কলকাতার করোনা আক্রান্তদের শরীরে অস্বাভাবিক উপসর্গের দেখা মিলছে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
কলকাতার করোনা আক্রান্তদের শরীরে অস্বাভাবিক উপসর্গের দেখা মিলছে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে করোনার উপসর্গের তালিকা। গত ১২ই জুন কোভিড-১৯-এর উপসর্গের তালিকায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যোগ করেছে পেশীতে ব্যাথা, ডায়রিয়া এবং স্বাদ ও গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা হারানোর মত লক্ষণ। সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমন নতুন প্রকারের উপসর্গ অধিক সংখ্যায় দেখা দিচ্ছে কলকাতায়। ফলত কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছে চিকিৎসকদের।
নতুন উপসর্গের জেরে বাড়ছে ধন্দ
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এমনতর উপসর্গ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও দু'জন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী এবং বিহারের একজন বাসিন্দা ইতিমধ্যেই কলকাতার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ছাড়া পেয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, "শ্বাসকষ্টজনিত কোনোরকম উপসর্গ তাদের ছিল না, তিনজনের মধ্যে একজনের জ্বরও আসেনি। তবে তিনজনই ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন, একজন স্বাদ ও গন্ধের ক্ষমতা হারিয়েছিলেন এবং একজনের সামান্য শ্বাসকষ্ট ছিল।" ফলত এটা অন্তত পরিষ্কার যে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নতুন উপসর্গের তালিকায় বিভ্রান্তি বাড়ছে বই কমছে না।
"ঔপসর্গিক রোগীদের মাত্র ৩%-এর ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়"
এএমআরআই(সল্টলেক)-এর চিকিৎসক দেবাশীষ সাহা জানিয়েছেন, "ঔপসর্গিক রোগীদের মাত্র ৩%-এর ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। এঁদের প্রধান উপসর্গ হয় কাঁপুনি, কফ বা শ্বাসকষ্ট। কিন্তু ডায়রিয়া, বমি বা চামড়ায় ক্ষত কোভিড-১৯-এর আনুষঙ্গিক উপসর্গ হতে পারে বা অন্যান্য কারণেও হতে পারে। ফলত সঠিক উপসর্গ চিহ্নিত করাটা চিকিৎসকদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।" প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতায় ৫৫ বছর বয়সী বিহারনিবাসী ভদ্রমহিলা করোনা পজিটিভ বলে ধরা পড়লেও শুকনো কফ ছাড়া তাঁর আর কোনো করোনার উপসর্গ দেখা যায়নি। এদিকে ঘ্রাণশক্তি হারানো ও ডায়রিয়ার মত উপসর্গ দেখা যায় তাঁর মধ্যে। ফলত ধন্দে চিকিৎসকরা।
শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার নির্ভর করছে উপসর্গ কেমন হবে
কলকাতার এক হাসপাতালের সুপার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে জানা যায় যে তিনি করোনা পজিটিভ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শুকনো কফ ও সামান্য জ্বর ছিল এবং এক সপ্তাহেই তিনি সেরে ওঠেন। এএমআরআইয়ের দেবাশিষ সাহা জানান, "কিছু কিছু গুরুতর কেসে, করোনা আক্রান্তের সেরিব্রাল স্ট্রোক বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার মত ঘটনা ঘটেছে। ফলে এটা অন্তত স্পষ্ট যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, তার উপর নির্ভর করছে ভাইরাস কেমন উপসর্গের প্রকাশ ঘটাবে।"
উপসর্গ ও চিকিৎসা নিয়ে নানা মত চিকিৎসকমহলে
বেলভিউয়ের চিকিৎসক রাহুল জৈন জানিয়েছেন, "বর্তমানে করোনা রোগীদের মধ্যে অন্ত্রাশয়ে সমস্যা, তলপেটে ব্যথা, নাকবন্ধ, বমি ও ডায়রিয়ার মত উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।" তিনি আরও জানান, "শ্বাসকষ্ট ছাড়াও নাকবন্ধের মত উপসর্গ করোনা রোগীর মধ্যে নাও দেখা দিতে পারে। তবে নাক বন্ধ না হয়েই যদি ঘ্রাণশক্তির অবলুপ্তি লক্ষ্য করা যায়, তবে তা করোনার উপসর্গ হতে পারে।" কিছু চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রত্যহ নিয়ম করে চেকআপ করলে তবেই ধরা পড়বে করোনা। দেবাশীষ সাহা জানিয়েছেন, "বিপুল সংখ্যক রোগীর উপসর্গহীন, তাই 'কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং'-এর মাধ্যমে রোগ নির্ধারণ প্রয়োজন। তাছাড়া মগজ ও হৃদপিণ্ডের কোষগুলির সাথে করোনার স্পাইক প্রোটিনের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা অধিক, তাই মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়টিও।"
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর কানওয়ার যাত্রা বাতিল করা হল