মমতা-সৌরভ যুগলবন্দি দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে, ইউনেস্কোকে ধন্যবাদজ্ঞাপন সিএবি থেকে ময়দানের তিন প্রধানের
কলকাতার দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের ধন্যবাদজ্ঞাপনে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনামতো কর্মসূচি ছিল রাজ্য সরকারের। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রেড রোড পর্যন্ত চলল বর্ণাঢ্য মিছিল। এই রেড রোডেই হয়ে থাকে বিসর্জনের আগে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের সংবর্ধনা জানানোর অনুষ্ঠানে নজর কাড়ল দিদি ও দাদার যুগলবন্দি।
দিদি-দাদার যুগলবন্দি
আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে একাধিক মন্ত্রী-আমলা থাকলেও বিদেশি অতিথিদের বরণ ও সংবর্ধনা দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা গেল বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সংবর্ধনা প্রদানের সময় বাজছিল "এসো আমার ঘরে এসো, আমার ঘরে..." গানটি। এই আবহে মমতা-সৌরভ যুগলবন্দিই ছিল বাড়তি পাওনা।
এক মঞ্চে মমতা-সৌরভ
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে যোগদানের বিষয় নিয়ে জল্পনা সামনে আসে। সৌরভের বাড়িতে যেমন বিভিন্ন সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছেন, তেমনই অমিত শাহ, শুভেন্দু অধিকারী, অমিত মালব্যদের যাওয়া নিয়েও রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছিল। কখনও সৌরভকে বিজেপি, কখনও তৃণমূলে, কখনও বা রাজ্যসভায় পাঠানো নিয়ে নানা চর্চা হয় রাজনৈতিক মহলে। অমিত শাহ সৌরভের বাড়িতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌরভ ও ফিরহাদ হাকিমকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল। যেখানে কলকাতার মেয়রের প্রশংসা করেছিলেন সৌরভ। আজ অনেক দিন পর মমতা ও সৌরভকে দেখা গেল একই মঞ্চে।
সৌরভের চোখে দুর্গাপুজো
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন বলেন, দুর্গাপুজোর শ্রেষ্ঠত্ব কল্পনাতীত। আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছি। একেক দেশের মানুষ বিভিন্ন উৎসবে মেতে ওঠেন। উউরোপে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের অনুষ্ঠান। ব্রাজিলের উৎসব থেকে গতকাল মুম্বইয়ে হওয়া গণপতি উৎসব, সব কিছুর কথা মাথায় রেখেও বলছি, দুর্গাপুজো কত বড় ব্যাপার তা উপলব্ধি করতে হলে দেখতে হবে। পাঁচ-সাতদিন ধরে কলকাতা আলাদা শহর হয়ে যায়। আমরা ছোটবেলা থেকে উৎসব দেখে বড় হয়েছি। ধনী-দরিদ্র, কার কত বেশি বা কম ক্ষমতা এ সব কিছুই বিচার্য হয় না। দুর্গাপুজো সকলের জন্যই আনন্দ-বার্তা নিয়ে আসে। কীভাবে উৎসবে মেতে ওঠা যাবে, কে কত টাকা দিয়ে নতুন জামাকাপড় কিনল তা বড় নয়। মা দুর্গা সকলের মুখে হাসি আনেন। তা সে ৭ বছরের শিশু হোক বা ৭০ বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এই পুজোকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ। এই স্বীকৃতি প্রাপ্য ছিল। দুর্গাপুজে দেখলে বোঝা যায় তা কত বড়।
পুজো ও ফুটবল নিয়ে বার্তা
বিদেশি অভ্যাগতদের উদ্দেশ সৌরভ বলেন, এখানে যাঁরা ল্যান্ড অব ফুটবল ফ্রান্স থেকে এসেছেন তাঁদের জানাই আমাদের এই শহরও ল্যান্ড অব ফুটবল। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান স্পোর্টিং-সহ বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে। আমিও ফুটবলের জনপ্রিয়তার মধ্যেই বড় হয়েছি। ক্রিকেট খেলেছি। এই শহরে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। সবমিলিয়ে কলকাতা গ্রেট সিটি। মাঝেমধ্যেই এই শহরে আসলে সেটা বুঝবেন। উপলব্ধি করবেন এই শহরের সৌন্দর্য, আতিথেয়তা, এখানকার ভালোবাসা, আবেগ। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্য সৌরভ ধন্যবাদ জানান 'দিদি' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মুখ্যমন্ত্রীও বক্তব্যের শুরুতে বলেন, সৌরভ আমার ছোট ভাই। আমি ওঁকে ভালোবাসি, স্নেহ করি। সময় করে আসতে পেরেছেন এবং ভালো বক্তব্য রেখেছেন সেজন্য স্পেশ্যাল থ্যাঙ্কস! এদিন সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া, সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়রা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের সংবর্ধিত করেন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহমেডানের তরফেও স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে।