জিএস থাকাকালীনই জয়পুরিয়ায় তোলাবাজি শুরু করেছিলেন তিতান, ছিল ভূয়ো শংসাপত্রে ভর্তিও
২০১১ সালে যখন তিতান সাহা প্রথম ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তখন থেকেই জয়পুরিয়া কলেজে ভর্তির জন্য তোলাবাজি চলছে।
গতকালই জয়পুরিয়া কলেজে ভর্তি নিয়ে তোলাবাজি করার অভিযোগে প্রেপ্তার হয়েছেন কলেজের প্রাক্তন জিএস তিতান সাহা। কিন্তু জানা যাচ্ছে নতুন নয় টাকা নিয়ে ভর্তির এই চক্র দীর্ঘদিন ধরেই চলছে জয়পুরিয়া কলেজে। এই চক্রের প্রতিবাদ করায় নাকি প্রাক্তন এক ছাত্রনেতাকে পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। এর সঙ্গে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে ভর্তি করানোর অভিযোগও রয়েছে। এনিয়ে একসময় উচ্চশিক্ষা দপ্তর শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগও করেছিল। অবশ্য সেই তদন্তের কোনও গতি হয়নি।
২০১১ সালে এই কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতা বদল হয়। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন এসএফআই-কে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সম্পাদক হয়েছিলেন ধীরাজ সোনকার। কিন্তু অভিযোগ এরপরই তিতান সাহা ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে। সেই শুরু টাকা নিয়ে ভর্তি। এর প্রতিবাদ করায় ধীরাজকে জিএস পদ থেকে সরিয়ে দেয় তিতান-গোষ্ঠী। এরপর আর কোনও বাধা ছিল না। সাধারণ সম্পাদক হয় তিতান।
অভিযোগ তিতান জিএস হওয়ার পর থেকেই তফশিলি জাতি-উপজাতি কোটা, খেলোয়াড় কোটার মতো সংরক্ষিত আসনে ভর্তির জন্য জাল সার্টিফিকেট বানানো শুরু হয়। মোটা টাকার বিনিময়ে ওই জাল শংসাপত্র দিয়েই ভর্তি করা হত ছাত্রদের। বিষয়টি নিয়ে আরটিআই করেন ধীরাজ। উচ্চশিক্ষা দপ্তরে চিঠি দিয়ে জাল সার্টিফিকেটের বিষয়েও জানিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট অভিুয়োগ করেছিলেন তিতান সাহা, সুদীপ সাহা, সৌম্যদীপ ভকত, রেশমা সেন, সুমন বিশ্বাস, আকাশ দে, অর্কপ্রভ চ্যাটার্জি-দের মতো কিছু প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রীর নামে। জানিয়েছিলেন কিছু টিচিং এবং নন-টিচিং স্টাফও এতে জড়িত।
২০১৫ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ জাল নথির বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগে ১৬ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করে। বিষয়টি পৌঁছেছিল মহকুমাশাসক পর্যায়েও। এডিও অফিস শংসাপত্রগুলি জাল ষোষণা করার পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য উচ্চশিক্ষা দপ্তর। দপ্তরের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে বলা হয়, জাল নথি দিয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে থানায় অভিযোগ জানাতে। জানা গিয়েছে কলেজ সেইমতোই পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু সেই তদন্তের কোনও খোঁজ খবর নেই। কেউ জানেন না তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, বা আদৌ তা শুরু হয়েছিল কিনা।
তবে যে প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে তা হল এই কুকর্ম কী তিতান সাহা-রা নিজেদের উদ্যোগেই চালাচ্ছিল? নাকি তাদের পেছনে কোনও বড় নাম আছে? কানাঘুষোয় কিন্তু উত্তর কলকাতার এক মন্ত্রীর কথা শোনা যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে তাঁর আশীর্বাদেই এতদিন পুলিশ তিতানদের টিকিটিও ছুঁত না।