ভ্রান্ত ধারণা ও করোনা মহামারির কারণে এসির চাহিদা কমেছে কলকাতায়
করোনা
ভাইরাস
সঙ্কট,
মানুষেক
আর্থিক
পরিস্থিতির
দুর্দশা
সবকিছুর
জন্যই
কলকাতায়
আচমকাই
কমে
গিয়েছে
এয়ার
কন্ডিশনের
চাহিদা।
এছাড়াও
আর্থিক
ও
স্বাস্থ্য
সংক্রান্ত
উদ্বেগ,
কোভিড–প্ররোচিত
সীমাবন্ধতা
এবং
এসির
সরবরাহ
ও
ইনস্টল
করার
আতঙ্ক
সহ
এ
বছরের
হাল্কা
গরমও
এই
চাহিদা
কমাতে
অনেকাংশে
দায়ী।
গ্রাহকদের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে যদি দেখা যায় তবে অধিকাংশজনই স্বীকার করেছেন যে আর্থিক কারণই সবচেয়ে বড় কারণ। একাধিক শিল্পে ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি এসি কিনতে পারেন এমন মানুষের সংখ্যাও কমেছে বলে ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের লোকই তা অনুভব করছে। আবার, এসি বহন করতে পারে এমন বিপুল সংখ্যক গ্রাহক দূরে সরে যাচ্ছেন কারণ এর ইনস্টলেশনটি জন্য বাড়িতে কমপক্ষে তিন–চারজন পুরুষের উপস্থিতি প্রয়োজন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, এ বছর অস্বাভিকভাবে হাল্কা গরম ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় আর তাই এসি প্রয়োজনীয়তা না হয়ে বিলাসবহুল জিনিস হয়ে গিয়েছে।
যাদবপুরের বাসিন্দা এবং বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন অভিষেক ব্যানার্জী বলেন, 'আমি এসি কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেতন কেটে নেওয়ার ফলে এই পরিকল্পনাটি স্থগিত রাখতে হয়েছে। কেবলমাত্র ইনস্টল করতেই ৭,০০০ টাকা খরচ যেখানে সেই ধরনের ব্যয় করার মতো পরিস্থিতিতে এখন নেই আমি।’ যাদের এ ধরনের সমস্যা নেই তাদের আবার সরবরাহ করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোভিড–১৯ আতঙ্কের কারণে অধিকাংশ আবাসন ও বাড়ির মালিকরা বাইরের কারোর প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি কারণ তা হল যে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা পরিষেবা কেন্দ্র এ মেশিন ইনস্টলের কাজ করেন, তাঁরা এই করোনা সঙ্কটে নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছেন। এসি প্রস্তুতকারকরা জানিয়েছেন, এই সব মিলিয়ে এসির চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
বৈদুত্যিন সরঞ্জাম নির্মাণকারী শীর্ষ সংস্থাগুলি জানিয়েছেন যে এসি বিক্রি ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এর মধ্যে বাংলায় লকডাউনের কারণে অনেক এসির দোকানই বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল। তবে মে এবং জুনের প্রথম দিকে উত্তর বারতে তীব্র গরম হওয়ায় সেখানে এসির চাহিদা বেশ ভালোই ছিল বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা।
কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন (সিইএসসি)এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এই গরমের সময় এসি ইনস্টলের অনুরোধও তুলনামূলকভাবে কম এসেছে। সিইএসসির ভাইস–প্রেসিডেন্ট অভিজিত ঘোষ বলেন, 'এ বছর গরমের একদম আগেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। এসির বাজার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং অনলাইনেও কেনাবেচা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। লকডাউনের কারণেই এসির বিক্রি এতটা কমে গিয়েছে। বাড়িতে এসি ইনস্টলের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকেও আমরা কম অনুরোধ পেয়েছি।’
গোডরেজ অ্যাপলায়েন্সের এসি প্রোডাক্ট গ্রুপ প্রধান সন্তোষ সালিয়ান বলেন, 'বার্ষিক ৫৫ শতাংশ এসি বিক্রি মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ঘটে।’ তিনি বলেন, 'এ বছর এসির ইন্ডাস্ট্রি সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পারেনি। উপরন্তু বাংলার তাপমাত্রাও গত বছরের তুলনায় সেরকম তীব্র ছিল না।’ বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে এসির চাহিদা একটু বাড়লেও, কনটেইনমেন্ট ও বাফার জোন ও আবাসিক এলাকায় ইনস্টলমেন্টের কঠিনতার সম্মুখীন হতে হয়েছে এসি সংস্থার কর্মীদের। প্যানাসোনিক ইন্ডিয়ার বাণিজ্য প্রধান গৌরব শাহ বলেন, 'কলকাতার বাজারে এসির চাহিদা কম হওয়ার একাধিক কারণের মধ্যে অন্যতম মহামারি, লকডাউন ও বাংলায় অনেক আগে বর্ষা ঢুকে যাওয়ার জন্য। উৎসবের মরশুমে ফের এসির চাহিদা বাড়তে পারে বলে আশা করছি আমরা।’
বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী মহম্মদ রিয়াজ বলেন, 'আমার অভিভাবকের জন্য এসি কেনার পরিকল্পনা করেছিলাম এই গ্রীষ্মে কিন্তু আমার প্রচুর বন্ধু আমায় এসি না কেনার জন্য সতর্ক করে বলেছে যে এসির কারণে করোনার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই আমি আর এসি কিনি না।’ যদিও চিকিৎসকরা এই আতঙ্ককে খারিজ করে বলেছেন, 'জনবহুল এলাকা বা পরিবহনে এয়ার কন্ডিশন এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কিন্তু বাড়িতে এসি ব্যবহারে কোনও সমস্যা নেই।’ চিকিৎসকদের মতে, ২৮ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসি চললে কোনও সমস্যা নেই এবং আদ্রতাপূর্ণ আবহাওয়ায় তার সঙ্গে পাখা চলতেই পারে।