দুর্গাপুজোর সাহিত্য: শোভন-এর সেরা একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা, পুজোয় যা মন ছোঁবে
শোভন মুখোপাধ্যায়। এই নামে তাঁকে এখন যত না লোকে তাঁকে চেনে, তার থেকে বেশি তাঁর পরিচয় 'প্যাডম্যান' হিসাবে।
শোভন মুখোপাধ্যায়। এই নামে তাঁকে এখন যত না লোকে তাঁকে চেনে, তার থেকে বেশি তাঁর পরিচয় 'প্যাডম্যান' হিসাবে। কয়েক মাস আগেই মুক্তি পেয়েছিল অক্ষয়কুমাার অভিনীত 'প্য়াডম্যান' ছবিটি। তখনই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় শোভনের কাহিনি। গত কয়েক বছর ধরে নিজের উদ্য়োগে কলকাতায় 'প্যাডবিপ্লব' সংগঠিত করেছেন তিনি। শোভন নিজের উদ্য়োগে রাস্তার ধারে থাকা বাথরুমগুলিতে 'প্যাড ডিসপেনসার' বসান। সেখানে নিয়ম করে তিনি প্যাড রেখে আসেন। এমনকী, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্যও আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শোভন। যার নাম 'ত্রিধারা'।
এহেন শোভনের আবার পছন্দের বিষয় কবিতা ও গদ্য লেখা। শব্দের মোড়কে ভাবনাকে মুড়ে দিতে ভালোবাসেন শোভন। আর সেই শব্দের টানেই মেলে দিতে থাকেন তাঁর ভাবনা। কখনও আপনমনে সেই শব্দ গাথার বিন্যাস ছড়িয়ে দেন কলমের আঁচড়ে। আবার কখনও স্মার্টফোনের টাচ স্ক্রিনেই চলে আঙুলের কলকাকলি। এখানে শোভনের ৬টি প্রেমের কবিতাকে তুলে ধরা হয়েছে। বিষয় ভাবনায় যা মন-কে ছুঁয়ে যেতে বাধ্য।
"পাল্টানোর অভ্যেস"
আচ্ছা
তোর
মনে
আছে?
শহরতলির
স্কুল
ছেড়ে
উচ্চমাধ্যমিক
স্কুলে
পড়ব
বলে
কলকাতার
স্কুলে
ভর্তি
হলাম
।
আমার
তো
দিব্যি
মনে
আছে
আমাদের পাশেই তোদের স্কুল ছিল ।
ভূগোলের জন্য ভর্তি হলাম স্কুলেরই শিক্ষকের কাছে সেখানেই প্রথম আলাপ ।
মেয়েদের মাঝে বেশকিছুটা ইতস্তত করতাম
মনে আছে প্রথম বন্ধু তুই হয়েছিলি
আচ্ছা তোর মনে আছে তো ?
দুজনের গভীর বন্ধুত্ব যখন তুঙ্গে
সেদিন
হুট
করে
"ভালোবাসি
তোকে"
বলেই
ফেললাম
।
ছিলাম
তো
একসাথে
দুবছর
তোর ভালো ফল
ভর্তি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে
আর আমি স্নাতক নিয়ে ।
আসতে আসতে দূরে সরাতে থাকলি
আমার সেই মিষ্টি মেয়ে কোথায় যেন হারাতে থাকল।।।।
কোথায় যেন মিশতে থাকল আধুনিকতার ভিড়ে ।
"বানানো প্যান্ট !!
জিন্স পরিসনা তুই?
