একের পর এক দুর্ঘটনা, উৎসবের মৌসুম নাকি অভিশাপ! দেখুন মর্মান্তিক ছয় ছবি
৩ টি অগ্নিকাণ্ড, ১টি সেতু ধসে পড়া, ১ টি ট্রেন দুর্ঘটনা এবং এখন পদপিস্ট হওয়ার ঘটনা - এই বছর উৎসব যেন কলকাতায় অভিশাপ হয়ে এল।
পুজোর উৎসবের রেশ এখনও কাটেনি। আগামী কাল লক্ষ্মীপূজো, আর আজ ছিল কলকাতায় জমজমাট পূজা কার্নিভাল। আর তার মধ্যেই ঘটো গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সাঁতরাগাছি স্টেশনে একই সঙ্গে তিনটি ট্রেন আসায় যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল দুই যাত্রীর, জখম অন্তত ২০ জন।
তবে শুধু এদিনের দুর্ঘটনাই নয়, এবারের পুজোর মৌসুমে যেন অভিশাপ লেগেছে। ঘটেছে একের পর এক দুর্ঘটনা। কোনটি পূজোর আগে, কোনটি আবার পূজোর দিনেই। কখনও ব্রিজ ভেঙে পড়েছে, কখনও বা ঘটেছে রেল দুর্ঘটনা। রয়েছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও।
ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট ব্রিজ, ৪ সেপ্টেম্বর
পূজোর বাকি ছিল ঠিক একমাস। কলকাতায় মানুষ আস্তে আস্তে উৎসবের মেজাজে পৌঁছচ্ছিলেন। সেই সময়ই বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে কলকাতার অন্য়ান্য সঙ্গে বেহালার সংযোগকারী মাঝেরহাট ব্রিজ। সেই সময় ব্রিজের উপরে বেশ কিছু যানবাহন থছিল, ব্রিজের নিচেও ছিল বাস, গাড়ি, পথচলতি মানুষ। হব্রিদের নিচে চাপা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়, গুরুতর আহত হন অন্তত আরও ২৫ জন।
বাগড়ি মার্কেটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, ১৬ সেপ্টেম্বর
মাঝেরহাট ব্রিজের দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কলকাতা সাক্ষী হয়েছিল বাগড়ি মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের। যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেয়েছিল দমকল বিভাগ। রাতের অন্ধকারে আগুন লেগেছিল প্রায় দিনতিনেকের চেষ্টায় আগুন নেভানো গিয়েছিল। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পুজোর কথা মাথায় রেখে প্রচুর জিনিসপত্র মজুত করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেইসবের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
আমরির স্মৃতি ফিরিয়ে মেডিক্যাল কলেজে আগুন, ৩ অক্টোবর
সাতসকালে আগুন লাগে মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে থাকা ওষুধের দোকান থেকে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। কিন্তু বছর কয়েক আগে আরি হাসপাতালের মর্মান্তিক স্মৃতি মানুষের মনে ফিরে এসে এই অগ্নিকাণ্ডে হাসপাতাল চত্ত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিলে। মেডিক্যাল কলেজের সামনে থাকা অটোওয়ালা, সাধারণ মানুষ ও হোস্টেলের ছাত্ররা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরাপদে রোগিদের বাইরে বের করে এনেছিলেন।
লাইনচ্যুত নিউ দিল্লি-মালদা নিউ ফরাক্কা এক্সপ্রেস, ১০ অক্টোবর
উত্তর প্রদেশের রায়বরেলির কাছে লাইনচ্যুত হয়ে যায় নিউ দিল্লি-মালদা নিউ ফরাক্কা এক্সপ্রেস। সকাল ছটা পাঁচ নাগাদ ঘটা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়। আরও ২১ জনের মতো গুরুতর আহত হন।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ট্যাংরার প্লাস্টিক কারখানায় আগুন, ১৫ অক্টোবর
একেবারে বোধনের সন্ধ্যাতেই ট্যাংরার পুলিশ স্টেশন সংলগ্ন ৭০ ডিসি দে রোডের একটি প্লাস্টিক কারখানা আগুন লেগে যায়। ওই কারখানাটি প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিকের জিনিস মজুত থাকায় নিমেষেই সেই আগুন বৃহদাকার নেয়। প্রথমে দমকলের ৫টি ইঞ্জিন পাঠিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। পরে আরও ১০টি ইঞ্জিন পাঠাতে হয়। পূজোর জন্য কারখানায় ছুটি ছিল, তাই কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
সাঁতড়াগাছিতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, ২৩ অক্টোবর
লক্ষ্মীপূজোর ঠিক আগের দিন আরও একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী হল শহর। সাঁতরাগাছি স্টেশনের এক, দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে একইসঙ্গে সাঁতরাগাছি-চেন্নাই, শালিমার-বিশাখাপত্তনম ও শালিমার-দিঘা ট্রেন এসে পড়ে। ফলে তিন ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যেই ট্রেন ধরার তাড়া লেগে যায়। ফুটব্রিজে লেগে যায় হুড়োহুড়ি। বেশ কয়েকজন যাত্রী ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হন। গুরুতর জখম অবস্থায় যাত্রীদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আপাতত ১৩ জন ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে ২ শিশু ও ১ মহিলাও রয়েছেন।