
স্বপ্ন সফল, আর্থিক কষ্টকে হারিয়ে অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্টের চূড়ায় বাঙালি শিক্ষিকা
চন্দননগরের মেয়ে এক অদ্ভুত স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নে ঘুরে বেড়াত তেনজিং নোরগে , এডমন্ডরা হিলারিরা। একবার অসফল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত এল সাফল্য। তাও অক্সিজেন ছাড়া। সাপ্লিমেন্টরি অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছে গেল পিয়ালি বসাক। সকাল সাড়ে আটটায় পৌঁছে যায় এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে যায় চন্দননগরের মেয়ে।

এই অভিযানের আগে 'one india banglar' সঙ্গে কথা হয়েছিল তখন পিয়ালি বলেছিল ,"আমি এভারেস্ট যাব , যেন বেড়াতে যাওয়ার জায়গা এসব ভেবে বায়না করতাম। এর জন্য মাঝেমধ্যে বাড়ির দরজা খুলে একাই বেরিয়ে যেতাম, আমার বায়না তে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা মা নেপালে বেড়াতে নিয়ে গেল। অন্নপূর্ণায় সূর্যোদয় আমার মনে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্নকে আরও বদ্ধমূল করে তোলে।" ছোটবেলাতেই ট্রেক করেন কেদার, গঙ্গোত্রী-গোমুখ, বৈষ্ণোদেবী, রোটাং পাশ।
এরপরে ভর্তি হন স্থানীয় রক ক্লাইম্বিং কোর্সে। অল্প সময়েই বুঝে গিয়েছিলেন রক ক্লাইম্বিং মধ্যবিত্তের জন্য নয়। বড় হওয়ার বিভিন্ন ধাপে জানতে পারেন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট থেকে বেসিক কোর্স করলে স্পনসরশিপ অ্যাপ্লাই করা যায়। কিন্তু তার জন্যও নির্দিষ্ট বয়স আছে। নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম হওয়ার ফলে সেই কোর্স করা যাচ্ছিল না। কিন্তু স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেননি তিনি। ২০০৬ সাল, টিউশনের মাইনে থেকে টাকা বাঁচিয়ে পারি দেন নেপাল। লক্ষ্য গাইড, পোর্টার এর কাজ করা। ভেবেছিলেন ওখানে গেলে রোজগার হবে, বাবা মা'কে সাহায্যও করতে পারবেন আর আমার হিমালয় চড়াও হবে। সিঙ্গালিলা ফরেস্টের ভেতর দিয়ে নেপালের ইলিয়াম জেলা পৌঁছান। ঠান্ডায় জল জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে সম্বল প্রায় কিছুই নেই। বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন 'আর্ট এগজিবিশন' দেখতে যাচ্ছেন, শেষে বাড়ির লোক পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করে। ফিরে আসতে হয় বাড়িতে।
এরপর ফের শুরু হয় পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে লড়াই। একদিকে আর্থিক অসঙ্গতি , সামাজিক চাপ অপরদিকে মেয়ের এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন। পাল্লা ক্রমে হেলে যাচ্ছিল পিয়ালির স্বপ্নের বিপরীত দিকে। স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসার ভাবনা মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভাঙতে শুরু করে তাঁকে। ২০০৮ , ফিরে আসার বছর। পাশে এসে দাঁড়ান মাউন্টেনিয়ারিংয়ের স্যার অপূর্ব চক্রবর্তী। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিংয় ইন্সটিটিউট থেকে বেসিক কোর্স করার আর্থিক দায়িত্ব পুরোটাই নেন তিনি। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। এক এক করে মুলুকিয়া (৫৮৯৫ মিটার), মাউন্ট ভাগীরথী এক্সপিডিশনে (২১ হাজার ৬৩০ ফুট) যাওয়া। পাশাপাশি সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও। ২০১৪,তে প্রাথমিক শিক্ষিকার চাকরি। ২০১৫, মাউন্ট তিচেকাংয়ের এক্সপেএডিশন সম্পূর্ণ করেন, যার উচ্চতা ৬ হাজার দশ মিটার। মাঝে ২০১৮ আগস্ট পর্যন্ত আর্থিক পরিস্থিতির জন্য কোনও এক্সপেডিশনে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এই সময়টায় চলেছে এভারেস্ট চড়ার মানসিক প্রস্তুতি এবং অর্থ সংগ্রহ করা।
২০১৮-র সেপ্টেম্বরে মাউন্ট মানসলু যাত্রা (উচ্চতা-৮,১৪৬ মিটার। বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ)। প্রথম আট হাজারের বেশি উচ্চতার এক্সপেডিশন। সাহায্যে আরও একবার এগিয়ে আসেন অপূর্ব চক্রবর্তী এবং চন্দননগরের মেয়র। দুজনের থেকেই বড় আর্থিক সাহায্য পান পিয়ালি। ১১ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ জয় ২৭ সেপ্টেম্বর , ২০১৮। এরপর অক্সিসজেন ছাড়া জয় করেন ধৌলাগিরি। মাঝে একবার এভারেস্ট গিয়েছিলেন পিয়ালি। সেটা ২০১৯ সাল। শৃঙ্গের খুব কাছ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে।
কাট টু ২০২২। বলেইছিলেন তাঁর ৮০০০ মিটারের উপর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০এর উপর থাকে। সেই কথাই সত্যি করে সে জয় করে ফেলল এভারেস্ট। এবার লোৎসে হয়ে ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফেরা।