নতুন হস্টেলে ঘর সিনিয়ার ছাত্রদের, কাউন্সিলের বৈঠকের সিদ্ধান্তে কি কাটবে মেডিক্যালের অচলাবস্থা
১৪ দিন ধরে ৩৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অনশন আন্দোলনের জট কাটার সম্ভাবনা তৈরি হল।
১৪ দিন ধরে ৩৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অনশন আন্দোলনের জট কাটল। সোমবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে অনশন আন্দোলনে বসা ছাত্রদের দাবি কার্যত মেনে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের নতুন হস্টেলে ঘর দিতে রাজি হয়েছে কলেজ কাউন্সিল।
বৈঠকের শেষে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র জানান নতুন হস্টেলের প্রথম দুটি তলায় থাকবেন প্রথম বর্ষের ছাত্ররা। এরপরের দুটি তলায় থাকবেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্রীরা। শেষ দুটি তলায় ঘর পাবেন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা। তবে, হস্টেলে স্থান পাওয়ার পুরো বিষয়টি হবে কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে।
কলেজ কাউন্সিল বৈঠকেই ছাত্রদের অনশন তুলে নিতে আবেদন করে। সিনিয়ার ছাত্রদের যে দাবি ছিল তা যখন মেনে নেওয়া হচ্ছে তখন অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ছাত্ররা সাফ জানিয়ে দেন কলেজ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে লিখিত আকারে প্রকাশ করতে হবে। এরপরই অনশন আন্দোলন তোলা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন ছাত্ররা।
বৈঠক শেষ হতেই তিরিশ মিনিটের মধ্যে কলেজ কাউন্সিল সমস্ত সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে প্রকাশ করে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় কলেজ কাউন্সিল। স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর থেকেও এই সিদ্ধান্তে আর কোনও আপত্তি জানানো হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র অনশনরত ছাত্রদের মুখে জল তুলে দিয়ে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটান।
যদিও, কলেজ কাউন্সিলের এদিনের সিদ্ধান্তে নতুন করে এক ঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ, নতুন হস্টেলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রীদের তিনটি তলা দেওয়া হয়েছিল। এমনকী, পুরনো হস্টেল থেকে তাঁদের সকলকে নতুন হস্টেলে স্থানান্তরিতও করা হয়েছে। পোস্ট গ্র্য়াজুয়েট ছাত্রীদের দাবি, তাঁরা পুরনো হস্টেলে ভালোই ছিলেন। একটু মেরামতির কাজ করলেই তাঁরা সেখানে থেকে যেতে পারতেন। একথা কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের জোরজবরদস্তিতে তাঁদের সকলকে নতুন হস্টেলে আসতে হয়েছে। এখন তাঁদের জন্য বরাদ্দ একটি তলা যদি ছাত্রদের দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ওই তলার ছাত্রীদের আবার পুরনো হস্টেলে ফেরানো হবে। এটা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই নিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কলেজ কাউন্সিলের এদিনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় যদি এবার ছাত্রীরা আন্দোলনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কলেজ কাউন্সিলের আশা সিনিয়ার ছাত্রদের জন্য যে নতুন হস্টেল তৈরি হচ্ছে তা জানুয়ারির মধ্যেই হাতে পাওয়া যাবে। ৭ তলার এই হস্টেলটি চালু হয়ে গেলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করছে কলেজ কাউন্সিল। সেই কারণে এদিনের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন হস্টেলের নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সিনিয়ার ছাত্রদের সেখানে চলে যেতে হবে। নিয়ম মেনে একটি হস্টেলে শুধুমাত্র প্রথম বর্ষের ছাত্রদের রাখা হবে। এদিনের বৈঠকে পুরনো হস্টেলের সংস্কারের দাবিও মেনে নিয়েছে কলেজ কাউন্সিল।
১৪ দিন আগে সুস্থ ও স্বাস্যকর পরিবেশে বাস করারা দাবি নিয়ে আন্দোলনে বসেছিলেন ৫ সিনিয়র ছাত্র। তাঁদের দাবি ছিল যে হস্টেলে তাঁরা থাকছেন তা অস্বাস্থ্যকর শুধুই নয়, বসবাসের অযোগ্য। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের এই দাবি মানতে রাজি হয়নি। শেষমেশ ছাত্রদের আন্দোলনের তীব্রতার সামনে মাথা নোয়াতেই হল ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে।