বিবাহিত মহিলাদের এবার এই অধিকার দিল হাইকোর্ট, ঐতিহাসিক রায় ঘিরে উচ্ছ্বাস
২০১১ সালের মার্চে বীরভূমের বড়াগ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী হারুচন্দ্র দাসের মৃত্যুর পর তাঁর ছোট মেয়ে পূর্ণিমা দাস চাকরির জন্য আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক রায়।
বিবাহিত মহিলাদের নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কর্মরত অবস্থায় কোনও সরকারি কর্মীর মৃত্যু হলে তাঁর বিবাহিত মেয়েও এবার চাকরির দাবি করতে পারবেন। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ সরকারি বিজ্ঞপ্তিকে অসাংবিধানিক ব্যাখ্যা দিয়ে এই রায় দেন।
এতদিন পর্যন্ত কর্মরত অবস্থায় কোনও রাজ্য সরকারি কর্মীর মৃত্যু হলে তাঁর বিবাহিতা মেয়ে চাকরির দাবি করতে পারতেন না। কিন্তু অবিবাহিত মেয়েরা চাকরি দাবি করতে পারতেন। ২০০৮ সালে রাজ্য সরকার বিবাহিত মেয়েদের চাকরির উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিকেই এদিন অসাংবিধানিক বলে জানায় আদালত।
এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রাজ্যের শ্রম ও পঞ্চায়েত দফতরের জারি করা বিজ্ঞপ্তি থেকে অবিবাহিত শব্দটি তুলে দিতে হবে। তার জায়গায় শুধু কন্যা শব্দটি থাকবে। ফলে তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত- তিনি চাকরির দাবি করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মার্চে বীরভূমের বড়াগ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী হারুচন্দ্র দাসের মৃত্যুর পর তাঁর ছোট মেয়ে পূর্ণিমা দাস চাকরির জন্য আবেদন করেন। হারুবাবুর স্ত্রী ও তিন মেয়ে। সকলেই ছোট মেয়ের চাকরির জন্য সহমত পোষণ করেন। কিন্তু দফতর সাফ জানিয়ে দেয়, বিবাহিত মেয়েকে চাকরি দেওয়া যাবে না।
এরপরই পূর্ণিমাদেবী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৩ সালের জুনে পঞ্চায়েত সচিব হাইকোর্টকে জানায় বিবাহিত মেয়েদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও আইনি বৈধতা নেই। এরপরই পূর্ণিমাদেবীর পক্ষে আইনজীবী সওয়াল করেন, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী নারী-পুরুষের ভেদাভেদ নেই। কর্মরত অবস্থায় বাবা-মা মারা গেলে বিবাহিত পুরুষ সন্তান যদি চাকরি পায়, বিবাহিত মহিলারা কেন পাবেন না? এরপরই আদালত রাজ্যের জারি করা বিজ্ঞপ্তিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।
আদালত আরও জানায়, মৃত্র পরিবারকে বাঁচানোই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে বিবাহিত মহিলাদেরও চাকরি দিতে হবে। হাইকোর্ট এদিন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন, বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবিলম্বে পূর্ণিমা দাসকে চাকরি দিতে। এবার থেকে কোনও বিবাহিত মহিলাও বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর চাকরির আবেদন করতে পারবেন।