সাম্যবাদ রাজনীতির এক লড়াকু সৈনিক ছিলেন সোমনাথ, মানতেন না রাজনৈতিক ভেদাভেদ
চলে গেলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আইনজীবী হিসেবে। পরবর্তীকালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। যোগ দেন সিপিআইএম-এ। মোট ১০ বার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন লোকসভায় দলের নেতার দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালে সিপিআইএম সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিলেও তিনি লোকসভার স্পিকার পদ ছাড়তে না চাওয়ায় দল থেকে বিতাড়িতও হন।

জন্ম, পরিবার ও শিক্ষাজীবন
১৯২৯ সালের ২৫ জুলাই আসামের তেজপুরে জন্মগ্রহণ করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বাবা নির্মল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবি। সেই সঙ্গে হিন্দু ধর্মের সংস্কারকও বটে। যদিও দুজনের রাজনৈতিক মতাদর্শে তফাত ছিল, তবুও কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টিকে যখন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দলের নেতাদের যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন নির্মল চন্দ্র তাঁদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে স্কুলের পড়া শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর কেমব্রিজের জেসাস কলেজ থেকে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন, এবং দেশে ফিরে এসে কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিশ শুরু করেছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন
১৯৬৮ থেকে ২০০৮ টানা ৪০ বছর তিনি সিপিআইএম দলের সদস্য ছিলেন। প্রথমবার অবশ্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সিপিআইএম-এর সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই। ১৯৭১ সালে তাঁর বাবার মৃত্যুতে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন সোমনাথ। তারপর থেকে তিনি ৯ বার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে একবার মাত্র যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি লোকসভায় সিপিআইএমের নেতা ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হন।

সিপিআইএম থেকে বিতাড়ন
২০০৮ সালে ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় সিপিআইএম। সেসময় দল তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিল স্পিকার পদে পদত্যাগ করার জন্য। কিন্তু স্পিকার একটি সাংবিধানিক পদ, এই যুক্তিতে তিনি পদত্যাগ করতে অসম্মত হন। অবশেষে ২০০৮ সালেৎ ২৩ জুলাই সিপিআইএমের পলিট ব্যুরো সিদ্ধান্ত নেয় তাঁকে বিতাড়িত করার। তবে তারপরেও দলের বিভিন্ন নেতা ও কর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর। দলের বিরুদ্ধে কোনও বিরূপ মন্তব্যও করেননি।

বিতর্ক ও পুরষ্কার
ব্যক্তি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দল মত নির্বিশেষে শ্রদ্ধা করতেন সাংসদরা। তবে ২০০৫ সালে ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় আস্থাভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের সমালোচনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। আদালতের নির্দেশ সমর্থন করে বিজেপি তাঁর কড়া সমালোচনা করেছিল। ১৯৯৬ সালে সোমনাথ আউটস্ট্যান্ডিং পার্লামেন্টারিয়ানের পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন
১৯৫০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সোমনাথের বিয়ে হ লালগোলার জমিদার বংশের রেনু চ্যাটার্জীর সঙ্গে। তাঁদের এক পুত্র, প্রতাপ ও দুই কন্যা অনুরাধা ও অনুশিলা। প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়ও বাবার মতোই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।