তোমাদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন আছে, ব্যবস্থা নেব, পড়ুয়াদের বললেন রাজ্যপাল
বহুদিন এমন স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল দেখেনি কলকাতা। টিপটিপ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মহানগরীর রাস্তায় হাঁটলেন অসংখ্য মানুষ। শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই নন, কলকাতার বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই মহামিছিলে পা মিলিয়েছেন। বহু বিশিষ্ট মানুষকে হাঁটতে দেখা গিয়েছে এই মিছিলে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে এতটাই স্পর্শ করেছে যে, তিনি নৈতিকভাবে একে সমর্থন করেছেন। বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের দাবি খতিয়ে দেখে শীঘ্রই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
আরও
পড়ুন:
যাদবপুর-কাণ্ডের
ঢেউ
মুম্বই,
দিল্লি,
ব্যাঙ্গালোরে,
পথে
নামলেন
পড়ুয়ারা
আরও
পড়ুন:
তিলকে
তাল
করা
হচ্ছে,
যাদবপুরের
নাম
না
করেই
বললেন
মমতা
আরও
পড়ুন:
পুলিশ
মারেনি,
সাফাই
কমিশনারের!
উনি
'তৃণমূলের
ক্যাডার,
চাটুকার',
পাল্টা
বিরোধীদের
আরও
পড়ুন:
যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ে
হিটলারি
কায়দায়
পুলিশি
হামলা,
আলো
নিভিয়ে
শ্লীলতাহানি
গত মঙ্গলবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে আজকের মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়। দুপুর দু'টোয় নন্দন চত্বর থেকে রাজভবনের উদ্দেশে শুরু হয় মিছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, গুরুদাস কলেজ, আশুতোষ কলেজ, মৌলানা আজাদ কলেজ, ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি, দীনবন্ধু অ্যান্ডুজ কলেজ ইত্যাদি জায়গা থেকে ভিড় জমান ছাত্রছাত্রীরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী মিছিলে অংশ নেন। কৌশিক সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট মানুষজন পড়ুয়াদের পাশে হাঁটেন। যখন মিছিলের মাথা মেয়ো রোডে, তখনও শেষ প্রান্ত দাঁড়িয়ে নন্দন চত্বরেই!
মিছিল থেকে দাবি তোলা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী, সহ-উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত এবং রেজিস্ট্রার প্রদীপকুমার ঘোষকে পদত্যাগ করতে হবে। যতক্ষণ না তাঁরা পদত্যাগ করছেন, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে বলে জানান ছাত্রছাত্রীরা।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এত বৃষ্টিতেও কোনও রাজনীতিক দলের ব্যানার ছাড়াই এমন জমায়েত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে, কলকাতা পুলিশ এই মিছিল উপলক্ষে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেয়। মিছিলের ধার দিয়ে সাদা ইউনিফর্ম পরা পুলিশকর্মীরা যেমন হাঁটেন, তেমনই মাথায় লোহার টুপি, হাতে লোহার জাল-লাঠি নিয়ে সতর্ক ছিল খাঁকি পোশাকের পুলিশবাহিনী। মেয়ো রোডের ওপর গান্ধীমূর্তির কাছে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে আটজন প্রতিনিধিকে পাঠানো হয় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে। বাকিরা বসে পড়েন মেয়ো রোডের ওপরই। অবস্থানের পাশাপাশি চলতে থাকে স্লোগান। প্রসঙ্গত, গতকালই রাজ্যপাল বলেছিলেন যে, তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে চান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই আটজন যান রাজভবনে।
রাজ্যপাল তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনেন। পড়ুয়াদের তিনি বলেন, "তোমাদের আন্দোলনে আমার নৈতিক সমর্থন আছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে আমি আশ্বাস দিচ্ছি, সব দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" ছাত্র-প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যপালের এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট ধরে কথা হয়। প্রসঙ্গত, পড়ুয়াদের দাবিগুলি ছিল অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্থার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়া, মাঝরাতে পুলিশি হামলায় অভিযুক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, উপাচার্যের অপসারণ ইত্যাদি। রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসে ছাত্ররা জানান, তাঁরা মেয়ো রোড থেকে অবস্থান তুলে নিচ্ছেন। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে ঘটনা পরম্পরা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে দরকারে।
এদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে সহমর্মিতা জানাতে দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নামেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়াও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। মিছিল করে গিয়ে তাঁরা বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান।