ঠনঠনিয়ার লাহা পরিবারে দুর্গা দশভূজা নন, দুর্গা বসেন স্বামী শিবের কোলে
পুজোর শুরু চুঁচুড়ায় ২৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে। কলকাতায় আসার পর এখানকার বাড়িতে পুজোর সূচনা ১৮৫৬ সালে। পুজোয় কোনও পশুবলি হয় না। পুজোর অন্যতম আকর্ষণ সন্ধিপুজো।
ঠনঠনিয়া নামটি উঠে আসলেই চলে আসে ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরের কথা। এই ঠনঠনিয়াতেই রয়েছে লাহা বংশের সব প্রাসাদ। ২ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট( বিধান সরণি)-এর বাড়িটিই সম্ভবত এই অঞ্চলের প্রথম লাহা বাড়ি। এছাড়াও ২৩৩ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট, বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট, ৭১ কৈলাশ বসু স্ট্রিট এবং ৫০এবি কৈলাশ বসু স্ট্রিটেও রয়েছে লাহাদের বাড়ি।
[আরও পড়ুন:'ভোগ থেকে বরণ' -এ সবাইকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বেঙ্গালুরুর বানেরঘাটা পুজো ফাউন্ডেশন]
চুঁচুড়া থেকে বাবা রাজীবলোচনের সঙ্গে কলকাতায় এসে প্রাণকৃষ্ণ লাহা কলুটোলা স্ট্রিটে বাড়ি কেনেন। প্রাণকৃষ্ণ কলকাতায় এসে সুপ্রিমকোর্টের অ্যাটর্নি হাওয়ার্ডের অফিসে হেড রাইটারের চাকরি নেন। সঙ্গে নুন, আফিম, রেশমের কাপড়সহ বিভিন্ন রকমের ব্যবসা শুরু করেন। আফিমের ব্যবসায় ফুলে-ফেঁপে ওঠেন প্রাণকৃষ্ণ। ১৭ টি বিদেশি কোম্পানি হস্তগত হয় তাঁর। আবার ব্যবসায় বিপর্যয়ও ঘটে ১৮৪৭ সালে। সেই বছরেই প্রাণকৃষ্ণ অষ্টধাতুর দেবী মূর্তি পান। যার নাম জয় জয় মা। আজও লাহাবাড়ির পুজোতে এই জয় জয় মায়ের নামেই পুজো হয়।
প্রাণকৃষ্ণের
অবর্তমানে
তাঁর
তিন
ছেলে
দুর্গাচরণ,
শ্যামাচরণ
এবং
জয়গোবিন্দের
মধ্যে
সম্পত্তির
ভাগাভাগি
হয়।
তবে পুজোটি কে শুরু করেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন রাজীবলোচন, কেউ বা বলেন তাঁর পুত্র প্রাণকৃষ্ণ, কেউ বা বলেন তাঁর পুত্র দুর্গাচরণ।
মহিষাসুরমর্দিনী নন, লাহা পরিবারে দেবী দুর্গা পূজিত হন জগজ্জননী হিসেবে। কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর ২-৩ দিন পর। কাঠামোর মধ্য়ে একটি ছোট্ট মাটির গণেশকে পুজো করা হয়। পরে যখন বড় গণেশ তৈরি হয়, তখন ছোট্ট গণেশটিকে বড় গণেশের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
সাবেকি একচালার প্রতিমা। তবে দুর্গা এখানে দশভূজা নন। দুর্গা বসেন স্বামী শিবের কোলে। পুজোর কদিন অষ্টধাতুর জয় জয় মা-ও পূজিত হন ঠাকুর দালানে। পুজোর পর তাঁকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঠাকুর ঘরে।
নিরঞ্জনের সময় দেবী কাঁধে নয়, নিয়ে যাওয়া হয় দড়িতে ঝুলিয়ে।