পড়ুয়া।
জিডি বিড়লাকাণ্ডের পর থেকেই মেয়েদের স্কুলে শুধুমাত্র মহিলা কর্মী রাখার পক্ষে সওয়াল শুরু হয়েছে। কারমেলকাণ্ডের পর এখন এই ইস্যুটিও সামনে এসেছে। অভিভাবকদের দাবি, মেয়েদের স্কুলে কেন পুরুষদের রাখা হবে ?
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এদিন এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, বারবার মেয়েদের স্কুলে এমন ঘটনা ঘটছে। রাজ্য সরকার গাইডলাইনও বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, স্কুলগুলি সেগুলি অনুসরণ করছে না। বারবার করে বলা হচ্ছে মেয়েদের স্কুলে পুরুষ কর্মী কেন থাকবে? তারসত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে মেয়েদের স্কুলে পুরুষ কর্মী রাখা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন:কারমেল স্কুলে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, অভিযুক্ত শিক্ষককে গণধোলাই, দেখুন ভিডিও ]