কলকাতায় প্রাচীন বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর 'গণপতি মহিমা' ব্যাখ্যা! নয়া বিতর্কে আইএসিএ
ধর্মের তস্করি কি? কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স-এর এক ঘটনায় এখন এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ধর্মের তস্করি কি? কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স-এর এক ঘটনায় এখন এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এই তস্করির পিছনে কে? সকলেই অভিযুক্ত করছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন-কে। কারণ, এশিয়ার প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী গবেষণা কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে নারকেল ফাটিয়ে গণেশ মহিমা ব্যাখ্য়া করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আর এতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান অ্য়াসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স-এর দ্বিতীয় ক্য়াম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। এই উপলক্ষ্যে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। বারুইপুরে যেখানে ক্যাম্পাস হবে সেখানে এখন জল থইথই অবস্থা। তাই যাদবপুরে আইএসিএস-এর মূল ক্যাম্পাসেই প্রতীকী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের আয়োজন হয়েছিল।
দেখা যায় এই অনুষ্ঠানে নারকেল ফাটাচ্ছেন খোদ কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী। একটা বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে এভাবে নারকেল ফাটিয়ে কোনও কাজের শুরু করাটা যথেষ্টই অস্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ এই নারকেল ফাটানোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক অন্ধবিশ্বাস। যার সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কার তো জড়িত-ই, সেইসঙ্গে এটাকে কুসংস্কার বললে অত্যুক্তি হয় না। বিজ্ঞান মানে যুক্তি আর চিন্তার মেলবন্ধন। সেখানে আইএসিএস-এর মতো বিজ্ঞান গবেষণার প্ল্যাটফর্মে নারকেল ফাটিয়ে মঙ্গলকামনার প্রার্থনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এখানেই শেষ নয় এরপর যখন অডিটোরিয়ামে মূল আলোচনা শুরু হয় সেখানে গণেশ মহিমা ব্যাখ্যাও করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। গণেশ চতুর্থীর দিনে আইএসিএস-এর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাখা হয়েছিল। তাই কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তাঁর ভাষণে বোঝাতে শুরু করেন গণেশ চতুর্থীর মতো দিনে কেন এই অনুষ্ঠান শুভ।
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের এমন ধর্মীয় আচরণে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বহু বিজ্ঞানী। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন খোদ বিকাশ সিংহ। তিনি কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর এমন আচরণে ক্ষুব্ধ। গোটা বিষয়টাকে তিনি বিতর্কিত করে দিয়েছেন বলে মত তাঁরা। অন্যদিকে, আইএসিএস-এর ডিরেক্টর শান্তনু ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কাউন্সিলের মিটিং-এ ব্যস্ত শান্তনু ভট্টাচার্য-এর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে, বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন নিউজ চ্য়ানেলে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন যে এটা এক জনের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তাঁর নিজস্ব বিশ্বাসের কথা বলেছেন। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।
আইএসিএস-এর ডিরেক্টরের এহেন মন্তব্যে বিতর্ক থামা কঠিন। কারণ, সকলের একটাই প্রশ্ন বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে নারকেল ফাটানো এবং গণেশ মহিমা কীর্তন কেন? আইএসিএস শুধু ভারতের নয় এশিয়ার মধ্যে প্রথম গবেষণা কেন্দ্র। ১৮৭৬ সালে মহর্ষী মহেন্দ্রলাল রায় দেশীয় প্রতিভাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষীত করতে এবং বিজ্ঞান গবেষণায় অনুপ্রেরণা দিতে এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছিলেন। সেই সময় থেকে বহু প্রোথিতযশা এবং গুণী বাঙালি ব্যক্তিত্ব এই বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। সি ভি রামন এই ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারেই আবিষ্কার করেছিলেন 'রামন এফেক্ট'। যার জন্য সি ভি রামণ নোবল-এও সম্মানিত হন। আচার্য জগদীশ বসু এই ইনস্টিটউটে বহু লেকচার দিয়েছেন। এহেন ঐতিহ্যশালী এবং দেশের বিজ্ঞান গবেষণায় দিশা দেখানো আইএসিএস-কে নারকেল ফাটানো আর গণেশমহিমা জ্ঞাপন-এর মতো কর্মকাণ্ডের বাইরে কি রাখা যেত না? এই নিয়ে কিন্তু যুক্তিবাদীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
অনেকেই এর জন্য আইএসিএস কর্তৃপক্ষের দিকেও আঙুল তুলেছেন। অনেকেরই প্রশ্ন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী না হয় গণেশ মহিমা ব্যাখ্যা করেছেন নিজস্ব ব্যক্তিগত অনুভূতিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর কাছে নারকেলটা কে পৌঁছে দিল? কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন তো নিজের পকেটে করে নারকেল নিয়ে হাজির হননি! সুতরাং, গোটা ঘটনায় আইএসিএস কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে নিতে পারে না বলেই অনেকের মত। অনেকের আবার প্রশ্ন এটা বিজ্ঞান সাধনার উদ্বোধন নয়, বিজ্ঞানের নামে ধর্ম-ধর্ম খেলার একটা চেষ্টা। আর সেটাই এবার কলঙ্কিত করল আইএসিএস-এর মতো ঐতিহ্যশালী এবং বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রকে।
[আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধী-নীরব মোদী বৈঠক! চাঞ্চল্যকর দাবিতে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল]