‘সান্থারা’য় স্বেচ্ছামৃত্যু, অনশনে দেহত্যাগ করে পরমাত্মা হওয়ার পথে গড়িয়াহাটের সুহানিদেবী
কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর : পরমাত্মা হতে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথেই পা। খাস কলকাতার বুকেই ঘটে গেল 'সান্থারা'। জৈনধর্মের রীতি মেনেই দেহত্যাগের অপেক্ষা। অনশনের মাধ্যমে 'মুক্তি'র দিন গুনছেন সুহানিদেবী।গড়িয়াহাটের সুহানি দেবী দুগ্গার। বয়সের ভারে তিনি ন্যুব্জ। রোগাক্রান্ত সুহানি দেবী এখন মৃত্যু পথযাত্রী। শান্তির মৃত্যুর পেতে তাঁর বাসনা স্বেচ্ছামৃত্যুর। তাই ন'দিন অনশন করে চলেছেন তিনি।
দেশের শীর্ষ আদালত সিলমোহর দেওয়ার পরই দেহ থেকে বিদেহ হওয়ার এই ধর্মীয় পন্থাকে বেছে নিয়েছেন সুহানিদেবী। বাড়িতে ধর্মাচরণের আসর বসেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছে। মন্ত্রোচারণ হচ্ছে। অপেক্ষা কখন স্বর্গযাত্রা হবে তাঁর। দুঃখ নেই, গ্লানি নেই। শুধু প্রার্থনা। শান্তির মৃত্যু কামনা। সব আত্মীয়-পরিজনরা ভিড় জমিয়েছেন বাড়িতে। জৈনধর্মাবলম্বী মানুষের ভিড়ে গমগম করছে বাড়ি।
একটি ঘরে শয্যাশায়ী সুহানিদেবী সেই ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন করে চলেছেন। তিল তিল করে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর পথে। তাঁর আত্মা এখন চাইছে শান্তির মরণ। পরমাত্মা হওয়ার বাসনায় তিনি জয় করেছেন মুত্যু যন্ত্রণাকেও। কিন্তু কি এই সান্থারা, যে ধর্মীয় পথে মানুষ একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। অথচ পরিবারের লোকজন কোনও বাধা দেন না। তাঁরাও মেনে নেন এই স্বেচ্ছামৃত্যুর বাসনাকে।
সুহানিদেবীর পুত্রবধূ জানালেন, যখন শরীর আর চলে না। জীবনের সব পাওয়া হয়ে যায়। শুধুই মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার থাকে না এক জীবনে। তখনই সময় আসে মৃত্যুকে ডেকে নেওয়ার। আর মৃত্যুকে আহ্বান করার এই পদ্ধতির নামই সান্থারা। শান্তির মৃত্যু এসে দেহ থেকে আত্মাকে ছিনিয়ে বিদেহী রূপ দেয়। আত্মা হয় পরমাত্মা।
এই ধর্মীয় রীতিতে কোনও মানুষ মৃত্যু বরণ করেন না। মৃত্যু বরণ করে নেয় মানুষকে। আর এই সিদ্ধান্ত কেউ কারও উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। শারীরিকভাবে অকর্মণ্য হলেই যে এই পথ বেছে নেওয়া যায়, তা নয়। এই স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য সাহস চাই। যাঁর এই সাহস আছে, তিনি সান্থারা বেছে নিতে পারেন। আজ সেই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েই সান্থারা অবলম্বন করে 'দেবী' হতে চলেছেন সুহানিদেবী।