রামকৃষ্ণের স্মৃতি-বিজড়িত দুর্গাপুজো রানি রাসমণির বাড়িতে
১৭৯৪ তে পুজোর সূচনা করেছিলেন রাসমণির শ্বশুর প্রীতিরাম মাড়। মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে অর্থাৎ রানি রাসমণির স্বামী এই পুজোর সমস্ত দায়িত্ব সামলাতেন। ১৮৩৭ থেকে রানি রাসমণি পুজোর দায়িত্ব নেন।
কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে রানি রাসমণির বাড়ির পুজো অন্যতম প্রাচীন পুজো। জানবাজারের এই প্রাচীন দুর্গাপুজোটি 'রানি রাসমণির পুজো' নামে অধিক পরিচিত হলেও, ১৭৯৪ তে পুজোর সূচনা করেছিলেন রাসমণির শ্বশুর কৈবত্য সম্প্রদায় ভুক্ত প্রীতিরাম মাড়। জানবাজারের বাড়িটি ছাড়াও কলকাতার বেলেঘাটা, ভবানীপুর, ট্যাংরা অঞ্চলে তাঁর বাড়ি ছিল। জমিদারি ছিল সাবেক পূর্ববঙ্গেও।
[আরও পড়ুন:গব্যথোড় আর কুঁড়োর নৈবেদ্যই আজও দীনদুখিনী টুকির মায়ের পুজোর প্রধান উপাচার ]
প্রীতিরামের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে অর্থাৎ রানি রাসমণির স্বামী এই পুজোর সমস্ত দায়িত্ব সামলাতেন। এরপর ১৮৩৭ থেকে রানি রাসমণি পুজোর সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে প্রীতিরামের তৈরি পাঁচ খিলান ও দুদালান বিশিষ্ট ঠাকুরদালানের বাইরের দালানের অলংকরণ এখনও দেখা যায়। প্রীতিরাম মাড়ের পুজোটি হয় বর্তমান ১৩ রানি রাসমণি রোডের বাড়িতে।
এখানকার প্রতিমার মুখ কোনও ছাঁচে ফেলা হয় না। মাটির তাল কুমোরের আঙুলের দক্ষতায় মুখের আদল পায়। সাবেকি একচালা শোলার সাজের বাংলা শৈলীর মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। পুজোটি অনেক পুরনো হলেও, সিংহের আকৃতি আধুনিক রূপের সিংহের মতো। সম্ভবত পরবর্তী কালে কোনও গৃহকর্তার ইচ্ছায় সিংহের মুখের পরিবর্তন হয়েছে।
আশ্বিনের শুক্ল প্রতিপদে পুজো শুরু হয়। ওই দিনই হয় মায়ের বোধন। ১০ দিন দরে পুজো চলে জানবাজারের এই বাড়িতে। আগে এই বাড়িতে ৪০ মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হত। এখন তা এক-দেড় মণে এসে দাঁড়িয়েছে। রানি রাসমণির পুজোর বিশেষত্ব হল, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারী পুজো হয়। একসময় এই পুজোয় পশুবলীর চল ছিল। তবে তা এখন বন্ধ। এখন চাল কুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ বেশ কয়েকবার এই পুজোতে উপস্থিত থেকেছেন। পরবর্তীকালে পুজোটি বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়।