মমতার ইচ্ছাপূরণ করলেন কি বুদ্ধদেব, অসুস্থ শরীরেই নির্বাচনী সংগ্রামের লিখিত আহ্বান
মঙ্গলবারই এক বাংলা টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে জ্যোতি বসু, বুদ্ধেদব-কে খাঁটি বামপন্থী বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২৪ এপ্রিল এক বাংলা টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে জ্যোতি বসু, বুদ্ধেদব-কে খাঁটি বামপন্থী বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন যারা বাম দল করছে তারা নাকি বিজেপি-র কাছে বামপন্থাকে বিক্রি করে দিয়েছেন এমন মন্তব্যও করেন তিনি। এমনকী, তিনি অভিযোগ করেন পঞ্চায়েত ভোট না করতে দেওয়ার জন্য বিজেপি-র সঙ্গেও হাত মিলিয়েছে বামনেতারা। বিভিন্ন কফি-শপে বসে চলছে চক্রান্ত। বামপন্থী লড়াইকে সিপিএম নেতারা ভুলে গিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্যের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর দিলেন বুদ্ধদেব। আর সেই উত্তরে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যা লিখেছেন তাতে চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের কপালে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সর্বসমক্ষে আসা এই লিখিত বার্তায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লিখছেন - '
গত ৬মাস আমি গৃহবন্দী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি মাঠে ময়দানে যেতে অক্ষম। বিগত কয়েকদিন ধরে পার্টি কর্মী, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী ও তাঁদের পরিবারগুলির ওপর আক্রমণ করে তাঁদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এতে আমি উদ্বিগ্ন এবং সেহেতু এই বিবৃতি।
পশ্চিমবাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা এরাজ্যে আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সবদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার পথিকৃৎ ও রূপকার বামফ্রন্ট। এই ব্যবস্থাকে রাজ্যের বর্তমান শাসক অনেকটা কলুষিত করেছে। জনগণের স্বাধীন অধিকার কেড়ে নিয়েছে শাসকদলের কর্মীরা। ভয়ঙ্কর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে।
আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই-ই। পঞ্চায়েতের ওপর জনগণের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই লক্ষ্যে আমার আবেদন আমাদের পার্টির সমস্ত কর্মী এবং বাম শিবিরের সমস্ত কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। জনসাধারণের কাছে আমাদের পৌছতেই হবে, এবং তা নির্বাচন থেকে সরে এসে নয়। আক্রমণ সন্ত্রাসকে রুখে জনগণকে নিয়েই এগোতে হবে। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের লড়াই রুটি-রুজি, জীবন-জীবিকার লড়াই। এর জন্য এরাজ্যের শাসকদলকে যেমন পরাস্ত করতে হবে তেমনই বি জে পি'র জয়ের কলঙ্ক থেকে পশ্চিমবঙ্গকে মুক্ত রাখতে হবে।
আমার আবেদন প্রতিটি কেন্দ্রে, প্রতিটি বুথে জনসমর্থনকে শক্ত জমির ওপর দাঁড় করান। নির্বাচনী সংগ্রামের শীর্ষে আমরা পৌছেছি। এই সংগ্রামকে সফল লক্ষ্যে নিয়ে চলুন। আমি বামপন্থা ও মানুষের শক্তিতে বিশ্বাসী। ২৬শে এপ্রিল, ২০১৮, কলকাতা'
সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মনোমালিন্য কোন পর্যায়ে ছিল তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। রাজভবনে তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মধ্যস্থতায় সিঙ্গুর সমাঝোতা বৈঠকের শেষে মমতার সঙ্গে হাত মেলাননি ক্ষিপ্ত বুদ্ধদেব। দুই জাঁদরেল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর মধ্যে এককালে যে বৈরিতা ছিল তা সময়ের গতিতে অনেকটা কমেছে। সম্প্রতি অসুস্থ বুদ্ধদেবকে দেখতে দু'বার তাঁর পাম এভিনিউ-এর ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সাক্ষাৎ যথেষ্টই সৌজন্যের ছিল। কিন্তু, রাজনৈতিক বৈরিতা নিরসন মানেই যে রাজনৈতিক আদর্শের সমঝোতা তা হয়তো নয়। আর এদিন অসুস্থ শরীরে লিখিত বিবৃতিতে তা যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে প্রতিষ্ঠিত করে দিলেন বুদ্ধদেব।
বর্তমান রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের নিরঙ্কুশ সন্ত্রাসের খবরের আপডেট যে তাঁর কানেও নিয়মিত পৌঁচ্ছছে তা এই লিখিত বিবৃতিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন বাম মুখ্যমন্ত্রী। টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-কে খাঁটি বামপন্থী বলে এবং বাকি বামনেতাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে একটা বিভাজন তৈরি করেছিলেন- এদিনের এই লিখিত বিবৃতিতে তা মিটে গেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মমতা বলেছিলেন বামেরা লড়াই ভুলেছে- বুদ্ধদেব স্মরণ করালেন নির্বাচনী সংগ্রামই এই মুহূর্তে বামেদের মূল লক্ষ।