কি সেকেলে রে তুই ।
আমাদের সম্পর্কটা আর না এগনোই ভালো"
নির্দিধায় বলেছিলি কথাগুলো
তুই হয়তো জানিস না
সেবারের পুজোটাতে আমি হসপিটালে ছিলাম
ঘুমের ওষুধও ঘুম আনতে পারেনি
খবরও নিসনি,,,,,,,,,,,
আজ প্রায় পাঁচ বছর হলো ,,,,,,
আমি আজও পুজোর দিনে তোর কথা ভাবি আর মনে মনে বলি
তোর আজ সাত নম্বর প্রেমিক চলছে ।
আমার শেষ প্রেমিকা তুই
কিন্তু
বিসর্জন
দিয়েছি
কালের
অগ্রগতিতে
,,,,,
আজ
আমি
জিন্স
পরি
তবে
তোর
জ্ন্য
নয়
।
নিজের জ্ন্য ।
গানের লাইনটা বড়ো কানে বাজে
" অভ্যেস বলে কিছু হয়না এ পৃথিবীতে পাল্টে ফেলাই বেঁচে থাকা "।
প্রেম নয়
প্রতি বার
নিজেকে দাঁড় করাই
আয়নার সামনে
প্রতিবার
নিজেকে দেখি
তোমার অর্ধাঙ্গিনী রূপে
শরীর ছোঁয়া ভালোবাসা
তবে এ নিছকই প্রেম নয়
সে ভোগবিলাসের রূপ
প্রতি স্নানে
নিজেকে ভেজাই
তাও মন ভেজাই না
সেটা বোধ হয়
আগে ভিজতো
যখন লেকের ধারে ,
আনমনে
জড়িয়ে নিতে...
কিংবা রাতের চাঁদ,
যখন মুখ লোকাতো
ঠোঁট যুগলের বন্ধনে...
মনটা তখনই ভিজতো।
এটা মেয়ের মন,
সহজে মন দেয় না...
দিলে কখনও ফেরায় না।
তাই আজও বসে রই
কামনার ছোঁয়া পেতে...
শুধু মনকে,
বোকা বানানোর দায়ে...
তোমার
শুধু
কাম-বসনা
ছিল,
স্বার্থহীন ভালোবাসা নয়
"একাকিত্বের হ জ র ল ব"
দুঃখ গুলো আদরে আবদারে পুষতে ভালো লাগে
প্রেম যখন বিদায় জানায় তারস্বরে হাসতে ভালো লাগে
ভালো লাগে ছাদে বসে তোমার নেশা করতে,
ভালো লাগে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে ।
বছর বছর ভালোবাসা আগলে রাখার যে কষ্ট ,
তার থেকে এক লহমায় যদি নিজেকে করে দিই নষ্ট ।
তখন কিন্তু শুনতে ভালো লাগবে "নষ্ট ব্যাটাছেলে" ,
মনের ঔরসেই প্রতিবার জন্ম নিচ্ছে এক হারিয়ে যাওয়া পাগল প্রেমিকের ,
যার হারিয়ে যাওয়া নিশ্চিত
প্রেমিকার অভিমান মেশানো শরীরে।।
ডাইরি
বয়সটা তখন বড্ড ছোটোই ছিল বোধহয় ...
তোমাকে হলুদ নয় মেরুণ-লাল পাঞ্জাবিতে দেখেছিলাম
বোধহয় অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলে ......
হাতে ঘড়ি ভেজা চুলে চিরুনির আঁচড় ...
বেশ মিষ্টি হাসি ছিলো মুখে ....
আমি ঘরের বক্স-জানলায় চায়ের কাপ নিয়ে বসে ছিলাম .....
সেই শুরু প্রথম প্রেম ....
বোধহয় বয়সটা বড্ড ছোটোই ছিলো ...
সেদিনই
শেষ
দেখা
...
একমাস
হতে
চললো
...
বাবা এসে সেদিন বলল
"মুনাই, আজ আমার বন্ধু তার স্ত্রী ছেলে আসবে।
মা-এর হাতে-হাতে একটু করে দিস "
খাটের
ওপর
কোল-বালিশে
গা-গড়িয়ে
বললাম
"দেবো
দেবো
"
হমম
সে
দিন
কাজের
কাজ
বলতে
শুধু পেঁয়াজটায় বেঁটে দিয়েছিলাম ...
