হালিম থেকে শীরমল - ইদের দিনে কলকাতায় রসনা তৃপ্তির হরেক আয়োজন
কলকাতায় ইদের দিনে যেসব খাওয়ার না খেলেই নয়।
গত একমাস ধরে রমজান মাসের রোজা রেখেছেন মুসলিমরা। এই পবিত্র মাস কিন্তু শুধুমাত্র কৃচ্ছ সাধনের মাধ্যমে ইসলামী দর্শন উপলব্ধির নয়, এই মাস উৎসবের, এই মাস নতুন জামা-কাপড় কেনা কাটার, আবার এই মাস দারুন লোভনীয় সব খাদ্যেরও। সারাদিন খাওয়ার গ্রহন না করলেও সন্ধার পর ইফতারের জন্য কিন্তু বিশেষ বিশেষ পদের আয়োজন করা হয়। গত একমাস শুধু মুসলিম বাড়িগুলিতেই নয়, কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেও রমজান মাসের জন্য বিশেষ পদের আয়োজন করা হয়েছে। ইদের খুশিতে আসুন দেখে নেওয়া যাক সেরকমই বিশেষ কিছু পদ।
হালিম
নয়
প্রকার
ডাল
ও
মাংসের
সমন্বয়ে
তৈরি
করা
হয়
এই
পদ।
ফলে
এই
খাদ্য
যে
প্রোটিনে
ভরপুর
থাকে
তা
বলাই
বাহুল্য।
হালিম
অবশ্যই
পরিবেশন
করতে
হয়
গরম
গরম।
স্বাদে
গন্ধে
এর
জুড়ি
মেলা
ভার।
তবে
এটি
রান্না
করে
রেখে
দেওয়া
যায়
না।
যে
কারণে
রেস্তোরাঁয়
খুব
বেশিক্ষণ
থাকে
না
পদটি।
প্রায়শই
ক্যারামেলে
ভেজানো
পেঁয়াজ
এবং
রসুনকুচি
দিয়ে
এই
পদটি
সাজানো
হয়।
খাদ্যরসিকদের
জন্য
এই
পদ
চেখে
দেখা
আবশ্যক!
কলকাতায়
আর্সালান,
সিরাজ,
থেকে
শুরু
করে
সব
ছোট
বড়
যে
কোনও
কাবাব
বিরিয়ানির
দোকানেই
হালিম
মেলে।
আর
বিফ
হালিম
খেতে
চাইলে
যেতে
হবে
জামজাম-এ।
মিঠা শীরমাল
এই রুটি অনেকটা নানের মতো দেখতে। তবে আকারে অনেকটাই বড় এবং মিষ্টি স্বাদের হয়। গোলাকার এই রুটিতে শুকনো ফল ভরা থাকে। সাধারণত দুধের সঙ্গে খাওয়া হয় মিঠা শীরমাল। রমজান মাসে নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিটে এই রুটির ছড়াছড়ি থাকে।
শাহি টুকরা
রুটি, দুধ এবং মিল্কমেড দিয়ে তৈরি হয় শাহি টুকরা। এই ক্যালোরি সম্বৃদ্ধ মিষ্টি রমজান মাসে অত্যন্ত জনপ্রিয়। জাকারিয়া স্ট্রিট তো আছেই জিশান ও অনেকগুলি মোগলাই রেস্তোরাঁতেও রমজান মাসে পাওয়া যায় শাহি টুকরা। তবে কলকাতায় শাহি টুকরার জন্য সবচেয়ে বেশি নাম রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেল-এর। চিৎপুরের এই রেস্তোরাঁয় অবশ্য এই মিষ্টি মেলে সারা বছরই।
আম-চিকেনের কাবাব ও সুতা কাবাব
এই দুধরণের কাবাব রমজান মাসেই করা হয়। আম-চিকেনের কাবাব, অর্থাৎ মুরগির মাংসের বড় বড় টুকরো আম দিয়ে রান্না করা হয়। আর সুতা কাবাব তৈরি হয় পাঁঠার মাংস বা ভেড়ার মাংস দিয়ে। সুতো দিয়ে মাংস শক্ত করে বেঁধে কাঠকয়লার আগুনে তৈরি করা হয় এই কাবাব। সুতো দিয়ে বাঁধার জন্যই এর নাম সুতা কাবাব, তা না বললেও বোঝা যায়। মাংস প্রেমিকদের এদুটি পদ অবশ্যই ভাল লাগবে। জাকারিয়া স্ট্রিটের পাশাপাশি অ্যাডাম্স কাবাব শপেও মেলে এই কাবাবগুলি।
শরবত
