'বাথরুমে গিয়ে সন্তানকে স্তন্যপান করান', সাউথ সিটি মলের কথায় বিক্ষোভের ঝড়
সমানে কেঁদে চলেছে সাত মাসের সন্তান। সদ্য মাতত্বের স্বাদ পাওয়া অভিলাশা দাসঅধিকারী বুঝতে পেরেছিলেন সন্তানের চাহিদাটা। কিন্তু লোকভর্তি মলে কোনও আদর্শ জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্তন্য-পান করানোর।
সমানে কেঁদে চলেছে সাত মাসের সন্তান। সদ্য মাতত্বের স্বাদ পাওয়া অভিলাশা দাসঅধিকারী বুঝতে পেরেছিলেন সন্তানের চাহিদাটা। কিন্তু লোকভর্তি মলে কোনও আদর্শ জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্তন্য-পান করানোর। মলের কর্মীদের বলতেই তারা শৌচালয়ে গিয়ে অভিলাশা-কে স্তন্যপান করাতে বলেন। দিন কয়েক আগের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিলাশা সাউথ সিটি মলের ফেসবুক পেজে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কমেন্ট পোস্ট করেন। আর সেই পোস্ট এখন ভাইরাল হয়ে উঠেছে নেট দুনিয়ায়।
সাউথ সিটি মলের আচরণে ক্ষোভ এতটাই বেড়েছে যে তাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লোকে মল বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। অনেকে আবার সাউথ সিটি মল বয়কটের দাবিও তুলেছেন। এমন কমেন্টও পোস্ট হয়েছে যেখানে লেখা হয়েছে, যারা শিশুদের কথা ভাবে না তাদের মলে কোনও সুস্থ মানুষের যাওয়ারও দরকার নেই। বিতর্ক আরও তীব্র আকার নিয়েছে অভিলাশা-র পোস্ট মুছে দেওয়ায়। যার জন্য সাউথ সিটি মলের বিরুদ্ধে রোষানল আরও তীব্র আকার নিয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিলাশা জানিয়েছেন, তাঁর সাত মাসের কন্যাসন্তান সমানে কেঁদে যাচ্ছিল। ওর যে ক্ষিদে পেয়েছে তা বুঝতে পারছিলেন তিনি। কিন্তু, অনেকটা সময় ধরে তিনি সাউথ সিটি মলের মধ্যে এদিক ওদিকেও ঘুরে বেরিয়েও কোনও আদর্শ স্থান পাননি যেখানে সন্তানকে স্তন্যপান করাতে পারেন। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লোর-এর ওয়াশরুমের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীদের কাছেও চেঞ্জিং রুমের হদিশ জানার তিনি চেষ্টা করেন। কিন্তু, তারা কেউই চেঞ্জিং রুমের হদিশ দিতে পারেননি। উল্টে অভিলাশা-কে মহিলা শৌচালয়ে ঢুকে স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দেন মলের কর্মীরা।
অভিলাশা জানিয়েছেন, এরপর তিনি করিডরে থাকা বেঞ্চে কন্যাসন্তানকে স্তন্যপান করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি-তে অস্বস্তি লাগায় তিনি তা করতে পারেননি। এরপর কয়েকটি স্টোরের কর্মীদের কাছেও যান অভিলাশা যদি তাঁরা ট্রায়াল রুমটা ব্যবহার করতে দেন। কিন্তু সেই সব স্টোরের কর্মীরাও অভিলাশা-র প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেন। এরপর মলের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তাঁরাও কোনও সাহায্য করেননি। শেষমেশ একটি জামা-কাপড়ের দোকানের এক কর্মী অভিলাশা-কে সাহায্য করেন। সেই দোকানে সে সময় কোনও গ্রাহক ছিল না। সেই দোকানের কর্মী অভিলাশাকে ট্রায়ালরুম ব্যবহার করতে দেন।