স্নান
সেরে
আলমারি
খুলে
একটার পর একটা চুড়িদার বার করেই গেলাম
শেষে হালকা বেগনে-টা পড়লাম ...
জল-টল খেয়ে টিভি-টা চালতেই
বেল বাজল
দরজা খুলতেই বাবার বন্ধু তার স্ত্রী এবং তাদের সন্তান ...
ঘরের সোফায় এসে বসলো আমি জল দিলাম
মা
মিষ্টি
দিলো
আমি
বেশ
গল্প
মেতে
উঠলাম
...
মাঝে-মাঝে
আড়
চোখে
ছেলেটার
দিকে
তাকাচ্ছিলাম
...
হঠাৎ মনে পড়ল এই-তো সেই ছেলে,
মেরুনলাল-পঞ্জাবি
বিশেষ কিছু বলার আর নেই
প্রেমের শুরু সেদিন থেকেই ...
নয় নয় করে চারটে বছর কাটলো
চারটে
বছর...
সেই
ছেলের
কতই-না
পাল্টে
যাওয়া
দেখেছি
...
চাকরি
করে
আমি
তখন
কলেজে
পড়ি
...
মানুষ
অর্থ,
সময়
,সবের
সাথেই
পাল্টে
যায়...
আর মেয়েদেরই বোধ হয় সেগুলো সইতে হয় ...
যে ছেলের আগে আমাকে পছন্দ ছিলো
এখন তার আমার শরীর কে পছন্দ ,
পছন্দ সেই শরীরী ছোটো ছোটো কাপড় পড়াতে...
বদলি হলো
এক
বছরের
জন্য
বিদেশ
...
আগেই
বললাম
মেয়েদের
কে
সব
সইতে
হয়
....
বদলির দুঃখ-টাও আমারই
মেরুণ-লাল ছেলেটা যতই পাল্টে যাক
ভালো তো বেশেছি
কিছু দায় থেকে যায়
ইতিমধ্যে চুলবুল খুশি খুশি
এক ছেলের সাথে আলাপ আমার
মিষ্টি একটু খাটো ...
যাকে দেখে মনে হয় ,
তার জীবনে কখনও দুঃখ নেই ....
হোয়াট্স অ্যাপ এ কথা শুরু ......
আমার ভালোবাসা তখন বিদেশে ....
সপ্তাহে একবার ফোন
হয়তো কখনো আসে, কখনো নয় .....
তবু চিন্তা ছিল না
দিব্বি ভুলে ছিলাম আমার ভালোবাসা-কে
কারণ সুখের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ছিলো ....
দিন গড়াতে থাকলো ......
জড়াতে থাকলাম সুখের সাথে ....
কিছুদিনের জন্য ভেবেই নিয়েছিলাম
সুখ ছাড়া তো আমি বাঁচতে পরবো না ....
ইতিমধ্যেই
আমি সেই ছেলে-কে বলেই বসি
ভালোবাসি তোমায় .....
সে
শুনে
হাসে
বলে
"এ
কেমন
পাগলামি?
তোর ভালোবাসা আছে ......বিদেশে ..
ভুলিস না তাকে ....
আমি কয়েকদিনের
সে সারা জীবনের .....আমি খুশি দেবো
আর ভালোবাসা সে দেবে ......"
বুঝিয়েছিলো
....
বুঝেওছিলাম
বোধহয়
আমি
.........
কথা হত ভালবাসাও দেশে ফিরে এলো .....
বোঝানো কথায়
ভালো হয়ত মেরুণলালকেই বাসলাম ......
সেও তার ভালবাসাকে ফিরে পেয়েছে ......
আমিও
হয়তো
সুখী
আমার
ভালোবাসার
সাথে
....
সে তো খুশি হবেই ....