শরবত দিয়েই মুসলমানরা প্রতিদিন রোজা ভাঙেন। শরবত শুনে অনেকে ভাববেন এ আর নতুন কি! কিন্তু রমজানে প্রচলিত রুআফজা সিরাপের শরবত, বাদাম-দুধের শরবত, পুদিনা-সোডার শরবত বা শিকাঞ্জি ও পুদিনার শরবতের স্বাদই আলাদা। নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট তো আছেই নিউ মার্কেট এলাকার শরবতের দোকানগুলিতেও রমজান মাসে এই বিশেষ স্বাদের শরবতগুলি পাওয়া যায়।
খাজা-লাচ্ছা-সিওনাই
সাধারণত ময়দা, সেমাই ও ঘি এর তৈরি এই পদগুলি গরম দুধ ও চিনি মিশিয়ে খাওয়া হয়। এই অপূর্ব স্বাদের পদগুলি কলকাতা শহরের রমজান মাস জুড়ে বিভিন্ন স্টলে বিক্রি হয়। একবার চেখে দেখলে অনেকে পায়েসও ভুলে যাবেন। জাকারিয়া স্ট্রীট ছাড়াও নিউ মার্কেট, এন্টালি মার্কেট, খিদিরপুর শহরের বিভিন্ন জায়গাতেই মিলবে এগুলি।
পেঁয়াজ বা ডালের পকোড়া
ইফতারের ভোজে পেঁয়াজ বা ডালের তৈরি এই পকোড়াগুলি আবশ্যক। ফুটন্ত তেলে ভাজা এই পকোড়া স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে প্রথম দর্শনে ভাল নাই লাগতে পারে। কিন্তু ভুললে চলবে না, এটা উৎসবের সময়। এসময় একটু আধটু অনিয়ম করাটাই নিয়ম। রমজানে কলকাতার সর্বত্রই এই পকোড়া মেলে।
মিক্সড ফ্রুট চাট
যদি স্বাস্থ্য রাখতেই হয় তবে ট্রাই করুন টুকরি ভরা এই হরেক ফল। রমজানে সারাদিন রোজা রেখে শরীরে জলের অভাব হয়, তা মেটাতে এর চেয়ে ভাল খাদ্য হয় না। কলা, তরমুজ, খেজুর, আম - এসময়ে যা যা ফল পাওয়া যায় সবই থাকে এই মিক্সড ফ্রুট চাটে। রমজান মাসে নিউ মার্কেট, পার্ক সার্কাস বা জাকারিয়া স্ট্রিট -এ এই ফলের চাটের বিক্রিই সবচেয়ে বেশি থাকে।
চিকেন ফ্রাই বা ফিস ফ্রাই
চিকেন বা ফিস ফ্রাই বাঙালীর পাতে নতুন নয়। কিন্তু রমজানের বিশেষ ফ্রাইগুলি কিন্তু প্রচলিত ফ্রাইয়ের থেকে আলাদা। তুর্কি বা লেবানিজ মশলায় ম্যারিনেট করা থাকে ফ্রাইয়ের পিসগুলি। অর্ডার দিলে গরম গরম ভেজে দেওয়া হয়। রমজানে এই ফ্রাইগুলি কিলো দরে বিক্রি হয়। ফলে বেশ সস্তায় মেলে এগুলি।জাকারিয়া স্ট্রীটের তাশকিন বা দিল্লি ৬ রেস্তোরাঁ এবং পার্ক সার্কাসের বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেই রমজানে এই বিশেষ ফ্রাইগুলি পাওয়া যায়।
ফিরনি
এই তালিকার বেশিরভাগ পদের উৎস মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। ফিরনি কিন্তু একান্তভাবেই ভারতীয় পদ। দুধ, চালের গুঁড়ো ও চিনির মিশ্রনে এই অপূর্ব স্বাদের মিস্টি পদ তৈরি করা হয়। সারা বছরই কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ফিরনি পাওয়া গেলেও রমজানে এর আলাদা কদর আছে। আরসালান, রয়্যাল, আমিনিয়া ও জাকারিয়া স্ট্রীটের বিভিন্ন দোকানের ফিরনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।