সোমনাথ-প্রয়াণে কেন ব্রাত্য রয়ে গেল আলিমুদ্দিন, খোলসা করলেন স্বয়ং কন্যা অনুশীলা
বারবার অভিমান-আক্ষেপ ঝরে পড়ত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। বলেছিলেন- ‘আমি তো ছিলাম। ছেড়ে আসিনি। আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।’ বাবার সেই অভিমানী সত্ত্বাকেই মর্যাদা দিলেন মেয়ে অনুশীলা বসু।
পার্টির সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়নি দল। দলের কাছে মাথা নোয়াননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। অন্তিম শয়ানেও তিনি দলের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেলেন। বারবার অভিমান-আক্ষেপ ঝরে পড়ত তাঁর গলায়। বলতেন- 'আমি তো ছিলাম। ছেড়ে আসিনি। আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।' বাবার সেই অভিমানী সত্ত্বাকেই মর্যাদা দিলেন মেয়ে অনুশীলা বসু।
বাবার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ অনুশীলা বলেন, পার্টি চেয়েছিল পতাকায় মুড়ে দিতে। কিন্তু আমরা চাইনি। আমরা কাছে থেকে দেখেছিলাম, বাবার দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা। বাবার বিশ্বাসে আঘাত লেগেছিল। মাও জানিয়েছিলেন বাবার ইচ্ছার কথা। তাই আমরা চাইনি যে দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে, সেই দলের পতাকায় মুড়ে দেওয়া হোক বাবার দেহ।
পরিবারের পক্ষ থেকে তাই আপত্তি জানানো হয়, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হোক লাল পতাকা বা সিপিএমের দলীয় পতাকায় বা তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হোক আলিমুদ্দিনে। অনুশীলা জানান, মায়েরও তাই ইচ্ছা ছিল। তাই আমরা সিপিএমকে অনুমতি দিইনি। এ বিষয়ে সোমনাথবাবুর মেয়ে কটাক্ষও করেন সিপিএমকে। বলেন, এই তো দেখছি দলের হাল। এখন দেখে মনে হচ্ছে, ভালোই করেছিলেন বাবা। যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একদম সঠিক।
বারবার সোমনাথবাবুর গলায় আক্ষেপ ঝরে পড়েছে। আসলে তিনি তো মনেপ্রাণে ছিলেন খাঁটি বামপন্থী। তাই মনের ভিতরে সুপ্ত বাসনা ছিল, তিনি যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন, তাঁর দেহের উপর থাকবে লাল পতাকার আচ্ছাদন। তাঁর সেই সুপ্ত বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেল। বরং তাঁর পরিবার গুরুত্ব দিল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিমানী সত্ত্বাকেই। এটাই নাকি শেষ জীবনে ইচ্ছা ছিল সোমনাথবাবুর।
এদিন অনুশীলা আরও একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেন, তাঁর বাবা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় লোকসভার স্পিকার হিসেবে সেদিন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত ছিলেন জ্যোতি বসুও। তিনি সমর্থন জানিয়েছিলেন বাবাকে। অনুশীলা বলেন, বাবা তো জ্যোতি বসুকে দেখেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। বামপন্থাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। হ্যাঁ- প্রমোদ দাশগুপ্ত, স্নেহাংশু আচার্য-রা বাবাকে সিপিএমে এনেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাবা এসেছিলেন জ্যোতি বসুকে দেখেই। তাঁকেই রাজনৈতিক গুরুর মর্যাদা দিয়েছিলেন।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সোমনাথ-কন্যা। বলেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। সব জায়গায় তো রাজনীতি, মতাদর্শ চলে না, ব্যক্তিগত সম্পর্কও একটা বড় ব্যাপার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো ভোটে জেতার পর বাবার কাছে গিয়েছিলেন। বাবা ওনাকে একটা নোটও পাঠিয়েছিলেন। অনুশীলা স্মরণ করিয়ে দেন পুরনো দিনের কথাও। তাঁর এই কথা বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণও।
[আরও পড়ুন:রাজ্যে তৃণমূলের উল্টো গুনতি শুরু হয়েছে! বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার মন্তব্যে চাঞ্চল্য]