এটাই আসল 'কংগ্রেস', তৃণমূলে যোগ দিয়ে ঘোষণা মানস ভুঁইয়ার
কলকাতা, ১৯ সেপ্টেম্বর : অবশেষে কংগ্রেস ছাড়লেন মানস ভুঁইয়া। ৪৬ বছরের নাড়ির টান ছিন্ন করে তৃণমূলে নাম লেখালেন বর্ষীয়ান এই নেতা। রাজনীতিকে নদীর মতো প্রবহমান ধারা ব্যাখ্যা করে তিনি বললেন, 'আমি আসল কংগ্রেসে অবস্থান করে একেবারে ঠিক জায়গায় আছি।' এদিন দলবদলের পরই নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান।
সোমবার তৃণমূল ভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তিনি নাম করেই সমালোচনা করলেন অধীর-মান্নানের। বললেন, 'মাসে চারবার কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা হতো। তবে প্রদেশ কংগ্রেস ও হাইকম্যান্ডের মাঝে একটা কালো পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি হলেন সি পি যোশী। আর রয়েছেন জগাই-মাধাই। আজ কংগ্রেসের বড় দুর্ভাগ্য।'
এদিন বিধান ভবনকে ভুতু়ড়ে বাড়ির সঙ্গে তুলনা করেন মানসবাবু। বলেন, '৪৬ বছর কংগ্রেস করার পর বিধান ভবনের দিকে তাকালে আজ মনে হয় একটা ভুতুড়ে বাড়ি। ওখানে ভুত দেখে সব কংগ্রেস নেতা-কর্মীই পালিয়ে যাবেন।'
কংগ্রেসের সিপিএম ঘনিষ্ঠতাকে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করে একইসঙ্গে কংগ্রেসের প্রাক্তন পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবও চললেন তৃণমূলে। সেইসঙ্গে তৃণমূলে যোগদান করলেন কংগ্রেসের বড় একটা টিম। তৃণমূলে এলেন, অসিত মজুমদার, অজয় ঘোষ, মনোজ পান্ডে, খালেদ এবাদুল্লা, কনক দেবনাথ, দীপা ভুঁইয়া প্রমুখ নেতৃত্ব।
পুরনো সহকর্মীদের দলে পেয়ে আবেগতাড়িত পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, 'এদিনের এই যোগদানের ফলে প্রদেশ কংগ্রেসের কমিটির কোনও অস্তিত্ব রইল না। কে রইলেন আর কংগ্রেসে! শুধু রয়ে গেলেন সভাপতি। রয়ে গেলেন জগাই-মাধাই।'
মানস-সোহরাবের তৃণমূলে যোগদান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অনেকেই। মুকুল রায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবু এদিন ছিলেন মূল ভূমিকায়। তিনি বলেন, মানসবাবুর জগাই-মাধাইরা দেখলেন, যে উন্নয়নের ঝড় উঠেছে রাজ্যে, সেই ঝড় থামানোর ক্ষমতা নেই বিরোধীদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে মানসবাবু-সহ অন্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদেরও আমরা সাদরে গ্রহণ করছি তৃণমূল কংগ্রেসে। এদিন আদর্শচ্যুত কংগ্রেস ও নীতিহীন সিসিপএমের সমালোচনায় মুখর হন পার্থবাবু। এরপরই তিনি মাইক্রোফোন তুলে দেন মানসবাবুর হাতে।
মানসবাবু বলেন, আমি এখন থেকে তৃণমূলকর্মী। আমার মন-বিবেক সবই এখন তৃণমূলের। আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। ভিন্ন দলে থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। তা ছিল। এখন থেকে আমার কাছে সবটাই দল। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইন আইনের পথে চলবে। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে মেনে নেব।
আসলে এ প্রসঙ্গে একটা কথাই বারবার উঠছিল যে, মানসবাবুর এই কংগ্রেস ছাড়ার পিছনে কি সবংয়ে তৃণমূলকর্মী হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারি পরোয়ানা? কয়েকদিন আগেই অধীরবাবু বলেছিলেন, 'মানসবাবু যে কংগ্রেস থাকছেন না, তা অনেকদিন আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল। আসলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আগেই দস্তখত লিখে দিয়ে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে দু'টি অপশন দিয়েছিলেন। হয় জেলে, নয় তৃণমূলে। মানসবাবু দ্বিতীয়টিই বেছে নিয়েছেন। তাই মানসবাবুর তৃণমূলে যোগদানে আইনসংক্রান্ত ওই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সেই
প্রশ্ন
দক্ষ
রাজনীতিক
হিসেবে
পাশ
কাটিয়ে
গিয়েছেন
মানসবাবু।
বিধায়ক
পদ
নিয়ে
তিনি
বলেন,
এটা
সম্পূর্ণ
স্পিকারের
সিদ্ধান্ত।
মহম্মদ
সোহরাব
বলেন,
কংগ্রেস
বিধানসভা
নির্বাচনের
সময়
থেকেই
ভুল
পথে
পরিচালিত
হচ্ছে।
আমাকে
মিথ্যে
আশ্বাস
দেওয়া
হয়েছিল।
আসলে
আমার
সঙ্গে
চক্রান্ত
করা
হয়েছিল।
তখন
থেকেই
বিদ্বেষ
তৈরি
হয়েছিল।
আসলে কংগ্রেস আর সিপিএম পুরোপুরি দুই মেরুর দু'টি দল ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী। সেই দু'টি দল আদর্শচ্যুত হয়ে এক সারিতে এসেছে। তাই এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে একমাত্র পথ মমতাই। তারপর মানসবাবুকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করার পর যে ন্যক্করজনক ঘটনা ঘটানো হল, তা আদৌ সমর্থনযোগ্য ছিল না।