ঋতব্রত-কাণ্ডে সিপিএমে বিভাজন তুঙ্গে, সরাসরি বিরোধিতায় ১৩ জন ‘কমরেড’
বিজেপি-র ধাক্কায় সিপিএম যখন রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান হারাতে চলেছে, তখন দলের অন্দরে এই বিভাজন শুভ লক্ষণ নয়।
সিপিএমে প্রশ্ন উঠে গেল- এ কেমন বিচার? তদন্ত যখন হবে তখন আগেই সাসপেন্ড কেন? ফের ঋতব্রত-কাণ্ডে সিপিএমে বিভাজন তুঙ্গে উঠল। সরাসরি বিরোধিতায় ১৩ জন 'কমরেড'। বিজেপি-র ধাক্কায় সিপিএম যখন রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান হারাতে চলেছে, তখন দলের অন্দরে এই বিভাজন শুভ লক্ষণ নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ঋতব্রতকে সাসপেন্ড ঘোষণার পর প্রতিবাদী ১৩ কমরেডের কথায়, কমিশন যখন গঠন করা হয়েছে ২ আগস্ট তদন্ত রিপোর্ট পেশের পরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত ছিল। মুখে না বললেও সিপিএম নেতা-নেত্রীদের অভিমত, দল এখন অবক্ষয়ের পথে রয়েছে, তাই আরও ধীরে পদক্ষেপ নেওয়াই ভালো হত দলের পক্ষে। তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হল।
ঋতব্রত-র জীবনযাত্রা নিয়ে দলের অন্দরে যে পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ জমা হয়েছিল, তাতে ক্ষুব্ধ দলের একাংশ। বারবার প্রশ্ন উঠেছে- কেন অকমিউনিস্ট সুলভ আচরণ ও জীবনযাত্রা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ঋতব্রত-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না দল। কার প্রশ্রয়ে এইসব চালিয়ে যাওয়ার সাহস পান দলের তরুণ সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়?
তির যে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বিরুদ্ধে ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দলে একমাত্র তাঁরই অনুগামী বলে কেউ নেই- এমনটাই শোনা যেত। এহেন সূর্যকান্তবাবুর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগে রাজ্য কমিটির বহু সদস্যই চমকে গিয়েছেন। তারপরই তাড়াহুড়ো করে ঋতব্রতকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত। সূর্যবাবু জানিয়েছেন, 'ঋতব্রত একজন মূল্যবান কমরেড। তাঁকে জল থেকে তাড়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়, তাঁর শুদ্ধকরণই দলের উদ্দেশ্য। তাই তিনমাস সাসপেন্ড করে তাঁকে বার্তা দেওয়া হল।
সেইসঙ্গে কমিশনও গঠন করা হল, ঋতব্রতর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য। মহম্মদ সেলিম, মদন ঘোষ ও মৃদুল দে-র তিন সদস্যের কমিশন ২ আগস্ট তদন্ত সাপেক্ষে রিপোর্ট জমা দেবে। এখানেই উঠে পড়ছে প্রশ্ন? কেন কমিশনের রিপোর্টের অপেক্ষা না করে আগাম সাসপেন্ড? সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী থেকে শুরু করে রূপা বাগচি, মধুজা সেন রায়রা মনে করেন তদন্ত রিপোর্ট পেশের পরই দল ঋতব্রত-র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারত।
ঋতব্রতর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের পিছনে দলেরই একাংশের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেক সিপিএম নেতা-নেত্রীই। আসলে সিপিএমের এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় দলে আর ঘূণ ধরাচ্ছে গোষ্ঠীকোন্দল। একাংশই ঋতব্রতর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। তাঁর কিয়দংশ হয়তো সত্যি। বেশিরভাগটাই রটনা। রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঋতব্রতকে বলার সুযোগ দিয়েছিলেন বিমান বসু। তবে এ নিয়ে তিনি যেন বাইরে মুখ না খোলেন, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ঋতব্রত রাজ্য কমিটির বৈঠকে শুধু একটা কথাই বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেই কমিশন যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে।
এর আগেও সিপিএমে বারবার এই ধরনের শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখনও এমন বিরল ঘটনা ঘটেনি। যাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা না মানার অভিযোগ, তাঁরই পক্ষে সওয়াল করেছেন এত জন নেতা। সরাসরি প্রশ্ন তোলা হয়ে- তদন্তের আগে শাস্তি কেন? এ বিচার ঠিক হল না! ঋতব্রতকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণার মধ্যেই সূর্যবাবু কৌশলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর আপত্তির কথা। তারপরই সরব হয়েছেন সুজন চক্রবর্তী, নেপালদেব ভট্টাচার্য, তড়িৎ তোপদার মানব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রূপা বাগচি, সায়নদীপ মিত্র, মধুজা সেন রায়-রা।