গৌতম পালা সাঙ্গ হতেই এবার শুভ্রাকে নিয়ে পড়ল ইডি, রোজভ্যালিকাণ্ডে আটক হিরে-সোনা
প্রায় ২৭ ঘণ্টা ধরে এই তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ২৮তারিখ বিকেলে দফতরে ফেরেন ইডি-র অফিসাররা। রোজভ্য়ালির শাখা সংস্থা হিসাবে পরিচিত অদ্রিজায় ২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে তল্লাশি শুরু হয়েছিল।
বর্ষশেষে খেল দেখিয়ে দিল ইডি। চিটফান্ডকাণ্ড নিয়ে যখন কেন্দ্রীয় সরকারির সমানে অভিযোগ উঠছে। সিবিআই থেকে ইডি-সকলের বিরুদ্ধে চিটফান্ড তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ এনেছে সিপিএম থেকে শুরু করে প্রদেশ কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে আচমকাই রোজভ্যালিকাণ্ডে সাতাশ ডিসেম্বর কলকাতা শহরজুড়ে তল্লাশি অভিযানে নামে ইডি।
প্রায় ২৭ ঘণ্টা ধরে এই তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ২৮তারিখ বিকেলে দফতরে ফেরেন ইডি-র অফিসাররা। রোজভ্য়ালির শাখা সংস্থা হিসাবে পরিচিত অদ্রিজায় ২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে তল্লাশি শুরু হয়েছিল। বাগুইআটির রঘুনাথপুরের অদ্রিজার মূল শো-রুম-সহ হাওড়া এবং লেক মলের শো-রুমে-ও তল্লাশি চলে। ২৮ তারিখ বিকেলে যখন ইডি-র আধিকারিকরা তিনটি শো-রুম থেকে বেরিয়ে আসেন তখন তাদের কাছে একাধিক নথিপত্র এবং ৩৬টি ছোট-ছোট স্টিলের বক্সে ভর্তি হিরে আর সোনার গয়না। যার আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা।
বহুদিন ধরেই বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য ইডি-র হাতে এসেছিল। তারা জেনেছিল প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার সময় রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু তাঁর বেআইনি আর্থিক লেনদেনকারী সংস্থার তহবিলের বেশকিছু পরিমাণ অর্থ আদ্রিজায় সরানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। এই অর্থের পরিমাণ কম করেও কয়েক শ'-কোটি টাকা।
এমনকী, রোজভ্যালি বেআইনিভাবে বাজার থেকে তোলা অর্থ অন্যত্র সরাতেই অদ্রিজা- ব্র্যান্ডকে সামনে রেখে হিরে ও সোনার ব্যবসায় নেমেছিল বলেও ইডি সূত্রে খবর। আর এর জন্য অদ্রিজার নাম সেসময় প্রচুর পরিমাণ অর্থ রোজভ্য়ালি থেকে সরানো হয়।
ইডি সূত্রে খবর, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর অদ্রিজায় তল্লাশি অভিযানে যে কাগজপত্র এবং হিরে ও সোনার গয়না আটক করা হয়েছে তার সঙ্গে রোজভ্য়ালির থেকে পাচার হওয়া অর্থের সম্পর্ক আছে। সেই কারণে এই সব কাগজ-পত্র এবং ৫০ কোটি টাকা মূল্যের হিরে ও সোনা আটক করা হয়েছে।
অদ্রিজার তিনটি শো-রুমে এখনও বেশকিছু হিরে ও সোনার গয়না আছে। তাহলে সেগুলি আটক করা হল না কেন? ইডি সূত্রে খবর ওই সব হিরে ও গয়না যে অর্থে কেনা হয়েছে তার সঙ্গে এখনও বেআইনি অর্থ লেনদেনের কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তবে, মাত্র দু'দিনের মধ্যে অদ্রিজার তিনটি শো-রুম-এ মজুত থাকা হিরে ও সোনার গয়নার সঙ্গে বেআইনি আর্থিক লেনদেনেটর সম্পর্ককে প্রমাণ করা কঠিন। তাই আপাতত শো-রুমগুলি থেকে আটক করা কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে চাইছে ইডি।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনে গৌতম কুণ্ডুর প্রাক্তন স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডুকে জেরা করা হতে পারে। সেই সঙ্গে জেরা করা হতে পারে অদ্রিজা-র এক কর্তী নীতা চৌধুরীকে। যদিও, শুভ্রা দাবি করেছেন, আদ্রিজায় রোজভ্যালির অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা মিথ্যা। এই সংস্থার সঙ্গে রোজভ্যালির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন শুভ্রা।
রোজভ্যালিকাণ্ডে ধৃত গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী ছিলেন শুভ্রা। তবে, এখন জোর খবর গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে শুভ্রার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ইডি-র একটা সূত্রের দাবি, গৌতম ও শুভ্রার বিবাহ বিচ্ছেদ একটা নাটক। ইডি ও সিবিআই-এর চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। রোজভ্যালি-র ছাতার তলায় অদ্রিজা তৈরি হলেও পরে তা শুভ্রা কুণ্ডুর নামে করে দেন গৌতম কুণ্ডু।
বছর খানেক আগে শুভ্রা কুণ্ডুর সঙ্গে ইডি-র কর্তা মনোজ কুমারের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে ফাঁস হয়। মনোজ অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, দিল্লির একটি হোটেলে একই রুমে মনোজ ও শুভ্রার একসঙ্গে থাকার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এর জেরে মনোজ কুমারকে আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে। মনোজ ও শুভ্রা এপিসোডের পর থেকেই ইডি-র তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তবে, ২০১৭-র শেষ লগ্নে ইডি-র এই তল্লাশির ধাক্কা বুঝিয়ে দিল গৌতমের পর এবার তাঁর প্রাক্তন গৃহিনীকে তদন্তের স্ক্যানারের তলায় ফেলা হচ্ছে।