এবার ধেয়ে আসছে ‘তিতলি’! সাইক্লোনের পূর্বাভাসে কাঁপছে মহা-উৎসবের বাংলা
দুদিন আগেই সুখবর শুনিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের আশঙ্কার বাণী শোনাল। পুজোর বাংলায় এবার ‘তিতলি’র হানা।
দুদিন আগেই সুখবর শুনিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের আশঙ্কার বাণী শোনাল। পুজোর বাংলায় এবার 'তিতলি'র হানা। 'দয়া'র পর আসছে 'তিতলি'। নাম 'তিতলি' হলে হবে কী! 'তিতলি'র শক্তি নেহাত মন্দ নয়। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যেভাবে 'ফাইলিন' ও 'হুদহুদ' ধেয়ে এসেছিল, এবার 'তিতলি' নিচ্ছে ভয়ঙ্কর রূপ।
ঘুর্ণিঝড় ‘তিতলি’
বাংলা থেকে বর্ষা বিদায়ের যখন বার্তা দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর, তার অদ্যাবধি পরেই এই ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিল দিল্লির মৌসম ভবন। মৌসম ভবন জানিয়ে দেয়, দয়ার পর আসছে ঘুর্ণিঝড় ‘তিতলি'। ক'দিন আগেই দয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। তবে বাংলারে বাঁচিয়ে তা চলে গিয়েছিল ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে। ‘তিতলি' কিন্তু বাংলামুখী।
‘তিতলি’ পাকিস্তানের
দয়ার থেকেও শক্তিশালী রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় ‘তিতলি'। ‘তিতলি' নামকরণ আবার পাকিস্তানের। দিল্লির মৌসম ভবন বার্তা দিয়েছে, এবার ঝড়ের নামকরণের পালা পড়েছিল পাকিস্তানের। পাকিস্তানের দেওয়া নাম নিয়ে ঘুর্ণিঝড় ‘তিতলি' ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে। তা রূপ নি্চ্ছে ভয়াবহ সাইক্লোনে।
ফাইলিন-হুদহুদকে মনে করাচ্ছে ‘তিতলি’
২০১৩ সালে বর্ষা বিদায় নেওয়ার পর ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন' অসুর রূপে ধেয়ে এসেছিল পুজোর বাংলায়। তারপর ২০১৪ সালে পুজোর আগে হানা দিয়েছিল ‘হুদহুদ'। ‘ফাইলিন' ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে। আর ‘হুদহুদ' হানা দেয় বিশাখাপত্তনমে। দুই ঝড়েরই আতাস পড়েছিল পুজোর বাংলায়। আর মাটি করে দিয়েছিল পুজোর আনন্দ।
গতির লড়াইয়েও পিছিয়ে নেই ‘তিতলি’
‘ফাইলিন'-এর সর্বোচ্চ গতি ছিল ২১৫ কিলোমিটার। আর ‘হুদহুদ'-এর সর্বোচ্চ গতি ১৯৫ কিলোমিটার। সেখানে ‘তিতলি'র গতিবেগ সর্বোচ্চ হতে পারে ২০০ কিলোমিটার। সেই বিচারে ‘তিতলি' কিন্তু চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ‘ফাইলিন' ও ‘হুদহুদ'কে। তাই এবার বাংলার পুজোয় যে ‘তিতলি' ব্যাঙাত ঘটাবে না, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই।
আন্দামান সাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে ‘তিতলি’
বর্তমানে আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে নিম্নচাপ। সমুদ্র থেকে তা ক্রমশ শক্তি সংগ্রহ করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে। তারপর তা স্থলভাগ স্পর্শ করতে পারে। এই ঘূর্ণাবর্তের ফলে ২০০ কিমি বেগে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ধেয়ে আসতে পারে ঝড়। আগামী ১১ থেকে ১২ অক্টোবর দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল ছুঁয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
‘তিতলি’-র জেরে দেবীপক্ষে বৃষ্টির পূর্বাভাস
বঙ্গোপসাগরের ঘনীভূত ‘তিতলি' জেরে ১০ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। ওড়িশা ও বাংলাদেশও বৃষ্টি চলবে। আন্দামান সাগরের কাছে অবস্থিত নিম্নচাপটি একদিনের মধ্যেই সুষ্পষ্ট নিম্নচাপে রূপান্তরিত হবে। তার তিনদিনের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে।
‘তিতলি’র গতি বাড়ছে
এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ১৫০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার। আর সর্বোচ্চ গতিবেদ হবে ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম দিকে সরছে এই নিম্নচাপরূপী সাইক্লোনটি। তিনদিনের মধ্যেই পূর্ণ শক্তিতে তা দাপিয়ে বেড়াবে গাঙ্গেয় উপকূলে।
[আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বঙ্গে ভারী বৃষ্টির ভ্রুকুটি! কতদিন চলবে বৃষ্টি, জেনে নিন বিস্তারিত]
কেন্দ্রীয় নির্দেশক কী জানাচ্ছেন
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উপ মহানির্দেশক জানাচ্ছেন, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ঘণীভূত নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে তার অভিমুখ স্পষ্ট হবে বুধবার নাগাদ। সাধারণ বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ বাংলা-ওড়িশামুখীই হয়। তবে তা বাংলাদেশ অভিমুখেও ঘুরে যেতে পারে। এমন ঘটনা পূর্বেও ঘটেছে।
[আরও পড়ুন:ধেয়ে আসছে ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়, বর্ষা-বিদায়েও পুজোর বাংলায় অশনি-সংকেত]
আবহবিদদের সতর্কবার্তা
এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর বাংলামুখী হলে উপকূলবর্তী এলাকায় অর্থাৎ এই বাংলায় পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে পারে। সমুদ্রে ৩২ ফুট উচ্চতার ঢেউ উঠতে পারেও বলেও পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
পণ্ড হবে শারদোৎসব
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের অভিমুখের উপরই এখন নির্ভর করে রয়েছে পুজোর বাংলার ভবিষ্যৎ। বাংলা ও ওড়িশার দিকে অভমুখ হলে প্রভাব পড়বেই উৎসবে। এখন থেকেই পুজো উদ্যোক্তারা ঘোর চিন্তায়। চিন্তায় উৎসবপ্রেমী বাঙালিও। এত পরে পুজো হয়েও, তা যদি মাটি হয় বর্ষায়, সেই ভেবে ঘূর্ণাসুর বধের প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।