অপেক্ষা করছিলো তার ভালোবাসা ফেরার ......
ফিরেও পেয়েছে ...
এখন আর তেমন কথা হয়না ....
আমার
মেরুনলাল-কেই
এক
প্রকার
বাধ্য
হয়
বিয়ে
করলাম
......
চুড়িদার ছেড়ে এখন হট-প্যান্ট পরি ......
তার ভালোলাগার জন্য .....
কারণ একদিন একজন বুঝিয়েছিলো
ভালোবাসাকে ভালোরাখার জন্য
নিজের ভালোলাগাকে ত্যাগ করতে হয় ......
হয়তো সেদিন বুজেছিলাম .....
হয়তো-বা বোঝার অভিনয় .....
তবে একটা কথা বুজেছি
প্রেমে আমি খুব ছোটো বয়সে পড়েছিলাম ....
তাই সেদিনও বুঝিনি আর আজও বুঝছি না .....
আমি ভালোটা কাকে বেসেছিলাম ?
ইতি
পাগলি বুঝলি
মা তোর বেনারসিটা পছন্দ করেছে
বেশ মানাবে তোকে ।
আচ্ছা শোন না কাল সরোবরে আসবি তো ?
অনেকদিন দেখিনি
খালি কাজ কাজ
কখনও তো আমাদের ভালোবাসাকে সময়ই দিস না ।
কিরে কিছু বলছিস না যে মেসেজ তো ডেলিভার দেখাচ্ছে
অভিমান হলো বুঝি!
পাগলি উত্তর দেনা-রে ।
রাগ করে থাকলে আমার কেমন লাগে ।
এইতো চার-মাস আমাদের দেখাশোনা তার মধ্যে এতো অভিমান!
বুঝলাম মেয়ের বুঝি আদর দরকার ।
কি-রে কিছু-তো বল ।
ধুর ভালো লাগেনা!!!!!!
এদিকে
সেই
মেয়ের
হাতে
ফোন
শক্ত
করে
ধরা
মেসেজ-গুলো ঢুকছে
কিন্তু , কয়েক ঘন্টা আগে
ব্রিজ ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সুমিতের হবু বউ রণিতা ।
খবর
শুনে
হাসপাতালে
ভর্তি
সুমিত
।
ভালোবাসার
মানুষটা
হারিয়ে
গেছে-তো
!
সুমিতের
বোন
বৌদিকে
পাঠানো
দাদার
শেষ
মেসেজগুলো
পড়ছে
আর
অঝোরে
কাঁদছে।
মিথ্যে স্বপ্ন
অয়ন কোনওদিন আমায় যদি বিয়ে করতে বলি করবি?
কোনওদিন
যদি
বলি
এই
শরীরের
বাইরেও
একটা
কিছু
থাকে
যাকে
ভালোবাসা
বলে
।
বাসবি
আমায়
ভালো?
জানিস আমারও খুব ইচ্ছা করে সিন্দুর পরবো বেনারসি পরবো লক্ষ্মী হয়ে সংসার করবো ।
আমারও ইচ্ছা করে সন্তানের মা হতে ,
তুই লরি চালিয়ে এলে রাতে জড়িয়ে ঘুমাবো ।
অয়ন
বিছানায়
কড়কড়ে
নতুন
একশো
টাকার
নোট
পাঁচটা
রেখে
বললো
"এসব
কালোমুখিকে
বেশ্যা
পল্লীতেই
মানায়
শরীর
ঢেকে
বাড়ির
বউ-সাজাতে
নয়
।
"
অয়নের মতো খদ্দেরকে ভালোবেসে
যে পাপ তুলসি করেছে
তা
বোধহয়
ধুলেও
যাবেনা
।
ভালোবাসা
শুধু
টাকা
,
শরীর
আর
দালালের
অত্যাচারেই
আছে
হৃদয়ের নিষ্পাপ প্রেমে নেই ।