[আরও পড়ুন: দূষণের নজরদারিতে উপগ্রহ! মোদী জমানায় আমেরিকার বহু উপগ্রহ উৎক্ষেপণেও ভারত]
বেহালার বাড়িতে ফিরে এসে নাকি গোটা ঘটনাকে খেয়াল করে আরও বিধ্বস্ত হয়ে যান অভিলাশা। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিলাশা সাউথ সিটি মল-এর ফেসবুক পেজে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে কমেন্ট পোস্ট করেন। বিতর্ক এরপরও আরও তীব্র আকার নেয় সাউথ সিটি মল-এর দেওয়া উত্তরে। কারণ, অভিলাশার পোস্ট করা কমেন্টে সাউথ সিটি মল জানিয়ে দেয়, 'সাউথ সিটি মলের ফ্লোরগুলিতে কেন ব্রেস্ট ফিডিং করতে দেওয়া হয় না তারজন্য একাধিক কারণ রয়েছে। এই কারণগুলি আপনার কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। যে কোনও এমার্জেন্সি-তে নিশ্চিতভাবেই আমরা কাউকে সাহায্য করতেই পারি, কিন্তু নিশ্চিতভাবে এই বিশাল মলটা খোলা হয়েছে শপিং-এর জন্য, আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই জানানো হচ্ছে যে, দয়া করে বাড়িতে যে কাজগুলো করা উচিত সেগুলো বাড়়িতে করাটা নিশ্চিত করুন, মলে নয়। কমপক্ষে অন্তত বাড়ির বাইরে বের হওয়ার আগে। এটা কি মানা সম্ভব যে আপনার সন্তানকে ব্রেস্টফিড করাটা প্রয়োজন বলে পাবলিক প্লেসে যেখানে আপনি চাইবেন সেখানে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিতে হবে? আমরা অন্যদের প্রাইভেসি-কে নষ্ট করতে পারি না। আমি পারি কি?' সাউথ সিটি মল-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মনমোহন বাগরি অবশ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, একটি বাইরের এজেন্সি তাদের ফেসবুক পেজ নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের তারা কাজ থেকে হঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছন যে, 'আমাদের সম্মতি ছাড়াই অত্যন্ত রুষ্ট এবং আক্রমণাত্মক জবাব দেওয়া হয়েছে।' সাউথ সিটি মলের প্রতিটি ফ্লোরেই চেঞ্জিং রুম আছে। তবে এই মুহূর্তে একটি ফ্লোরেই চেঞ্জিং রুম আছে। বাকিগুলো সংস্কার চলছে বলেও জানিয়েছেন মনমোহন বাগরি।
[আরও পড়ুন:কিউআর কোড ব্যবহার করে রেলের টিকিট! ১ ডিসেম্বর থেকে শিয়ালদহ ডিভিশনে নতুন ব্যবস্থা]
সাউথ সিটি মলের কাছে অভিলাশা যে ব্যবহার পেয়েছে তাতে অবশ্য বিতর্ক এখনও বেড়েই চলেছে। সাধারণত, শপিং মলেও সবধরনের নাগরিক পরিষেবা থাকার কথা। কিন্তু, অভিলাশা তা পেলেন না কেন তার তদন্ত হওয়া উচিত বলেও অনেকে মনে করছেন। চলতি বছরেই এক দক্ষিণী নায়িকার স্তন্যপান করানোর ছবিকে প্রচ্ছদ করেছিল একটি পত্রিকা। এই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কিন্তু, স্তন্যপান করানো যে একটা আবশ্যিক অধিকার-এর মধ্যে পড়ে এবং এরজন্য সবখানেই যাবতীয় ব্যবস্থা থাকা উচিত তা নিয়ে এদেশেও এখন সচেতনতা বাড়ছে।
[আরও পড়ুন: পাকিস্তানে গিয়ে খলিস্তানি জঙ্গির সঙ্গে ছবি তুলে ফের বিতর্কে সিধু ]